ঢাকা, শনিবার ০৬, ডিসেম্বর ২০২৫ ৬:৫৭:৩৭ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

‘ফ্রি প্রেস অ্যাওয়ার্ড’পেলেন সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:১৫ এএম, ৩ নভেম্বর ২০২১ বুধবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

সাহসী সাংবাদিকতার জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম, যিনি বাংলাদেশে করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম তুলে ধরতে গিয়ে নিগ্রহ, নির্যাতন ও মামলার শিকার হয়েছেন। নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামভিত্তিক সংস্থা ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড তাঁকে এ বছরের ‘ফ্রি প্রেস অ্যাওয়ার্ড-২০২১’ দিয়েছে। তিনি পুরস্কারটি পেয়েছেন সেরা অদম্য সাংবাদিক বা মোস্ট রেজিলিয়েন্ট জার্নালিস্ট শ্রেণিতে।

মুক্ত সাংবাদিকতার জন্য লড়াই করা সাংবাদিকদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়। গত বছর একই পুরস্কার পেয়েছিলেন এ বছর শান্তিতে নোবেল পাওয়া ফিলিপাইনের সাংবাদিক মারিয়া রেসা। 

সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকতার উৎকর্ষের জন্য বিশ্বের ৪০টির বেশি দেশে কাজ করে ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড। বিশ্বব্যাপী ৯০টির বেশি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে তাদের। সংস্থাটিকে সহায়তা করে নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরের সিটি হলে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত সোয়া ১২টা) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের খ্যাতিমান সাংবাদিক হামিদ মীরের হাত থেকে রোজিনা ইসলামের পক্ষে পুরস্কারটি গ্রহণ করেন তাঁর স্বামী মো. মনিরুল ইসলাম। রোজিনা ইসলামের পাসপোর্ট জব্দ থাকায় তিনি পুরস্কারটি নিতে নেদারল্যান্ডস যেতে পারেননি। তবে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এই পুরস্কার দেশের সেসব সাংবাদিককে উৎসর্গ করছি, যাঁরা প্রতিকূলতার মধ্যেও সেরা সাংবাদিকতা করে যাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘কারাগার থেকে বেরিয়ে আমি বলেছিলাম, সাংবাদিকতা চালিয়ে যাব। এই পুরস্কার পাওয়ার পর আমি আবারও বলছি, আমার লড়াই চলবে।’

ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড দুটি শ্রেণিতে ফ্রি প্রেস অ্যাওয়ার্ড দিয়ে থাকে—সেরা অদম্য সাংবাদিক বা মোস্ট রেজিলিয়েন্ট জার্নালিস্ট এবং বছরের সেরা নবাগত সাংবাদিক বা ‘নিউ কামার অব দ্য ইয়ার’। সাংবাদিক রোজিনা পুরস্কারটি পান সবচেয়ে অদম্য সাংবাদিক শ্রেণিতে। বছরের সেরা নবাগত শ্রেণিতে পুরস্কার পেয়েছেন ভারতের তরুণ সাংবাদিক ভাট বুরহান।

সাংবাদিকতায় রোজিনা ইসলামের সাহসিকতা ও নিরলস প্রচেষ্টার জন্য তাঁকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড বলেছে, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ দৈনিক সংবাদপত্র প্রথম আলোতে অনুসন্ধানী প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেন রোজিনা ইসলাম। তিনি করোনাকালে দেশের স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম প্রকাশ্যে এনেছেন। এখন নিজের দেশে তাঁকে বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, যেতে হচ্ছে হয়রানির মধ্য দিয়ে।

বিচারকমণ্ডলীর সবাই একমত হয়ে রোজিনা ইসলামকে সেরা অদম্য সাংবাদিক হিসেবে মনোনীত করেন। তাঁরা বলেন, ‘মহামারির এই সংকটময় সময়ে অনিয়ম বের করে আনতে সাংবাদিকের লড়াইয়ের সঙ্গে আমরা সংহতি প্রকাশ করছি। বাংলাদেশ সরকারের প্রতি রোজিনা ইসলামকে হয়রানি বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম গত ১৭ মে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে হেনস্তার শিকার হন। তাঁকে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। পরে তাঁকে শতবছরের পুরোনো ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে’ গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

রোজিনা ইসলাম পাঁচ দিন পর জামিনে মুক্ত হন। তাঁকে নির্যাতন ও মামলার প্রতিবাদে দেশে-বিদেশে কর্মসূচি পালিত হয়। বিভিন্ন দেশীয় ও বৈশ্বিক সংস্থা প্রতিবাদ জানায়। জামিনে মুক্তি পেলেও এখনো রোজিনার মামলা তুলে নেওয়া হয়নি। পাসপোর্ট, মুঠোফোন ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সচিবালয়ে প্রবেশের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডও ফেরত পাননি তিনি।

 

মনোনীত ছিলেন তিনজন
‘মোস্ট রেজিলিয়েন্ট জার্নালিস্ট’ শ্রেণিতে পুরস্কারের জন্য রোজিনা ইসলাম ছাড়াও এ বছর মরক্কোর সাংবাদিক ওমর রাদি ও বেলারুশের সাংবাদিক রামান ভাসিউকোভিচ মনোনীত হয়েছিলেন।

পুরস্কার ঘোষণায় ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড আরও বলেছে, ‘এই পুরস্কারের জন্য আমাদের কাছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেক সাহসী ও মেধাবী সাংবাদিকের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল। আমরা দেখেছি, স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ওপর অবিশ্বাস্য রকমের চাপ রয়েছে। বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকেরা নানা ধরনের চাপ মোকাবিলা করে তাঁদের পেশার প্রতি যে একাগ্রতা দেখিয়ে চলেছেন, তাতে আমরা অভিভূত।’