ঢাকা, শনিবার ২৭, এপ্রিল ২০২৪ ৪:২১:০৮ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

ধর্ষণ মামলার রায়:পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গীর প্রতিবাদে মানববন্ধন

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৮:১৫ পিএম, ১৪ নভেম্বর ২০২১ রবিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে রেইনট্রি হোটেলের ধর্ষণের মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গীর প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রবিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানবন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘আলোচিত রেইনট্রি হোটেলের ধর্ষণের মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আমরা অত্যন্ত হতাশ এবং উদ্বিগ্ন। ধর্ষণের মত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়ায় এই পর্যবেক্ষণ নারীর প্রতি সংঘটিত অপরাধকে আরো ঘনীভূত করবে, সুষ্ঠুভাবে বিচার কাজ পরিচালনাকে বাধাগ্রস্ত করবে। এর ফলে দেশের দুইজন নাগরিকের প্রতি চরম অবমাননা করা হয়েছে, তাদের মানহানি করা হয়েছে এবং তাদের মানবাধিকার ও লংঘিত হয়েছে। পুরুষতান্ত্রিকতা যে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছে, নারীকে যে এখনো অধ:স্তন ভাবা হয় এবং আইনের যে সীমাবদ্ধতা আছে এগুলিও একই সাথে স্পষ্ট করে তুলেছে।’

বক্তারা আরও বলেন, ‘রায়টির  পর্যবেক্ষণ নাগরিকের ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে বাধা সৃষ্টি করেছে, জেন্ডার ব্যালান্স রক্ষা করার পরিবর্তে চরমভাবে জেন্ডার বৈষম্য সৃষ্টি করেছে রায়টির পর্যবেক্ষণ। তারা এসময় প্রজ্ঞাবান জেন্ডার সংবেদনশীল বিচারকের নিয়োগপ্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তারা আরো বলেন এই ধরণের ঘটনায় একজন বিচারকের সাময়িক অপসারণ যথেষ্ট নয়। এই ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে এবং ধর্ষনের ঘটনাসহ সকল নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতে এসময় তারা কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন। দাবিসমূহ: বিচারব্যবস্থায় জেন্ডার সংবেদনশীলতা নিশ্চিত করতে হবে ও নিরপেক্ষভিাবে বিচার করতে হবে, পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব দূর করতে হবে, বিচারব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে, শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে, সাক্ষ্য আইনের পরিবর্তনসহ অন্যান্য আইনের সংশোধন করতে হবে, বিচারকদের জেন্ডার সংবেদনশীল মনোভাব তৈরি করতে তাদের প্রশিক্ষণে জেন্ডার ইস্যূকে সংযুক্ত করতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘রেইনট্রি হোটেলের ধর্ষণের মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে সৃষ্টি হওয়া নানা প্রতিক্রিয়ার ফলে রায় দেয়া বিচারকের বিচারিক ক্ষমতা সাময়িক প্রত্যাহার করার জন্য আইনমন্ত্রী এবং প্রধানবিচারপতিকে ধন্যবাদ জানান।  তিনি এসময় প্রশ্ন রাখেন, এই ঘটনায় আশু প্রতিকার নেয়া হলো কিন্তু বিচারপ্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা আইনি প্রক্রিয়া যথাযথভাবে জানেন কীনা, যথাযথভাবে ‍নিজ দায়িত্ব পালন করছেন কীনা, ভিকটিমের প্রতি জেন্ডার সংবেদনশীল মনোভাব রাখেন কীনা তা কে মনিটর করবে? স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর বিচার বিভাগের এ দূর্বলতা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নারী বান্ধব নানা আইন হলেও আইনের বাস্তবায়ন নেই। অপরাধের দায় স্বীকারের পর অপরাধীদের  অসাধু উপায়ে এবং অন্যায়ভাবে টাকা ও ক্ষমতার অপব্যবহার প্রক্রিয়া থেকে বিচারব্যবস্থাকে মুক্ত করা না গেলে সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা কখনোই সম্ভব নয়।’ আইনের অপব্যাখ্যার দায় সমগ্র বিচার ব্যবস্থাকেই প্রভাবিত করে। বিচারব্যবস্থা যেন সাধারণ মানুষের বিচার পাওয়ার পথকে সংকুচিত না করে প্রসারিত করতে পারে সেলক্ষ্যে আরও কাজ করতে আইন ও বিচার বিভাগকে আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, ‘বিচারের রায়ই শেষ কথা নয়, দোষ সবসময় প্রমাণিত হয়না, তা সত্ত্বেও দোষী সমাজের কাছে দোষী হিসেবেই চিহ্নিত হবে।’  

মানববন্ধন কর্মসূচিতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- সহ-সভাপতি রেখা চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু,  যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, ঢাকা মহানগরের সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনূস, কেন্দ্রীয় কমিটির লিগ্যাল এডভোকেসি  ও লবি পরিচালক অ্যাড. মাকসুদা আক্তার লাইলী, অতিথি বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি ব্যরিস্টার একে রাশেদুল হক।

মানববন্ধন কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির অন্যান্য নেত্রীবৃন্দ, প্রিন্ট ওইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ এবং সংগঠনের কর্মকর্তাগণ ।

সভা সঞ্চালনা করেন  সংগঠনের  অ্যাডভোকেসি ও লবি  ডিরেক্টর  জনা গোস্বামী।