ঢাকা, শনিবার ২০, এপ্রিল ২০২৪ ৫:৩৩:২১ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

মারাত্মক মাদক ঝুঁকিতে রাজধানীর পথ শিশুরা

অনন্যা অনু

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৩:৪০ এএম, ১৩ জানুয়ারি ২০২২ বৃহস্পতিবার

ফাইল ছবি।

ফাইল ছবি।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের শহরগুলোতে পথ শিশুরা নিজেরাই নিজেদের মত করে থাকতে ভালবাসে। পথে নিজেদের মত করে থাকতে গিয়ে ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক এসব শিশুরা জড়িয়ে যাচ্ছে মাদকে। 

পারিপার্শিক অবস্থা তথা পরিবারের অস্বচ্ছলতার কারণেই ছোট ছোট শিশুরা পথ শিশু হিসেবে বেড়ে উঠছে। তারা সকলেই সমাজের সবচেয়ে নিচু স্তরের কাজগুলো করছে। ঢাকা শহরে বিভিন্ন ট্রাফিক সিগনালে অনেক সময়ই দেখা যায়। কেউ  ফুল বিক্রি করছে, কেউবা গাড়ি পরিস্কারসহ বিভিন্ন কাজ করছে। কেউ ময়লার ভাগারে (ডাস্টবিন) পলিথিন সংগ্রহ করছে। পিঠে বস্তা নিয়ে কাগজ সংগ্রহ করছে, কেউবা প্লাস্টিকের বোতল পরিস্কারের কাজ করে। 

একেক শিশু একক কাজ করছে। কিন্তু এ কাজ করে অর্জিত অর্থ দিয়ে এ সকল শিশু কি করে সে খবর হয়তোবা অনেকেই জানেনা। এভাবে অর্জিত অর্থ তারা খরচ করছে মাদকের পেছনে। বিভিন্ন প্রকার মাদক গ্রহণ করে ঘুমানোই যেন তাদের কাছে স্বর্গ সুখ।

কয়েকদিন আগের ঘটনা। রাজধানীর ফার্মগেইট এলাকার এক গলিতে দেখা গেল ১০-১২ বছর বয়সী এক পথশিশু তার চেয়ে বয়সে কিছুটা বড় এক বন্ধুর সাথে বসে গাঁজা সেবন করছে। বন্ধুটি গভীর মনযোগে তাকিয়ে আছে তার দিকে।  কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে তা চেয়ে দেখছে এক তরুন। কিন্তু কোন দিকেই ওই দুই গাঁজা সেবনকারীর মনযোগ নেই।
কিছুক্ষণ পর যুবকটি তাদের কাছ থেকে যখন জানতে চাইল, তোমরা কি করছ? তখন বাচ্চা ছেলেটির ঝটপট উত্তর, দেখের না কি করি? 

মজা পেয়ে গেল যুবকটি। তাদের পাশেই বসে গেল কথা বলতে। পথশিশুটি জানাল তার নাম রাজন। আর তার বন্ধুর নাম সনি। দু’জনই অনাথ। রাতে ফুটপাতে ঘুমায়। দিনের বেলা সে আর সনি মিলে ডাস্টবিন ময়লা হতে প্রয়োজনীয় জিনিস কুড়ায়। আর তা বিক্রি  করে স্থানীয় কয়েকটি দোকানে। সারাক্ষণ দু’জন এক সাথেই কাটায়। দিন শেষে যা উপার্জন করে তা তাদের এক অভিভাবকের কাছে জমা রাখে। ঐ অভিভাবকের  কাছ থেকেই তারা মাদক যেমন গাঁজা অথবা ড্যান্ডি(জুতার আঠা) সংগ্রহ করে। মাদক সেবন শেষে ওই যুবক অভিভাবকের সাথে রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। 

কেন মাদক সেবন করছে জানতে চাইলে রাজন বলে আমার কোন বাবা-মা নেই। আমার জন্মের দুই বছরের মাথায় বাবা মারা যায়। মা দ্বিতীয়বার বিয়ে করে এক রিকশাওয়ালাকে। সে আমাকে নিতে চায়  না। পরে মা আমাকে ওই যুবকের কাছে দিয়ে দেয়। আমার এখন কিছুই করার নেই। সারাদিন ময়লা ঘেটে প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করে যা পাই তা ওই মামার হাতে তুলে দিই। সেই আমাকে খাবার আর গাঁজা কিনে দেয়। রাজন বলে আমার কোন  স্বপ্ন নেই। আমি শুধু চাই খাওয়া আর ঘুমাতে।

সনি বলে, এই এলাকায় শুধু আমরা না, আরো আছে আমাদের মত। তারাও গাঁজা, চাক্কি (ঘুমানোর ঔষুধ) এবং ড্যান্ডি সেবন করে। সনির মুখের কথা কেড়ে নিয়ে রাজন বলে এসব ছাড়াও আরও বেশ কিছু মাদক যেমন নকটিন (এক ধরনের পিল), গুল পাওয়া যায়। এখানকার প্রায় সব ছেলেই এসব সেবন করে। কিন্তু আমরা শুধু গাঁজা আর ড্যান্ডি সেবন করি।

এলাকা ঘুরে দেখা যায় শুধু রাজন বা সনি নয়, প্রায় সব পথশিশুই প্রকাশ্যে মাদক সেবন করছে। অধিকাংশ পথশিশুদের কাছে ড্যান্ডি বর্তমানে খুব জনপ্রিয় একটি মাদক। কারণ অল্প খরচে এবং খুব সহজে এটি পাওয়া যায়। এক বোতল ড্যান্ডি‘র মূল্য মাত্র ৮০-৯০ টাকা। 

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে বর্তমানে প্রায় দশ লাখ পথশিশু রয়েছে। যার অর্ধেকের বয়স ১০ বছরের নিচে। আর এসব পথশিশুদের মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ মাদক সেবন করে।

মাদক বিরোধী সংগঠন ‘ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ’-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, আমাদের সবাইকে এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে। কারণ তারা আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম। পথশিশুরা খুব সহজেই মাদক জোগাড় করতে পারে। তাই আমাদের উচিত এ সংক্রান্ত আইনকে কাজে লাগানো। 

তিনি বলেন, এখনই উপযুক্ত সময় মাদক বিরোধী প্রচারণা চালানোর। এখনো সময় আছে তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার। এসব পথশিশুদের পুনর্বাসনে সরকারসহ সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

অনন্যা রহমানের মতে, প্রথমত কাউকে যাতে পথশিশু হিসেবে আবির্ভুত হতে না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। কেবলমাত্র আইন করে পথ শিশুদের  মাদক সেবন বন্ধ করা যাবেনা। এ জন্য প্রয়োজন সচেতনতা, প্রচারণা। এদের মাদকাসক্তি থেকে দূরে রাখতে সরকারসহ সমাজের সকলেরই এগিয়ে আসতে হবে।