ঢাকা, বুধবার ২৪, এপ্রিল ২০২৪ ১৭:২৫:২৮ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

অপরাজিতায় স্বাবলম্বী সিরাজগঞ্জের কিশোরীরা

অনলাইন ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৪:৩৫ এএম, ১৩ জানুয়ারি ২০২২ বৃহস্পতিবার

ফাইল ছবি।

ফাইল ছবি।

মাঝারী একটি কক্ষ। সিরাজগঞ্জ সদরের রহমতগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত সুন্দর পরিচ্ছন্ন সেই কক্ষে কাজ করছে বেশ কয়েকজন কিশোরী। সবাই খুব ব্যস্ত হয়ে কাজ করে চলেছে। তাদের হাতের নিপুনতায় তৈরী হচ্ছে একের পর এক ন্যাপকিন। কেউ করছে সেলাইয়ের কাজ। আবার কেউ করছে তুলা লাগানোর কাজ। আবার কেউ করছে প্যাকেটের কাজ। এভাবে তারা দৈনিক তৈরি করছে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ পিস্ ন্যাপকিন। যে ন্যাপকিন বাজারে যেয়ে পরিচিত হচ্ছে ‘অপরাজিতা’ নামে।

এই কিশোরীদের উৎপাদিত সে সব ন্যাপকিন বিক্রি হচ্ছে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন ক্লিনিক আর হাসপাতালে। এমনকি ঢাকার কয়েকটি ক্লিনিকেও সরবরাহ হচ্ছে এসব ন্যাপকিন।

কয়েকজন কিশোরীর সাথে কথা বলে জানা গেল, তারা একাধারে যেমন কর্মচারি তেমনি সেই প্রতিষ্ঠানের মালিকও। নিজেরা তৈরি করে আবার তা নিজেরাই বিক্রি করছে। আয়ের টাকা কাজ অনুযায়ী বন্টন করে নিচ্ছে নিজেরাই।

কিশোরী জাহানারা জানায়, পড়ালেখার পাশাপাশি সে এখানে ন্যাপকিন তৈরি করছে দু’বছর হলো। প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চার ঘন্টা সময় দিয়ে মাসে তার আয় ৫,০০০ টাকা থেকে ৭,০০০ টাকা। 

জাহানারা বলে, নিজের পড়ালেখার খরচ নিজেই চালাই। তাছাড়া মাকেও সংসার খরচে সহযোগিতা করি।

এই কাজের সাথে কিভাবে জড়িত হল জানতে চাইলে জাহানারা বলে, আসলে আমাদের পরিবারটা একটু বড়। আমরা পাঁচ ভাই-বোন। বাবার পক্ষে খুব কষ্ট হয়ে যেত আমাদের সবার পড়ালেখার খরচ চালাতে। আমি এসএসসি পাশ করার পর চিন্তা করি কিছু একটা করতে হবে। 

সে বলে, বাবার উপর চাপ কমাতে হলে আর আমার পড়ালেখা চালিয়ে যেতে হলে আমাকেই কিছু উপার্জন করতে হবে। তখন থেকে আমি আমার বান্ধবীদের সাথে আলোচনা কর। 

জাহারারা আরও বলে, এরমধ্যে আমার এক বান্ধবী আমাকে সেলিনা আপা নামে একজনের সাথে যোগাযোগ করতে বলে। পরে সেলিনা আপার সাথে যোগাযোগ করলে তিনিই আমাকে এখানে কাজ করা সুযোগ করে দেন। শুরুতে কাজ শিখতে কয়েকদিন সময় লাগলেও এখন ভাল ন্যাপকিন তৈরি। করতে পারি।

জাহানারা বলেন, এখানে যারা কাজ করে তারা সবাই কিশোরী। আমরা নিজেরাই এই প্রতিষ্ঠানের কর্মচারি। আবার আমরাই মালিক। আমাদের আয়ের টাকা কাজ অনুযায়ী সমানভাবে বন্টন হয়। যে যতটা ন্যাপকিন তৈরি করবে সে সেই হিসেবে টাকা পাবে।

জাহানারা জানায়,  এখানে কাজ করে পিংকি খাতুন, স্বর্ণা খাতুন, হামিদা খাতুন, মালা, সাবিনা, লিমাসহ আরো কয়েকজন।

হামিদা খাতুন জানায়, আমিও এখানে এসেছি সেলিনা আপার হাত ধরে। তিনিই আমাকে এখানে এনে কাজ শিখিয়েছেন। এখন পড়ালেখার পাশাপাশি এখানে কয়েক ঘন্টা করে কাজ করি। 

হামিদা বলে, আমাদের এই পণ্যের চাহিদা অনেক। শহরের প্রায় সবকটি ক্লিনিক আর হাসপাতালে আমাদের ন্যাপকিন বিক্রি হয়।

প্রতিষ্ঠানের মূল কর্ণধার সেলিনা নাজনিন জানান, ২০১৩ সালে প্র্যাকটিক্যাল এ্যাকশন, বাংলাদেশ নামে একটি এনজিও  মূলত আমাদের কয়েকজনকে উদ্বুদ্ধ করে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য। শুরুতে তারা এই ঘরটি ভাড়া করে দেয়। এছাড়াও আমাদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করে। প্রশিক্ষণ শেষে ন্যাপকিন তৈরির যাবতীয় সরঞ্জমাও ওই প্রতিষ্ঠান সরবরাহ করে। এছাড়া তুলা রিফাইন করার মেশিনও আমাদের দেয় ওই এনজিও। প্রথম দুই/তিন মাস তারা যাবতীয় সহযোগীতা করে। এমনকি তৈরি করা ন্যাপকিন বাজারজাত করার ক্ষেত্রেও তারা আমাদের সহযোগীতা করে। পরে সবকিছু আমাদের হাতে ছেড়ে দেয়। এখন আমরাই এই প্রতিষ্ঠানের মালিক। যেসব কিশোরী মেয়ে এখানে কাজ করবে তারাই এই প্রতিষ্ঠানের মালিক।

তিনি বলেন, আমাদের পণ্য এখন বিক্রির জন্য তেমন কষ্ট করতে হয় না। সিরাজগঞ্জ ছাড়াও আমাদের তৈরি ন্যাপকিন ঢাকার কয়েকটি ক্লিনিকে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কয়েকটি গার্মেন্টসেও বিক্রি হয় আমাদের পণ্য। আবার এলাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্রীরাও এসব পণ্য কিনছে।

অপরাজিতা ন্যাপকিন কতটুকু মানসম্মত জানতে চাইলে তিনি বলেন, শতভাগ হাইজানিক পদ্ধতিতে ন্যাপকিন তৈরি করছি আমরা। কারখানায় প্রবেশের আগে সবাই খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে নিই। সবাই  অ্যাপ্রোণ পড়ি।

দামের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিটি প্যাকেটে ১০ পিস্ ন্যাপকিন থাকে। প্রতি প্যাকেট বিক্রি হয় ৪৮ টাকায়। আর খরচ হয় ২৮ থেকে ৩০ টাকা।

এ প্রসঙ্গে প্র্যাকটিক্যাল এ্যাকশনের কো-অর্ডিনেটর মাহবুল ইসলাম বলেন, মূলত নারীদের কর্মসংস্থানই আমাদের উদ্দেশ্য। নারীরা যদি নিজেরাই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে তবেই আমরা এগিয়ে যাব।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যের মধ্যে চেষ্টা করি নারীদের জন্য কিভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা যায়। আর কিশোরী বয়স থেকে যদি তাদের স্বাবলম্বী করা যায় তবে তারা বড় হয়ে নিজ উদ্যোগে আরো বড় প্রতিষ্ঠান নিজেরাই গড়ে তুলতে পারবে।

তিনি বলেন, সিরাজগঞ্জ ছাড়াও এ ধরনের ন্যাপকিন তৈরি হচ্ছে গাইবান্ধা এবং কুড়িগ্রামসহ আরো কয়েকটি অঞ্চলে। মূলত দাম কম। আবার স্বাস্থ্যসম্মত এই ন্যাপকিন বিক্রির প্রচারণায় আমাদের তেমন বেগ পেতে হয় না। আমরা দ্রুতই মার্কেটিং করে বিক্রি করতে পারি। বিশেষ কওর ক্লিনিক এবং হাসপাতালে এই ন্যাপকিনের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।

ভবিষ্যতে এই ন্যাপকিনের কার্যক্রম আরো বৃদ্ধি পাবে বলে মাহবুল ইসলাম প্রত্যাশা করেন।