ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৮, ডিসেম্বর ২০২৫ ৫:১৮:৫২ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

শাবি উপাচার্যের বিষয়টি রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে ধরব: শিক্ষামন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৭:২৯ পিএম, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ শুক্রবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের অপসারণে শিক্ষার্থীদের দাবি রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রপতিই উপাচার্যের নিয়োগ বা অপসারণের সিদ্ধান্ত দেন। এ কারণে শাবি উপাচার্যের অপসারণ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সব বক্তব্য রাষ্ট্রপতির কাছে আমি তুলে ধরব।

শুক্রবার বিকালে সিলেট সার্কিট হাউসে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে মন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।মন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

দীপু মনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সব দাবি বিবেচনায় নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতিও দ্রুত স্বাভাবিক করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এর আগে দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল সিলেট সার্কিট হাউসে এসে আলোচনায় বসেন। মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় শিক্ষার্থীদের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন মুহাইমিনুল বাশার রাজ, ইয়াসির সরকার, নাফিসা আনজুম, সাব্বির আহমেদ, আশিক হোসাইন মারুফ, সাবরিনা শাহরিন রশীদ, সুদীপ্ত ভাস্কর, শাহরিয়ার আবেদিন, আমেনা বেগম, মীর রানা, জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব।

মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় শিক্ষার্থীরা নতুন ৪টি প্রস্তাব দিয়েছেন। সেগুলো হলো- ১. অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার সহধর্মিণী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হককে শাবিপ্রবিতে এমিরেটাস অধ্যাপক করা। ২. দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাখাতে প্রয়োজনীয় বাজেট বাড়ানো এবং সঠিক ব্যয় নিশ্চিতকরণ। ৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা পদ্ধতিতে কোডিং সিস্টেম চালু করা। ৪. শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ন্যূনতম পিএইচডিসহ ডেমো ক্লাসের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মতামত যাচাই করা।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় মন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে সার্কিট হাউস ত্যাগ করেন।

এর আগে শুক্রবার সকাল ৮টা ৫০ মিনিটে বিমানযোগে সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ সময় সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সংশ্লিষ্টরা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।

উল্লেখ্য, গত ১৩ জানুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদ লিজার বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েকশ ছাত্রী। এরপর ১৫ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী হামলা চালান। তারা আন্দোলনকারী সাধারণ ছাত্রীদের মারধর করেন। পরে ১৬ জানুয়ারি বিকালে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ ডাকেন উপাচার্য। 

পরে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ লিজা পদত্যাগ করতে রাজি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে চান। কিন্তু শিক্ষার্থীরা শুধুমাত্র কোষাধ্যক্ষকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেন।  কোষাধ্যক্ষ ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে যাওয়ার সময়ই পুলিশ লাঠিচার্জ, গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে শুরু করে। পরে উপাচার্যকে উদ্ধার করে বাসভবনে নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া হয়। 

পুলিশের লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেডের স্প্রিন্টারের আঘাতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে ১৬ জানুয়ারি দিবাগত মধ্যরাতে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। প্রথমে পুরো ক্যাম্পাস পুলিশের দখলে ছিল। তাই প্রধান ফটকে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে রাতেই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে অবস্থান নেন। 

১৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের উদ্দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি জানিয়ে খোলা চিঠি পাঠ করেন শিক্ষার্থীরা। তার পরের দিন ১৯ জানুয়ারি দুপুর আড়াইটা থেকে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন শাবির ২৪ শিক্ষার্থী। পাশাপাশি ক্যাম্পাসে চলতে থাকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। ধীরে ধীরে পুরো ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠে।

অবশেষে ১৬৩ ঘণ্টা পর আজ (২৬ জানুয়ারি) সকাল সোয়া ১০টার দিকে ‘আমরণ অনশন’ ভাঙলেও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।