ঢাকা, শনিবার ০৬, ডিসেম্বর ২০২৫ ৩:০৭:৪৫ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

প্রকাশিত হলো একাত্তরের পত্রিকা ‘বিপ্লবী বাংলাদেশ’

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:২৯ পিএম, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ রবিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

মহান একুশে গ্রন্থমেলা ২০২২ উপলক্ষে প্রকাশিত হয়েছে একাত্তরের পত্রিকা ‘বিপ্লবী বাংলাদেশ’র সংকলন। ফলে সুদীর্ঘ সময় পরে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এটা প্রথম সংকলিত হয়ে বৃহত্তর পাঠক ও গবেষক সমাজের গোচরে এসেছে।

একাত্তরে প্রকাশিত ‘বিপ্লবী বাংলাদেশ’ এর অবদান এবং প্রকাশিত তথ্যগুলোকে আঞ্চলিক ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সমাজে তুলে ধরাই এ প্রকাশনার মূল উদ্দেশ্য। এই পত্রিকায় একাত্তরের বাংলাদেশ সম্পর্কে সম্পাদকীয়, উপ-সম্পাদকীয়, প্রবন্ধ, সংবাদ-প্রতিবেদন, কবিতা-গল্প, গান, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি ছাপা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালে প্রকাশিত সব তথ্যই গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান। ভবিষ্যতে এই উপাদান ব্যবহার করেই রচিত হবে বন্তুনিষ্ঠ সমৃদ্ধ ও পূর্ণাঙ্গ এক জাতীয় ইতিহাস।


ট্যাবলয়েড আকারে প্রকাশিত বিপ্লবী বাংলাদেশ যথাযথভাবে ও গ্রন্থাকারে ছাপা হওয়ার প্রয়োজন ছিল। যুদ্ধক্ষেত্রে একজন যোদ্ধা অস্ত্র এবং কলমহাতে ভিন্নরকম মাধ্যমে কীভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন, তা কৌতূহলোদ্দীপক। মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় ইতিহাস রচনার উপাদন হিসেবে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত বিপ্লবী বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী পাঠক এবং গবেষকদের নজরে এলে এই সংকলনের সার্থকতা সূচিত হবে বলে মনে করা যায়।

বিপ্লবী বাংলাদেশ-এর ভাষা ছিল প্রমিত, সহজ-সরল কারণ এর ব্যবস্থাপনার দেখভাল করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন কলকাতার শিক্ষিত সমাজ-সদস্য। কলকাতা, মুক্তাঞ্চলের মানুষ, মুক্তিযোদ্ধা, শরণার্থীরা ছিল এর মূল পাঠক। পাঠক প্রসঙ্গে তপংকর চক্রবর্তী ‘বরিশালের সংবাদ ও সাময়িকপত্র’ গ্রন্থে লিখেছেন, বিপ্লবী বাংলাদেশ ছিল রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের মুখপত্র। কাজেই পত্রিকাটির জন্য মুক্তিযোদ্ধারা উন্মুখ হয়ে থাকতেন। পত্রিকা হাতে পেয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সে কী উল্লাস! মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পগুলোতে পত্রিকা বিনামূল্যে বিতরণ করা হতো।


‘বিপ্লবী বাংলাদেশ’ এর সম্পাদকীয়তে একাত্তরে স্বাধীনতাকামী গণমানুষের মনস্তাত্ত্বিক চাহিদার প্রতিফলন ঘটেছে। প্রথম সম্পাদকীয় ‘বিশ্ব বিবেকের কাছে আবেদন।’ এতে পাকিস্তানি কারাগারে আটক বঙ্গবন্ধুর মুক্তি কামনা করে পাকিস্তানি মনোবৃত্তি, বঙ্গবন্ধুর বিচার এবং মৃত্যুদণ্ডের পায়তারাকে ঘৃণা জানানো হয়েছে।

দ্বিতীয় সম্পাদকীয় একই রকম ‘এ মুজিব তোমার আমার এ মুজিব সকলের।’ বঙ্গবন্ধুকে শুধু বাংলাদেশের নয় বিশ্বনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে এখানে। যে উদারনৈতিক সহাবস্থান বা একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তার প্রতিফলনও এখানে স্পষ্ট। 

আলাদা করে সাহিত্যপাতা না থাকলেও প্রায় নিয়মিতভাবে কবিতা-গল্প প্রকাশিত হয়েছে ‘বিপ্লবী বাংলাদেশ’ এর  পাতায়। কিন্তু সাহিত্যের উপাদান হিসেবে এসেছে বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধ। কবিতাগুলোর কিছু মানোত্তীর্ণ এবং প্রতিষ্ঠিত কবিদের রচনা। 

বৃহৎ আকারে বিপ্লবী বাংলাদেশ সংকলন ও সম্পাদনা করেছেন লেখক ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষক সত্যজিৎ রায় মজুমদার। গ্রন্থে মূল পত্রিকার অবিকল কপি, সম্পাদকীয়, পত্রিকা সম্পর্কে দীর্ঘ প্রয়োজনীয় বর্ণনা তিনি সংযুক্ত করেছেন। এছাড়া রয়েছে সংশ্লিষ্ট এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছবি যেগুলো সচরাচর দেখা যায় না। 

মূল সম্পাদক নূরুল আলম ফরিদের একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি আকর্ষণীয়। এটির প্রকাশক জাগতিক প্রকাশনের রহিম রানা। প্রচ্ছদ শিল্পী মিন্টু দে আর গ্রন্থটির দাম ২০০০ টাকা।