ঢাকা, বুধবার ০১, মে ২০২৪ ২:৫৮:৫৩ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

অবিস্মরণীয় রোজা লুক্সেমবার্গ: জন্মদিনে অকৃত্রিম শুভেচ্ছা

নোরা নূর

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:৪৫ পিএম, ৫ মার্চ ২০২২ শনিবার

রোজা লুক্সেমবার্গ

রোজা লুক্সেমবার্গ

রোসা লুক্সেমবুর্গ ছিলেন জন্মসূত্রে পোলিশ মার্কসবাদী তাত্তিক, সমাজ দার্শনিক, বিপ্লবী ও নারীনেত্রী। তিনি পোল্যান্ড সোশাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির তাত্তিক ছিলেন। পরে জার্মান সোশাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এসপিডি)সাথে জড়িয়ে পড়েন। ১৮৭১ সালের ৫ মার্চ মাসে রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত পোল্যান্ডের সামোসকে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

১৯১৮ সালের নভেম্বরে তিনি ডি রোটে ফাহরে (বাংলায় লাল পতাকা) পত্রিকা চালু করেন। এসপিডি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সমর্থন দেবার পর তিনি কার্ল লিবটকেনেখট-এর সাথে স্পার্টাসিস্ট লীগ (জার্মান : স্পার্টাকুসবুন্ড ) নামক এক বিপ্লবী দল গঠন করেন। দলটি পরে জার্মানির কমিউনিস্ট পার্টি নামে পরিচিতি লাভ করে। 

লুক্সেমবার্গ ১৯১৯ সালের জানুয়ারি মাসে এক ব্যর্থ অভ্যুথানের নেতৃত্ব দেন। অভ্যুথান ব্যর্থ হবার পর রোজা লুক্সেমবুর্গ, কার্ল লিবটকেনেখটসহ হাজার হাজার বিপ্লবী ধরা পড়েন ও তাদের হাতে নির্যাতিত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।

রোসা লুক্সেমবুর্গ ১৮৭১ সালের ৫ মার্চ রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত পোল্যান্ডের সামোসক নামক স্থানে এক ইহুদী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মের পর তার নাম রাখা হয়েছিলো রোজালিয়া লুক্সেবুর্গ। 

রোজা লুক্সেমবুর্গ ঠিক কত সালে জন্মেছিলেন তা নিয়ে একটা বিভ্রান্তি রয়েছে। পুরনো নথীপত্র থেকে এর পেছনে যে কারণটা পাওয়া যায় সেটা হলো তিনি তার স্কুলের সার্টিফিকেট ও জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ফর্মে দু'টি ভিন্ন তারিখ লিখেছিলেন। 

তার পরিবার জার্মান ভাষায় কথা বলতো। লাক্সেমবার্গ রুশ ভাষাও শিখেছিলেন। এই মহীয়সী নারী শারীরিক প্রতিবন্ধী হিসেবে জন্মালেও সেটা তার জীবনে কোন প্রতিবন্ধক হিসেবে দাড়াতে পারেনি।

রোজার বয়স যখন ৯/১০ বছর তখন তার পরিবার রাজধানী ওয়ারশে স্থায়ী আবাস গড়ের। সেখানে মাত্র ১৫-১৬ বছর বয়সেই তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। নিষিদ্ধ ঘোষিত বামপন্থি দল প্রোলেতারিয়েতে যোগ দেন তিনি। এর বছর দুই পর গ্রেফতার এড়াতে তিনি সুইজারল্যান্ড পাড়ি জমান। এ সময় রোজা জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন ।

দর্শনগত দিক থেকে রোজা বৈপ্লবিক মার্ক্সবাদী চিন্তাধারায় বিশ্বাসী ছিলেন। প্রথম জীবনে তিনি এসপিডির রাজনৈতিক চিন্তাধারায় বিশ্বাসী থাকলেও ১৮৯০ সালে বিসমার্ক যখন রাজনৈতিক কর্মকান্ডের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন তখন থেকে এসপিডি আস্তে আস্তে ক্ষমতাকেন্দ্রীক রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ায় আলাদা রাজনৈতিক প্লাটফর্মের কথা চিন্তা করতে থাকেন তিনি। এরই মধ্যে ১৮৯৮ সালে রোজা জার্মান নাগরিকত্ব পান গুস্তাভ লোয়েবেক নামের একজনকে বিয়ে করে। 

এর পরপরই মধ্যে রাজনৈতিক কর্মপন্থা নিয়ে এসপিডির উচ্চপর্যায়ের সাথে সরাসরি বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। বিতর্ক বিরোধীতায় রূপ নেয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবার পর। যুদ্ধের অর্থসংস্থানে এসপিডি ক্ষমতাসীনদের সমর্থন দিলে রোজা ও তার সঙ্গীরা দলত্যাগ করেন। বিরুদ্ধ আচরণের দায়ে এরপর তাকে আড়াই বছরের কারাবাস দেয়া হয়। জেলে বসেই তিনি কলম চালাতে থাকেন যুদ্ধরত সরকারের বিপক্ষে। 

এসময়ই তিনি কিভাবে একটি বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র একনায়কতন্ত্র হয়ে বসে তার একটা তাত্তিক কাঠামো দাড় করান। যার বাস্তব রূপ পরে হিটলারের উথথানের মধ্য দিয়ে দেখতে পাওয়া যায় ।

রোজার জেল মেয়াদ শেষ হবার সময় জার্মানির উত্তরের শহর কিল-এ এক গণআন্দোলন দানা বেধে ওঠে। ১৯১৮ সালের ৪ নভেম্বর জার্মানির উত্তরাঞ্চল ৪০ হাজার সৈন্য ও আন্দোলনরত জনতারা দখল করে ফেলে। এরকম একটা উত্তাল সময়ে ৮ নভেম্বর জেল থেকে ছাড়া পান রোজা। 

জেল থেকে বের হয়েই আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়েন তিনি। সমমনা সকল বামপন্থী দলগুলো নিয়ে গঠন করেন জার্মানির কমিউনিস্ট পার্টি। অধিকৃত অঞ্চলে তৎকালীন সোভিয়েত আদলে রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাজ শুরু করেন তারা। 

এদিকে সরকার বিদ্রোহীদের দমন করতে কঠোর ব্যবস্থা নেয়। ফ্রাইকর্প নামে পরিচিত কট্টর জাতীয়তাবাদী মিলিশিয়াদের লেলিয়ে দেয় তারা। তাদেরই হাতে  ১৯১৯ সালের ১৫ জানুয়ারি সপরিবারে রোজা লুক্সেমবার্গ নিহত হন। তার মৃতদেহ পরে নদীতে ফেলে দেয়া হয়।

বিপ্লব ব্যর্থ হলেও জার্মানি তথা সারা বিশ্বের বাম রাজনীতিতে রোজা লুক্সেমবার্গ একটি স্মরনীয় নাম। জার্মানির বার্লিন শহরে তার স্মরণে একাধিক স্মৃতিসৌধ ও রাজপথের নামকরণ করা হয়েছে। এছাড়াও শহরের প্রাণকেন্দ্রে একটি পাতাল রেল স্টেশন তার নামে নামকরণ করা হয়েছে। মৃত্যুর শত বছরেরও অধিক সময় পরে আজ সারা বিশ্বের মানুষ তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছে।