ঢাকা, শনিবার ০৬, ডিসেম্বর ২০২৫ ০:০৮:৪৭ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

দেশে পরিত্যক্ত নবজাতক লালন-পালনে কি ব্যবস্থা আছে

বিবিসি বাংলা অনলাইন

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৮:৪৬ পিএম, ৯ মার্চ ২০২২ বুধবার

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৩ তারিখের সকাল। ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কাক ডাকা ভোরে পথচারীরা আবিষ্কার করেন উদ্যানের ভেতরে একটা কাগজের বাক্সের মধ্যে দুটি নবজাতক।

কী করবেন ভেবে না পেয়ে নিকটবর্তী থানা শাহবাগ থানায় খবর দেন তারা। সেই থানায় সেসময় কর্তব্যরত ছিলেন এসআই শাহাব উদ্দিন।

তিনি বিবিসিকে বলেন সেদিন সকাল নয়টার দিকে তাদের কাছে খবর আসে উদ্যানে নবজাতক পাওয়া গেছে।

"আমি খবর পেয়ে সেখানে যাই। গিয়ে দেখি একটা আইসক্রিমের বড় কাগজের মধ্যে দুটি নবজাতক শিশু। তাদের বয়স একদিন হবে" বলেন তিনি।

নবজাতকদের তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যান । ডাক্তার তাদের মৃত ঘোষণা করে। এরপর ময়নাতদন্ত হয়। আর শাহবাগ থানায় আনন্যাচারাল ডেথ বা অস্বাভাবিক মৃত্যুর দুটি মামলা হয়।

শাহাব উদ্দিন বলেন "এই শিশু দুটির ব্যাপারে থানায় কেউ খোঁজ নিতে এখনো আসেনি। আর এই ধরণের কেসে সাধারণত কেউ আর খোঁজ নেয় না।"

১৩ ফেব্রুয়ারি মিরপুর থেকে আরো একটি নবজাতক শিশুকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে মিরপুর থানার পুলিশ।

একই দিন ঢাকায় তিনটি নবজাতক শিশুকে পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হলে চাঞ্চল্য তৈরি হয়। আলোচনা হয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে।

তবে এই ঘটনা বাংলাদেশে একেবারেই বিরল নয়। হরহামেশায় এমন ঘটনা গণমাধ্যমের খবর হয়।

১৪ই ফেব্রুয়ারি লালমনিরহাটে সকাল সাড়ে ৮টায় শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন কালীবাড়ি এলাকার একটি ময়লার স্তূপ থেকে আরো এক নবজাতক শিশুকে জীবিত উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে স্থানীয়রা।

লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন "আমরা শিশুটির প্রকৃত অভিভাবককে খুঁজে বের করতে তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতকে বিষয়টি জানাবে। আদালতই শিশুটিকে দত্তক দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন"।

তিনি জানান দত্তক নিতে ইতিমধ্যে অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। শিশুটিকে দত্তক নিতে তারা জেলা শিশু কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছেন।

কারা ফেলে দেয় এই নবজাতকদের: সরকারের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ড. শেখ মুসলিমা মুন বলেন এই ধরণের ঘটনার পিছনের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে।

তিনি বলেন "যারা তাদের নবজাতক সন্তানকে রাস্তায় রেখে চলে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে এমন মানুষ আছেন যারা হয়ত বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে ছিলেন, কিংবা ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। এদের মধ্যে বিত্তবানও থাকতে পারেন। তারা সন্তানকে সমাজে পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন না। আবার আরেকটা শ্রেণি আছে যারা অর্থনৈতিকভাবে সেই ক্ষমতা নেই একটা সন্তানের ভরণ-পোষণের। ফলে তারাও ফেলে রেখে যায়।"

প্রতিবছর কত পরিত্যক্ত শিশু এভাবে জীবিত বা মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় তার কোন সরকারি এবং বেসরকারি হিসেব পাওয়া যায় না।

তবে গণমাধ্যমে প্রতিবছরই এমন খবর প্রকাশিত হয়।

পরিত্যক্ত শিশুদের জন্য কী ব্যবস্থা আছে: সব পরিত্যক্ত নবজাতক শিশুকে প্রথমে পুলিশের তত্বাবধানে রাখা হয়।

ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া, মামলা করা, তদন্ত করা এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা- এসব কিছুই করতে হয় স্থানীয় পুলিশকে।

পরিত্যক্ত শিশুদের উদ্ধার করে লালন-পালন করার জন্য সরকারের ৬টি বিভাগে শিশুমণি নিবাস রয়েছে।

এসব কেন্দ্রে বর্তমানে ১৪৪টি শিশু রয়েছে। এদেরকে বিভিন্ন সময় পরিত্যক্ত অবস্থায় কোন দাবীদার ছাড়া উদ্ধার করা হয়েছে।

বাংলাদেশের সমাজসেবা অধিদপ্তর বলছে পিতৃ-মাতৃ পরিচয়হীন পরিত্যক্ত শিশু, অথবা পাচারকারীদের কবল থেকে উদ্ধার করা শিশু, যাদের বয়স সাতের নীচে, তাদেরকে ছোটমণি নিবাসে লালনপালন করা হয়।

অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ রেজাউর রহমান বলেন " পরিত্যক্ত এই শিশুদের জন্য প্রতিটা জেলায় জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে শিশু কল্যাণ বোর্ড করা আছে। কোন শিশু পাওয়া গেলে শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী বোর্ড ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।"

এছাড়া এই বিষয়ে প্রচার -প্রচারণার জন্য ফেসবুক, ইউটিউব এবং সরকারি টেলিভিশন বিটিভিতে সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

তবে এভাবে শিশুদের ফেলে রেখে যাওয়ার ঘটনা ঠেকাতে কোন ব্যবস্থা নেই বলে কর্মকর্তা জানাচ্ছেন।

আর কেউ যদি চান যে, তিনি নিজের নাম গোপন রেখে এই সরকারি কেন্দ্রে শিশু রেখে যাবেন, সেরকম সুযোগ নেই।

ড. শেখ মুসলিমা মুন বলেন যেহেতু বাংলাদেশের সামাজিক ব্যস্তবতা এখনো সেই অবস্থানে পৌছাঁতে পারেনি তাই কেউ নিজে যেয়ে সন্তানকে ঐসব কেন্দ্রে রেখে আসার চেয়ে ফেলে রেখে যাওয়ার পথই বেছে নেন।

যদিও পুরো বিষয়টাকে অমানবিক বলে মনে করেন অনেকে।