ঢাকা, শনিবার ০৪, মে ২০২৪ ২৩:৪১:২৫ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পেল জেলেপল্লীর দীপ্তি

জেসমিন রহমান

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৮:০৬ পিএম, ১১ এপ্রিল ২০২২ সোমবার

মা-বাবা সাথে দীপ্তি রাণী দাস।

মা-বাবা সাথে দীপ্তি রাণী দাস।

দীপ্তি রাণী দাস। রংপুরের পীরগঞ্জ পৌরসভার উজিরপুর গ্রামের জেলেপল্লীর মৎস্যজীবী ধলু চন্দ্রের জ্যেষ্ঠ কন্যা। দারিদ্র্য থামাতে পারিনি অদম্য দীপ্তি রাণীর স্বপ্নকে। এমবিবিএস কোর্সে ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে  দীপ্তি দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে।  

আধুনিকতার ছোঁয়াহীন প্রত্যন্ত পল্লীতে বাসরত অভাব অনটনের মধ্যে তিল-তিল করে নিজের অদম্য ইচ্ছার দিকে এগিয়ে চলছে সে। উজিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর বাবার ইচ্ছায় প্রাইমারি স্কুল থেকে নিউ ক্যামব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল কেজি স্কুলে ৪র্থ শ্রেণী ও প্রাথমিক সমাপনি সমাপ্তির পর পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ট শ্রেণীতে ভর্তি হয়। ২০১৯ সালে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তিসহ এসএসসি, ২০২১ সালে সরকারি শাহ আব্দুর রউফ কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে। এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস প্রাপ্ত হয় সে। এর আগে জেএসসিতে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছে দীপ্তি। এমবিবিএস কোর্সে ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছে। বাবা-মা শত কষ্টের মধ্য মেয়ের স্বপ্ন পুরণে সকল সহযোগিতা অব্যহত রেখেছেন। 

দীপ্তি বলেন, ছোট বেলায় স্কুলে যখন জেলে পল্লীর বাচ্চাদের সঙ্গে যেতাম তখন নিজেকে অসহায় মনে হতো। এরপর যখন বাবা আমাকে কেজি স্কুলে ভর্তি করায়, তখন ভীত সন্ত্রস্ত ছিলাম। অজো পাড়া-গাঁয়ের স্কুল ছেড়ে শহরের কেজি স্কুলে নিজেকে মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছিল। এমনিতে অভাব অনটনের কারনে ভালো পোশাক পরিধান করতে পারতাম না, ভালো খাবারও জুটতো না। এক সময় সব ভুলে নিজের স্বপ্ন ও বাবা-মায়ের কষ্টের কথা মনে করিয়ে নিজেকে তৈরি করতে থাকি। স্কুল ও কলেজ থেকে সহযোগিতার প্রশ্নে দীপ্তি বলেন, স্কুলে বেতন-প্রাইভেটে কোন ছাড় মেলেনি, মেধাবী হিসেবে আলাদা করে কোন সুযোগ সুবিধাও মেলেনি। যখন কলেজে ভর্তি হই তখনি করোনার ছুটি মেলে। সে কারনে ভালো জানা হয়নি কলেজ, চেনা হয়নি শিক্ষক ও সহপাঠিদের। মেডিকেলে ভর্তির জন্য রেটিনা কোচিং এ ভর্তি হয়ে ১৫/২০ দিন ক্লাস করেছি। বাকি সময় অনলাইনে বাড়ি থেকে ক্লাস করেছি। 

দীপ্তির বাবা ধলু চন্দ্র দাস বাসসকে বলেন, দুই মেয়ে দীপ্তি ও দিপাসহ ৪ জনের সংসার। অভাব অনটনের মধ্য কোন রকমে চলে যাছে। ধার-দেনা করে ২ মেয়ের স্বপ্ন পুরণে চেষ্টা করে যাচ্ছি। ভগবানের কৃপায় বড় মেয়ে স্বপ্ন পুরণের পথে। ছোট মেয়েটাও মেধাবী। পীরগঞ্জ মহিলা ডিগ্রি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। বড় মেয়ের স্বপ্ন পুরণ করতে গিয়ে ছোট মেয়ের প্রতি যতœহীন। মেডিকেলে ভর্তিতে খুশির পাশাপাশি দুচিন্তায় পড়েছি। এ পর্যন্ত আসতে অনেক ধার-দেনা হয়েছে। মেয়ের মেডিকেলের ৪ বছর খরচ কি করে জোগাবো সেটাই এখন ভাবনা।