ঢাকা, বুধবার ১৭, এপ্রিল ২০২৪ ১:১৫:৫৭ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

নার্সিং সেবার অগ্রদূত ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৩:৩৬ পিএম, ১২ মে ২০২২ বৃহস্পতিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

কেউ নন, এমন কি একজন ডাক্তারও একজন নার্সের সংজ্ঞা দিতে পারবেন না। বড়জোর বলতে পারবেন- উৎসর্গীকৃত ও বাধ্যগত। এটা আরও বেশি কিছু। - উক্তি দ্য লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প খ্যাত ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের।

ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল ছিলেন অন্ধকারে আলোকবর্তিকা, আধুনিক নার্সিং সেবার অগ্রদূত, রয়াল রেডক্রসড এক অনন্যা প্রিয়দর্শিনী।

ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল তার কর্মে জানিয়ে দিয়েছিলেন - নার্সিং একটি পেশা নয়, এটি মূলত সেবা।

আজ এ মহিয়সী সেবিকার শুভ জন্মদিন। ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল ১৮২০ সালের ১২ মে অভিজাত ও উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্রিটিশ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে জন্মগ্রহণ করায় তার বাবা কন্যার নাম রাখেন ফ্লেরেন্স । আর সঙ্গে বাবার নাইটিঙ্গেল নামটি জুড়ে তার নাম হয় ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল।

ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল যখন জন্মগ্রহণ করেন তখন নারীরা শিক্ষা কী তাই বুঝত না। তবু বাবার আগ্রহে তিনি সে সময় একজন মানবতাবাদী লেখক এবং পরিসংখ্যানবিদ হয়েছিলেন।

মানব সেবায় নিবেদিত ফ্লোরেন্সের এই চরিত্রটি ছোটবেলা থেকেই ফুটে উঠেছিল। কেউ অসুস্থ হলে ফ্লোরেন্স সেখানে সেবা করতে ছুটে যেতেন।

ডার্বিশায়ার থেকে যখন তিনি লন্ডনে আসেন তার বয়স তখন ১৭। সে সময় লন্ডনের হাসপাতালগুলোর অবস্থা ছিল খুবই করুণ। এর অন্যতম কারণ সে সময়ে কেউ সেবিকার কাজে এগিয়ে আসতেন না।

এ পেশাকে তখন খুব ছোট করে দেখা হতো। সামাজিক ভাবে এ পেশা তখনও পূর্ণ মর্যাদা পায়নি। অথচ ধনী, উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান হয়েও ফ্লোরেন্স তখন নিজেকে একজন সেবিকা রূপে তৈরি করেন।

মাত্র ১৭ বছর বয়সেই নাইটিঙ্গেল বিশ্বাস করতেন স্রষ্টা তাকে সেবিকা হওয়ার জন্যই পাঠিয়েছেন। প্রথমে এ কাজে আগ্রহ প্রকাশ করলে মা-বাবা রাজি হননি এই ভেবে, একজন শিক্ষিত মেয়ে হিসেবে তার যে কোনো ভালো পেশায় যাওয়া উচিত।

আশা ছাড়েননি ফ্লোরেন্স। অবশেষে বাবা-মায়ের অনুমতি মিললে তিনি ১৮৫১ সালে নার্সের প্রশিক্ষণ নিতে জার্মানিতে উড়াল দেন।

১৮৫৫ সালে তিনি নার্স প্রশিক্ষণের জন্য তহবিল সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। নিরলস প্রচেষ্টায় ১৮৫৯ সালে তিনি নাইটিঙ্গেল ফান্ডের জন্য সংগ্রহ করেন প্রায় ৪৫ হাজার পাউন্ড।
১৮৫৯ সালে তিনি রয়্যাল স্ট্যাটিসটিক্যাল সোসাইটির প্রথম সারির সদস্য নির্বাচিত হন। লন্ডনের সেন্ট থমাস হাসপাতালে নার্সিংকে সম্পূর্ণ পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ১৮৬০ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘নাইটিঙ্গেল ট্রেনিং স্কুল’ যার বর্তমান নাম ‘ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল স্কুল অব নার্সিং।

ডা. এলিজাবেথ ব্ল্যাকওয়েলের সঙ্গে যৌথভাবে ১৮৬৭ সালে নিউইয়র্কে চালু করেন ‘উইমেন্স মেডিক্যাল কলেজ’।

১৮৫৩ সালে শুরু হয় ক্রিমীয়ার যুদ্ধ। এ যুদ্ধে বহু সৈনিক আহত হয়। সে সময় যুদ্ধাহতদের সেবায় ফ্লোরেন্স আত্মনিবেদন করে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন।

আহত সৈন্যদের সেবার মাধ্যমে নার্সিংকে তিনি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। হ্যারিকেন নিয়ে রাতের আঁধারে তিনি ছুটে গেছেন আহতদের দ্বারে দ্বারে। এরপর থেকেই বিশ্ব তাকে ‘দ্য লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’ ডাকতে শুরু করে। যুদ্ধের পর ফ্লোরেন্স বহু দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

১৮৮৩ সালে রানী ভিক্টোরিয়া তাকে ‘রয়েল রেডক্রস’ পদকে ভূষিত করেন। প্রথম নারী হিসেবে ‘অর্ডার অব মেরিট’ খেতাব লাভ করেন ১৯০৭ সালে। ১৯০৮ সালে লাভ করেন লন্ডন নগরীর ‘অনারারি ফ্রিডম’ উপাধি।

বহু মনীষী ফ্লোরেন্সকে ঈশ্বরের দূত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এখন যারা এ পেশায় নতুন আসেন তারা ‘নাইটিঙ্গেল প্লেজ’ নামে একটি শপথ গ্রহণ করে তার প্রতি সম্মান জানান। তার সম্মানেই ১৯৭৪ সাল থেকে তার জন্মদিন ১২ মে পালিত হয়ে আসছে ‘ইন্টারন্যাশনাল নার্সেস ডে’।

ব্রিটিশ লাইব্রেরি সাউন্ড আর্কাইভে সংরক্ষিত রয়েছে ফ্লোরেন্সের কণ্ঠস্বর, যেখানে তিনি বলেছেন- যখন আমি থাকব না, সেই সময় আমার এই কণ্ঠস্বর আমার মহান কীর্তিগুলোকে মানুষের কাছে মনে করিয়ে দেবে এবং এসব কাজের জন্য উৎসাহ জোগাবে। তার জীবনী নিয়ে ১৯১২, ১৯১৫, ১৯৩৬ ও ১৯৫১ সালে চারটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয় ।

১৯১০ সালের ১৩ আগস্ট ৯০ বছর বয়সে এই মহীয়সী নারী পৃথিবী ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে যান।