ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫, এপ্রিল ২০২৪ ২:১৪:১৮ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী: জন্মদিনে শ্রদ্ধা

অনু সরকার

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:০৫ পিএম, ১২ মে ২০২২ বৃহস্পতিবার

উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী।  ফাইল ছবি।

উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী। ফাইল ছবি।

উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী; বিখ্যাত বাঙালি শিশুসাহিত্যিক। বাংলা ছাপাখানার অগ্রপথিক তিনি। তিনি শুধু লেখকই নন, চিত্রশিল্পী, প্রকাশক, জ্যোতির্বিদ, বেহালাবাদক এবং সুরকার। বাংলা সাহিত্যের ছোটদের সবচেয়ে জনপ্রিয় সন্দেশ পত্রিকা তিনিই শুরু করেন। পরে তার ছেলে সুকুমার রায় ও পৌত্র সত্যজিৎ রায়ও সন্দেশ সম্পাদনা করেন। গুপি-গাইন-বাঘা-বাইন, টুনটুনির বই প্রভৃতি তার অমর সৃষ্টি।

পারিবারিক ইতিহাস: রায়দের পূর্বপুরুষ শ্রী রামসুন্দর দেও (দেব) অধুনা পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার চাকদহ গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন৷ ভাগ্যাণ্বেষণে তিনি তার পৈতৃক নিবাস ছেড়ে পূর্ববঙ্গের শেরপুরে চেল যান ৷ সেখানে শেরপুরের জমিদার বাড়িতে তার সাক্ষাৎ হয় যশোদলের জমিদার রাজা গুণীচন্দ্রের সাথে ৷ রাজা গুণীচন্দ্র রামসুন্দরের সুন্দর চেহারা ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধি দেখে মুগ্ধ হন এবং রামসুন্দরকে তার সাথে তার জমিদারিতে নিয়ে যান ৷ যশোদলে জমিজমা, ঘরবাড়ি দিয়ে তিনি রামসুন্দরকে তার জামাতা বানান ৷ সেই থেকে রামসুন্দর যশোদলে বসবাস শুরু করেন ৷ তার বংশধররা সেখান থেকে সরে গিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলায় মসূয়া গ্রামে বসবাস শুরু করেন৷

জন্ম ও পরিবার: উপেন্দ্রকিশোরের জন্ম ১২৭০ বঙ্গাব্দের ২৭ বৈশাখ (১৮৬৩ সালের ১২ মে) ময়মনসিংহ জেলার বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলার মসূয়া গ্রামে। তার বাবা কালিনাথ রায় ছিলেন সুদর্শন ও আরবি, ফারসি ও সংস্কৃতে সুপণ্ডিত। তার ডাকনাম ছিল শ্যামসুন্দর মুন্সী। উপেন্দ্রকিশোর শ্যামসুন্দরের আট সন্তানের মধ্যে তৃতীয় পুত্রসন্তান। তার পৈতৃক নাম ছিল কামদারঞ্জন রায়। পাঁচ বছরেরও কম বয়সে তার বাবা অপুত্রক আত্মীয় জমিদার হরিকিশোর রায়চৌধুরী তাকে দত্তক নেন। তিনি তার নতুন নাম দেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী।

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী বাংলা সাহিত্য জগতের অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি নাম। সাহিত্যিক সুকুমার রায়ের পিতা এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের ঠাকুরদা ছিলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। 

শিক্ষা জীবন: মেধাবী ছাত্র বলে পড়াশোনায় ভাল ফল করলেও ছোটোবেলা থেকেই উপেন্দ্রকিশোরের পড়াশোনার থেকে বেশি অনুরাগ ছিল বাঁশী, বেহালা ও সঙ্গীতের প্রতি। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে উপেন্দ্রকিশোর প্রবেশিকা পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে বৃত্তি পান। তারপর কলকাতায় এসে ভর্তি হন প্রেসিডেন্সী কলেজে। এরপর তিনি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন।

সাহিত্যজীবন: একুশ বছর বয়সে বিএ পাস করে ছবি আঁকা শিখতে আরম্ভ করেন উপেন্দ্রকিশোর। এই সময় তিনি ব্রাহ্ম সমাজের সদস্য হওয়ায় তার অনেক আত্মীয়ের সঙ্গে মনোমালিন্য ঘটে। ছাত্র থাকাকালীনই তিনি ছোটোদের জন্যে লিখতে আরম্ভ করেন। সেই সময়কার সখা, সাথী, মুকুল ও জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি থেকে প্রকাশিত বালক নামে মাসিক পত্রিকাগুলিতে তার লেখা প্রকাশ হতে শুরু হয়। প্রথমদিকের (যেমন সখা, ১৮৮৩) প্রকাশিত লেখাগুলি ছিল জীববিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ।[৪] তার পরে চিত্র অলঙ্করণযুক্ত গল্প প্রকাশিত হতে আরম্ভ হয়।

১৮৮৬ সালে ২৩ বছরের উপেন্দ্রকিশোরের সঙ্গে বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক ব্রাহ্মসমাজের দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রথম পক্ষের কন্যা বিধুমুখীর বিবাহ হয়, এবং তখনকার কলকাতার কর্নওয়ালিস স্ট্রীটের ব্রাহ্ম সমাজের মন্দিরের বিপরীতে লাহাদের বাড়ির দোতলায় কয়েকটি ঘর ভাড়া নিয়ে উপেন্দ্রকিশোরেরর সংসার জীবন শুরু হয়। উপেন্দ্রকিশোরের তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। ছেলেরা হলেন সুকুমার, সুবিনয় ও সুবিমল, এবং মেয়েরা হলেন সুখলতা, পুণ্যলতা ও শান্তিলতা। প্রত্যেকেই শিশু সাহিত্যে অবদান রেখেছেন। জ্যেষ্ঠা কন্যা সুখলতা রায় ও জ্যেষ্ঠ পুত্র সুকুমার রায় উল্লেখযোগ্য।

যোগীন্দ্রনাথ সরকারের সিটি বুক সোসাইটি থেকে তার প্রথম বই ‘ছেলেদের রামায়ণ’ প্রকাশিত হয়। এই বইটি সমাজে অতি আদরের সঙ্গে সমাদৃত হলেও মুদ্রণ সম্বন্ধে অতৃপ্ত উপেন্দ্রকিশোর ১৮৮৫ সালে বিদেশ থেকে তখনকার দিনের আধুনিকতম মুদ্রণযন্ত্রাংশাদি নিজের খরচায় আমদানি করেন, এবং ৭ নম্বর শিবনারায়ণ দাস লেনে নতুন ভাড়াবাড়ি নিয়ে ইউ রায় অ্যান্ড সন্স নামে নতুন ছাপাখানা খোলেন। এখানের একটি কামরায় তিনি নিজের আঁকার স্টুডিও খোলেন এবং সেখানে হাফটোন ব্লক প্রিন্টিং নিয়ে অনেক পরীক্ষা নিরিক্ষা করেন। ১৯১১ সালে তিনি বড় ছেলে সুকুমারকে বিলাতে পাঠান ফোটোগ্রাফী ও মুদ্রণ সম্বন্ধে উচ্চশিক্ষা লাভ করার জন্যে।

মৃত্যু: ১৯১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর মাত্র বাহান্ন বছর বয়সে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরি মারা যান।