সিয়েরা লিওন : নারীর খৎনা জায়েজ যেখানে
অাসমা আক্তার
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০৩:৩৫ পিএম, ৫ মার্চ ২০১৮ সোমবার
সিয়েরা লিওন পশ্চিম আফ্রিকার একটি দেশ। অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ পিছিয়ে পড়া এ দেশটিকে আরো পিছিয়ে দিয়েছে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্যসহ নানা ক্ষেত্রে আজও বেশ পিছিয়ে এ জনপদ। নানা রকম কুসংস্কার থেকে মুক্তি মেলেনি নারীসহ সমগ্র সমাজের। সারা বিশ্বে নিষিদ্ধ হওয়া স্বত্তেও আজও দেশটিতে মেয়েদের খৎনা করানো হয়। এখনো এই প্রথার পক্ষে অনেকেই কথা বলেন।
"যদি এদেশের সরকার এই প্রথা নিষিদ্ধ করে তাহলে আমরা প্রেসিডেন্ট অফিসে জোর করে ঢুকে পড়ে তার প্রতিবাদ করবো।" কথাগুলো বলছিলেন সিয়েরা লিওনের একজন নারী `হাজাম` মেমিনাতু তুর। মেয়েদের খৎনা করানো তার পেশা।
আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এখনো চলছে মেয়েদের খৎনা, যাকে ইংরেজিতে সংক্ষেপে বলা হয় `এফজিএম` বা ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন। সারা বিশ্বে `এফজিএম` করানো হয়েছে এমন জীবিত নারীর সংখ্যা ২০ কোটির বেশি। অনেক আফ্রিকান দেশেই এখন তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে সিয়েরা লিওনে এখনো এটি চালু আছে।
"আমরা প্রেসিডেন্টের অফিসে ঢুকে প্রতিবাদ করবো। তারা জানে যে এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য। তা ছাড়া সরকারের অনেকেই আমাদের গোপন সংগঠনে আছে। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন মেমিনাতু, যিনি শত শত মেয়ের এফজিএম করিয়েছেন।
সিয়েরা লিওনের অধিকাংশ মেয়েরই এফজিএম হয়েছে। কিন্তু এটা যে একটা নিন্দিত বা যন্ত্রণাদায়ক প্রথা, বা এতে যে মেয়েদের এমনকি মৃত্যুও হয়ে থাকে - এসব কিছুই মানতে রাজী নন ৫৬ বছর বয়স্ক এই নারী।
তিনি বলেন, "এগুলো সব মিথ্যে কথা। এটা মেয়েদের জন্যও ভালো। যে মেয়ের খৎনা করানো হয়নি সে এক পুরুষে সন্তুষ্ট থাকতে পারে না। কিন্তু এটা করানো হয়েছে এমন মেয়েরা যৌনজীবনে সন্তুষ্ট থাকে, একটি মাত্র পুরুষের সাথে সারা জীবন থাকে।"
আফ্রিকায় এফ জি এমের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও হয়েছে। কিন্তু গোপনে এ প্রথা চালু আছে বহু দেশেই। এফজিএম করানো হয়েছে এমন মেয়েরা অনেকেই পরবর্তী জীবনে তাদের যন্ত্রণা, ও কষ্টের কথা বলেছেন।
তবে ফ্রিটাউনের এক বস্তিতে তার ঘরে ঝোলানো নিজের মেয়ের ছবি দেখিয়ে মেমিনাতু বলেন, "আমার মেয়ের এই অপারেশন করানো হয়েছে। কিন্তু সে তো ভালো আছে, কলেজে পড়ছে। আমরা মেয়েদের ব্যথা দিই না, এটি একটি মহান এবং প্রাচীন ঐতিহ্য" বলেন তিনি।
প্রতি খৎনা থেকে তিনি পান ১৮০ ডলারের মতো। কিন্তু সিয়েরা লিওনের সরকার যদি সত্যি এ প্রথা নিষিদ্ধ করে দেয় তাহলে তিনি কি করবেন? "তাহলে সরকারের আমাদের করার মতো একটা কিছু কাজের সুযোগ করে দিতে হবে"-একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলেন মেমিনাতু।
সূত্র : বিদেশী পত্রিকা অবলম্বনে।
