ঢাকা, বৃহস্পতিবার ০২, মে ২০২৪ ১৭:৪৩:১৫ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

গণপরিবহনে ৯৪ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪.কম

প্রকাশিত : ০৭:৩১ পিএম, ৬ মার্চ ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ১০:৪৫ পিএম, ৮ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার

গণপরিবহনে ৯৪ শতাংশ নারী যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ৮১ শতাংশ নারী চুপ থাকেন এবং ৭৯ শতাংশ আক্রান্ত হওয়ার স্থান থেকে সরে আসেন। দেশে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ না থাকা, বাসে অতিরিক্ত ভিড়, যানবাহনে পর্যাপ্ত আলো না থাকা, তদারকির অভাবে নারীদের ওপর যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটছে।

 

ব্র্যাকের এক গবেষণায় এমন তথ্য ওঠে এসেছে। ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে জুন-এই তিন মাস গবেষণার সময়কাল। এতে নগর, উপনগর ও গ্রামাঞ্চলের ৪১৫ জন নারী তাদের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। সেই আলোকে ব্র্যাক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সময়ের সাথে সাথে নারীরা আজ আরো অধিক সংখ্যায় প্রতিদিন ঘরের বাইরে বের হয় এবং রাস্তাঘাট ও গণপরিবহনে পুরুষের পাশাপাশি ভ্রমণ করছেন। তারপরও যৌন হয়রানির ঝুঁকি তাদের হ্রাস পায়নি। এর ফলে নারীরা প্রতিদিন ঘর থেকে বের হচ্ছেন পুরুষের যৌন সহিংসতার দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে।

 

সমীক্ষায় ওঠে এসেছে, গণপরিবহনে যৌন হয়রানির ঘটনা বেশি ঘটে। সড়কে হাঁটা-চলার সময় নারীদের মৌখিক হয়রানি হতে হয়। তাদের দিকে তাকিয়ে সেক্সি ইত্যাদি টিটকারি ছুঁড়ে দেয়; তাদের উদ্দেশে শিস দেওয়া, চুম্বন বা অশালীন শব্দ ব্যবহার; ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে মোবাইল নাম্বার, ফেসবুক, টুইটারের ঠিকানা চাওয়া; পীড়নমূলক ভাষা প্রয়োগ করে তাদের সাথে কথা বলা; তাদের পোশাক দৈহিক বৈশিষ্ট্য বা চেহারা নিয়ে খারাপ মন্তব্য করা; তাদের বান্ধবী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া, যৌন জীবন নিয়ে প্রশ্ন করা বা যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে চাওয়া। সড়কে মোখিক হয়রানি হলেও গণপরিবহনে শারীরিক হয়রানি হতে হয়।

 

উত্তরদাদাতারা জানিয়েছেন, ইচ্ছাকৃত স্পর্শ করা, চিমটি কাটা, কাছে ঘেঁষে দাঁড়ানো, আস্তে ধাক্কা দেওয়া, নারীদের চুল স্পর্শ করা, কাঁধে হাত রাখা, হাত, বুক বা শরীরের অন্যান্য অংশ দিয়ে নারীর বক্ষস্থল আক্রান্ত করা, নারীর একান্ত ব্যক্তিগত অংশে হাত রাখা, নিজের যৌনাঙ্গ নারীর সামনে উন্মুক্ত করে বা স্পর্শ করে।

 

প্রতিবেদনে গণপরিবহন ব্যবহারকারী উত্তরদাতাদের ৩৫ শতাংশ জানিয়েছেন, তারা ১৯ থেকে ২৫ বছর বয়সী পুরুষদের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। প্রায় ৫৯ শতাংশ উত্তরদাতা ২৬ থেকে ৪০ বছর বয়সী উত্যক্তকারী চিহ্নিত করেছেন। প্রায় ৬৬ শতাংশ নারী যৌন হয়রানীকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ৪১ থেকে ৬০ বছর বয়সী পুরুষদের। যা কিছুটা হলেও উদ্বেগের বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

নারী পথচারীদের মধ্যে ৪২ শতাংশ উত্তরদাদা বলেছেন, তারা ১৯ থেকে ২৫ বছর বয়সী পুরুষদের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। প্রায় ৫০ শতাংশ এ ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে ২৬ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের দ্বারা। প্রায় ৪৬ শতাংশকে যৌন হয়রানি করেছে ৪১ থেকে ৬০ বছর বয়সীরা এবং ৮ শতাংশ উত্তরদাদা ষাটোর্ধ্বদের দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন। পাঁচ ধরনের বয়সীদের মধ্যে নারী পথচারীদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ২৬ থেকে ৪০ বছর বয়সী যৌন হয়রানিকারীরা।

 

‘নারীর জন্য যৌন হয়রানি ও দুর্ঘটনামুক্ত সড়ক’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ব্র্যাক। গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন ব্র্যাকের জেন্ডার জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি কর্মসূচির প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর হোসনে আরা বেগম ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) রির্সাচ অ্যাসোসিয়েট কবিতা চৌধুরী।

 

গবেষণা পরিচালনা করেছেন অধ্যাপক সৈয়দ সাদ আন্দালিব, অধ্যাপক সিমিন মাহমুদ, ফাহমিদা সাদিয়া রহমান এবং কবিতা চৌধুরী।