নারীর মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার
অন্তরা বিশ্বাস
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০২:৫৭ পিএম, ২৫ মে ২০২২ বুধবার
প্রতীকী ছবি
আমাদের সমাজে নানা বয়সী নারী-পুরুষ নানা ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগছে। এসব মানসিক সমস্যার সমাধার হাতের কাছে থাকলেও অনেকেই তা জানেন না। এ থেকে উত্তরণের উপায় তারা বের করতে পানে না। নারীদের মানসিক সমস্যা সমাধানের জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সিল সেন্টার।
নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য সেবায় ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের উদ্যোগে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে ২০০৯ সালে ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সিল সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সেন্টারে সহিংসতার শিকার নারীরা মনো-সামাজিক কাউন্সিলিং সেবার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকেন। ঢাকাসহ নয়টি বিভাগীয় জেলায় রিজিওনাল ট্রমা কাউন্সিলিং সেন্টার রয়েছে। এগুলো হলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রংপুর, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রাজশাহী। ময়মনসিংহে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ঢাকায় তিনজন ক্লিনিক্যাল সাইক্লোজিস্ট এবং ঢাকার বাইরে রিজোনাল সেন্টারগুলোতেও ক্লিনিক্যাল সাইক্লোজিস্টের মাধ্যমে সেবা দেয়া হয়।
দুইভাবে এ সেন্টারগুলো কাজ করে। মানসিক স্বাস্থ্যসেবার জন্য তারা কাউন্সিলিং করে এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এখানে সরাসরি, টেলিফোন এবং অনলাইনে কাউন্সিলিং করা হয়ে থাকে। প্রশিক্ষণগুলো তারা বিভিন্ন কর্মশালার মাধ্যমে দেয়। এগুলো মনোসামাজিক কাউন্সিলিং দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ নামে অন্তর্ভূক্ত। প্রশিক্ষণগুলো হলো- কাউন্সিলিং সেবার উপর সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ, কাউন্সিলিংয়ের মৌলিক দক্ষতার প্রশিক্ষণ, সাপোর্টিভ কাউন্সিলিং দক্ষতার প্রশিক্ষণ এবং মোটিভেশনাল কাউন্সিলিং দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ।
কাউন্সিলিং সেবার উপর সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণে কাউন্সেলিংয়ের মূল বিষয়গুলো আলোচনা করা হয়। পাঁচ দিনব্যাপী কাউন্সেলিংয়ের মৌলিক দক্ষতার প্রশিক্ষণে মনোসামাজিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবিদের কাউন্সেলিং-এর মৌলিক দক্ষতা বৃদ্ধি করা হয়। পাঁচ দিনব্যাপী সাপোর্টিভ কাউন্সিলিং দক্ষতার প্রশিক্ষণ মূলত শিক্ষকদের দেয়া হয়।
মোটিভেশনাল কাউন্সেলিং দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণে সমাজের ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে উন্নত জীবনে উদ্বুদ্ধ করা হয়।
প্রশিক্ষণগুলোতে সাধারণত সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করে। যেমন- ধর্মীয় নেতা, ইমাম, স্কুল-কলেজের শিক্ষক, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, এনজিও কর্মী। তরুণদেরও এখানে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কেননা তরুণরাই আগামি দিনে নেতৃত্ব দেবে এবং তারা সবকিছুতে সক্রিয় থাকে।
অনেক সময় সেন্টার সরকারি-বেসরকারি এবং বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার সাথেও কাজ করে। যেমন ব্র্যাক, ইউএনএফপিএ, ইউনিসেফ কিংবা অন্যান্য এনজিও অংশগ্রহণকারী সংগ্রহ করে এবং সেন্টার তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের সাবেক প্রকল্প পরিচালক ড. আবুল হোসেন বলেন, ‘আমাদের চারপাশে সমস্যাগ্রস্থ মানুষ থাকেন। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীরা কোনো না কোনোভাবে সমস্যাগ্রস্থ মানুষগুলোর সান্নিধ্যে থাকেন। তাদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা যাতে সহজে চিহ্নিত করতে এবং সাহায্য করতে পারে এ জন্য প্রশিক্ষণগুলো তাদের দেয়া হয়ে থাকে।
এখানে সাধারণত ভয়, শুচিবায়ুতা, অস্থিরতা, বিষন্নতা, দু:শ্চিন্তা, পোস্ট ট্রমাটিক, স্ট্রেস ডিজঅর্ডার, আত্নহত্যা প্রবণতা, অপরাধবোধ, আচরণতগত বৈকল্য, মৃত্যুভীতি, অনিদ্রা প্রভৃতি বিষয়ে সেবা দেয়া হয়। কাউন্সেলিং সাধারণত ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও দলীয়ভাবে করা হয়ে থাকে।
যখন কোনো নারী কোনো কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকেন এবং তিনি বুঝতে পারেন না কী করবেন কোথায় যাবেন, কে তাকে সাহায্য করতে পারে ইত্যাদি পরিস্থিতিতে ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টারকে তিনি পাশে পাবেন।
এ সেন্টারের প্রধান এবং ক্লিনিক্যাল সাইক্লোজিস্ট ইসমত জাহান বলেন, ট্রমা কাউন্সিলিং কারো সমস্যা পুরোপুরি সমাধান করে দেবে এমন নিশ্চয়তা দেয় না। তবে কার সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যেতে পারে এবং তিনি কিভাবে ভালো থাকবেন কিংবা তার সমস্যাগুলোর সহজ সমাধান বের করতে পারেন সে সব বিষয়ে ইতিবাচকভাবে সাহায্য করে থাকে।
তিনি আরো বলেন, আমরা চেষ্টা করি মানুষ যাতে মানসিকভাবে ভেঙে না পড়েন এবং নিজেকে নি:শেষ করে না ফেলেন সে জন্য তাদের নানাভাবে সহায়তা করি। আমাদের প্রশিক্ষণগুলোতেও এ রকম ফোকাস থাকে।
এখানে যে কোনো বয়সের নারী, শিশু ও কিশোরি এবং বারো বছর বয়সের নিচে যে কোনো কিশোর সেবা নিতে পারবে।পুরুষরা পারিবারিক সমস্যার সমাধান নিতে পারবেন তবে ব্যক্তিগত কোনো সমস্যা হলে তারা এ সেবা নিতে পারবেন না।
সরকারি ছুটির দিন ছাড়া রোববার থেকে বৃহস্পতিবার প্রত্যেক কর্মদিবসে সকাল নয়টা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত সেন্টার খোলা থাকে। টেলিফোন এবং সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে সেবা প্রদানের সময় নির্ধারণ করা হয়। এখানে বিনামূল্যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হয়।
