ঢাকা, সোমবার ২৯, এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৪১:০৬ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

রমা চৌধুরীর জন্য ভালোবাসা

সালেহা ইয়াসমিন লাইলী

উইমেননিউজ২৪.কম

প্রকাশিত : ০৮:১৬ পিএম, ১১ মার্চ ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ০৮:২০ পিএম, ২৯ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার

আমাকে যখন জানানো হলো আর্ন্তজাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে কীর্তিমতী নারী অ্যাওয়ার্ডের জন্য আমি মনোনিত হয়েছি, আমি নিজে কিছুটা অবাকই হয়েছিলাম। কেউ কোনোদিন আমার কাজের প্রশংসা তো দূরের কথা আমার কাজে কেউ খুশি হয়েছে এমন কাউকে খুঁজে পাইনি। শুধু যে মানুষগুলোর সংকট নিয়ে লিখেছি তারা তাদের সংকট থেকে মুক্ত হোক বা না হোক অনেক আপন করে ভেবেছে আমাকে। তাদের কথাগুলো আমার দ্বারা সকলে জানতে পেরেছে বলে আমার মাথায় হাত রেখে আর্শিবাদও করেছে। এর বাইরে কিছু প্রত্যাশা কারো কাছেই আমার ছিল না। কিন্তু অ্যাওর্য়াড! না বিস্ময় কাটছিলই না। তখন মনে মনে ভাবছিলাম আমাকে যখন মনোনিত করা হয়েছে তখন এই অ্যাওয়ার্ড বিশেষ কিছু হতেই পারে না।

নির্ধারিত দিন যখন এগিয়ে আসছিল তখন প্রতিষ্ঠানটি ফোনে খোঁজ খবর জানাতে গিয়ে জানালো আমার পাশাপাশি আরো দুইজন নারীকেও অ্যাওয়ার্ড প্রদান করবে। আমি তাদের নাম ও পরিচয় জানতে চাই কিছু বালখিল্যতায়। প্রোগ্রাম ম্যানেজার যখন রমা চৌধুরীর নামের সাথে আরো একজনের নাম বললেন তখন আমি দ্বিতীয় জনের নাম শুনতেই পাইনি। বেশ খানিকটা সময় পরে তিনি যখন বললেন, আপনি শুনতে পাচ্ছেন তো, কবে আসব? আমি ‘সরি‘ বলে তার কাছে আবারো জানতে চেয়েছিলাম তিনি এতোক্ষণ কি কি আলাপ করেছেন আমি ঠিক শুনতে পাইনি। তিনি ফোন নেটওয়ার্ককে ভৎসনা করে আবারো বলতে থাকলেন। আমি এবারো রমা চৌধুরীর পরের কথাগুলো গুলিয়ে ফেললাম। বাধ্য হয়ে তিনি পরে ফোন দেবেন বলে ফোন রেখে দিলেন।

রমা চৌধুরীকে যে অ্যাওর্য়াড দেয়া হয়েছে আমিও সেই অ্যাওয়ার্ড পাবো ভাবতেই কেমন যেন উচ্চতায় নিজেকে ভাবতে থাকলাম। আবার নিজের তুচ্ছতায় লজ্জাও পাচ্ছিলাম। নিশ্চয় কর্তৃপক্ষ কোনো ভুল করে আমাকে রমা চৌধুরীর পাশে স্থান দিয়েছে, এটা একবার তাদের জানানো দরকার। মনে তাড়না বোধ করতে থাকলাম।


রমা চৌধুরী একজন মুক্তিযোদ্ধা। একজন শিক্ষক। মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও লেখক। তিনি নিজেই একটি দেশ। মুক্তিযুদ্ধে যে দেশ লন্ডভন্ড হয়েছে, পুরোটা জীবন ধরে তিনি নিজেকে গড়িয়েছেন। মানুষকে পড়িয়েছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬১ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রথম নারী স্নাতকোত্তর।

মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি শিক্ষকতা করতেন। যুদ্ধকালীন সময়ে পাকহানাদাররা তাঁর বাড়িতে হামলা চালিয়ে তার সম্ভ্রমহানী করে। এরপর তিনি পালিয়ে প্রাণ বাঁচান। যুদ্ধ শেষে তার ২ সন্তান মারা যায়। পরবর্তী সময়ে শেষ অবলম্বন সন্তানটিকেও হারান। দেশ স্বাধীনের পর থেকে তিনি জুতা পায়ে পরেন না। খালি পায়ে হাঁটেন। বই লেখেন। তাঁর ২০টির বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে। নিজের লেখা বই খালি পায়ে হেঁটে হেঁটে ফেরি করে বিক্রি করে পেট চালান তিনি।

রমা চৌধুরী আমার অ্যাওয়ার্ডকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন। তিনি মঞ্চে দাঁড়িয়ে কেঁদে বলেছিলেন যেমন দেশ তিনি আশা করেছেন স্বাধীনতার এতো বছর পরও দেশটিকে সেভাবে পাননি। তাঁর অ্যাওয়ার্ড লাগবে না, সুন্দর একটি দেশ চাই।

রমা চৌধুরীর জন্য ভালোবাসা। তিনি তাঁর স্বপ্নের দেশ যেন দেখে যেতে পারেন এটুকু প্রার্থণা তাঁর জন্য।

সালেহা ইয়াসমিন লাইলী : লেখক সাংবাদিক