ঢাকা, রবিবার ০৫, মে ২০২৪ ২১:৩৯:৫৫ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

বাসা-বাড়িতেই নির্যাতনের শিকার ৯৫ শতাংশ শিশু

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৩০ পিএম, ৮ জুন ২০২২ বুধবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

প্রায়শই দেশের বিভিন্ন স্থানে শিশু নির্যাতন ও নিপীড়নের খবর শুনতে পাওয়া যায়। দেখতে পাওয়া যায় খবরের পাতায়। তবে পত্রিকায় বা খবরে আমরা যা দেখি। বাস্তবে সেই সংখ্যা আরও বেশি।

সম্প্রতি এমন তথ্যই উঠে এসেছে বেসরকারি সংস্থার একটি জরিপে। জরিপের তথ্যমতে, নিজের বাসা বাড়িতেই নানাভাবে নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয় ৯৫ শতাংশ শিশু। এ ছাড়াও ছেলে শিশুদের তুলনায় মেয়ে শিশুরা বেশি নির্যাতনের শিকার হয়।

মঙ্গলবার (৭ জুন) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় ‘বাংলাদেশে শিশুর প্রতি সহিংসতা পরিস্থিতি’ শীর্ষক জরিপের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর, মন্ত্রণালয় এবং বেসরকারি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার উপস্থিতিতে গবেষণার মূল বিষয় উপস্থাপন করা হয়।

সভায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য স্থানীয় সরকার পর্যায়ে শিশু বাজেটে ১০ শতাংশ বরাদ্দের দাবি জানান। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে শিশুর ব্যবহার বন্ধের ওপরও জোর দেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

বেসরকারি সংস্থা ইনসিডিন বাংলাদেশ জুন ২০২০ থেকে মে ২০২১ পর্যন্ত মোট ১১টি জেলা ৫ হাজার ৭৪ জন শিশুর ওপর এই জরিপ পরিচালনা করে। এদের মধ্যে শহরের ৩ হাজার ১৩৪ জন শিশু এবং গ্রামের ১ হাজার ৯৪০ জন। জেলাগুলো হচ্ছে— ঢাকা, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, কুমিল্লা ও রাঙামাটি।

জরিপের তথ্যমতে শতকরা ৯৫ দশমিক ৮ জন শিশু নানাভাবে ঘরেই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি নিপীড়নের শিকার হয় বাবা-মা ও অভিভাবকদের দ্বারা।

প্রায় শতকরা ৮১ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বলেছেন— সন্তান যদি বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়, তাহলে তারা শিশুকে শারীরিক শাস্তি দেওয়ার পক্ষে।

শিশুকে শারীরিকভাবে অত্যাচার করার মধ্যে পড়ে— হাত, জুতা, বেল্ট, বোতল দিয়ে মারা, লাথি মারা, টানাহেঁচড়া করা, চুল টানা, দাঁড় করিয়ে রাখা, হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রাখা, শরীর পুড়িয়ে দেওয়া, অতিরিক্ত শ্রম করানো এবং ঝাঁকি দেওয়া, ছুড়ে ফেলা, চিমটি দেখানো ইত্যাদি। এক্ষেত্রে ছেলেশিশুরা মেয়ে শিশুদের চেয়ে বেশি শারীরিক শাস্তি ভোগ করে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ঘরের বাইরে, কাজের জায়গা বা অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানে শিশু যতটা নির্যাতিত হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি নির্যাতিত হচ্ছে নিজ বাড়িতে। প্রতিবন্ধী শিশুরাও শুধু প্রতিবন্ধীতার কারণে সমাজে অবহেলিত হচ্ছে।

জরিপে অংশগ্রহণকারী শতকরা ৯৫ দশমিক ৩ জন শিশু জানিয়েছে যে— তারা জীবনের কোনো না কোনো সময় ঘরে, বাইরে, স্কুলে বা কর্মক্ষেত্রে সহিংসতার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে শতকরা ৯৬ দশমিক ২ জন মেয়েশিশু এবং শতকরা ৯৪ দশমিক ৫ জন ছেলেশিশু।

শতকরা ৫৫ জন শিশু জানিয়েছে— তারা পরিবারের ভেতরেই যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে। গৃহে মেয়েশিশুর (৫০%) চেয়ে ছেলেশিশুই (৬০%) বেশি যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে।

এদিকে পর্নোগ্রাফিতেও শিশুর প্রবেশাধিকার তুলে ধরা হয়েছে জরিপে। তাতে দেখা যায়— শতকরা ৩৪ জন শিশু বলেছে তারা পর্নোগ্রাফি দেখে। শতকরা ২৬ জন মেয়েশিশু বলেছে তারা আত্মীয়দের সঙ্গে পর্নোগ্রাফি দেখছে। শতকরা ১৪ দশমিক ৪ জন মেয়েশিশু দেখেছে অনাত্মীয়দের সঙ্গে। এর চেয়েও ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে— শতকরা ৭৫ দশমিক ১ জন শিশু, যাদের মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট কানেকশন আছে তারা পর্নোগ্রাফি দেখছে। শিশুদের এভাবে পর্নোগ্রাফি দেখার মাধ্যমে তাদের যৌন হয়রানির আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়।

জরিপ প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে বলা হয়েছে, নীরবতার সংস্কৃতি ভাঙতে হবে। শিশুর প্রতি যেকোনো ধরনের নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে হবে। শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। শিশুর প্রতি যে অপরাধ করবে, শিশুকে নির্যাতন করবে তাকে ভালোভাবে বোঝাতে হবে এবং প্রয়োজনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। কমিউনিটি ভিত্তিক শিশু সুরক্ষা পলিসি গ্রহণ করতে হবে।