ঢাকা, শনিবার ০৪, মে ২০২৪ ২:৫৫:৩৮ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

রোজা লুক্সেমবার্গের নির্বাচিত রচনা: অনুবাদ: অদিতি ফাল্গুনী

(ভূমিকা: পিটার হুদিস এবং কেভিন বি. এন্ডারসন)

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:৫৭ পিএম, ২৯ জুন ২০২২ বুধবার

রোজা লুক্সেমবার্গের নির্বাচিত রচনা: অনুবাদ: অদিতি ফাল্গুনী

রোজা লুক্সেমবার্গের নির্বাচিত রচনা: অনুবাদ: অদিতি ফাল্গুনী

পর্ব- ১৪: দ্বিতীয় অধ্যায়- আদিম সাম্যবাদের বিলুপ্তি: প্রাচীন জার্মান এবং ইনকা সভ্যতা হয়ে ভারত, রাশিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিবরণ:

সাধারণত: মার্ক সম্প্রদায়ের নেতৃত্বের দায়িত্বে থাকতেন গ্রামের ভূস্বামী বা শাসনকর্ত্তা। কোথাও আবার মার্ক সম্প্রদায়ের প্রধানকে  ‘মার্ক প্রভু‘ বা ‘সেন্টেনের‘ (‘কেন্দ্রীয় ব্যক্তি‘) ও বলা হতো। মার্ক সম্প্রদায়ের অন্য সদস্যরা এই প্রধানকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসাতেন। এই নির্বাচন শুধুই সম্মানের বিষয় ছিল না বরং ভোটের অধিকার যাদের ছিল, তাদের জন্য ভোট দান করাটা একটি পালনীয় অবশ্য কর্তব্যও ছিল। যারা ভোট দানে অংশ নিত না, তাদের আইনী শাস্তি পেতে হতো। তবে সময়ের সাথে সাথে মার্ক সম্প্রদায়ের নেতার পদটি কিছু নির্দিষ্ট পরিবারের বংশগত অধিকারের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মার্ক প্রধান পদটির সাথে এতটাই ক্ষমতা ও উপার্জন জড়িয়ে থাকতো যে এই পদটি কেনার জন্য অর্থ বা ভূমি অহরহই প্রদান করা হতো। খুব অল্প সময়ের ভেতরেই মার্ক প্রধানের এই পদটি একটি সম্প্রদায়ে বিশুদ্ধ গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত পদ থেকে সম্প্রদায়কে নিয়ন্ত্রণ করার একটি মাধ্যম বা পদ হয়ে দাঁড়ালো। মার্ক সম্প্রদায়ের সূচনা লগ্নের শুভ দিনগুলোয় মার্ক নেতা মূলত: তাঁর সম্প্রদায়ের সবার সম্মিলিত ইচ্ছা বা আকাঙ্খা পূরণকারী ব্যতীত অন্য কিছু ছিলেন না। মার্ক সম্প্রদায়ের সমাবেশেই সম্প্রদায়ের সব কাজ, যেমন, বিবাদ-বিসম্বাদ মিটানো থেকে অন্যায়ের দন্ড প্রদান নির্দ্ধারণ করা হতো। কৃষি কাজের গোটা ব্যবস্থা, সম্প্রদায়ের চলাচল করার পথ এবং দালান-কোঠা, মাঠ ও গ্রামের পুলিশ বা কোতোয়াল বাহিনী...সবকিছুই মার্ক সম্প্রদায়ের সভায় সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্দ্ধারিত হতো। সম্প্রদায়ের ‘খেরো খাতায় হিসাব-নিকাশের কাজও এই মার্ক সম্প্রদায়ের সমাবেশেই করা হতো। আর এই খেরো খাতা অনুসারেই মার্ক সম্প্রদায়ের সব ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজ পরিচালিত হতো। সাধারণত: মার্ক সম্প্রদায়ের নেতা এবং নেতার আশপাশের মানুষ বা পারিষদবর্গই সম্প্রদায়ের ভেতর শান্তি রক্ষা ও ন্যায়বিচার পরিচালনার কাজ করে থাকতো। সম্প্রদায়ের ভেতরকার এই ‘ন্যায়াধিকার‘ বা ‘আদালত‘-ই মৌখিক ও প্রকাশ্য বিচার প্রদানের কাজ করতো। শুধুমাত্র মার্ক সম্প্রদায়ের সদস্যরাই ন্যায়পীঠ বা আদালতের কাজে অংশ নিতে পারত; বিদেশীদের সেই অধিকার দেওয়া হতো না। মার্ক সম্প্রদায়ের নেতাদের শপথ নিতে হতো এবং একে অন্যের স্বাক্ষী হিসেবে কাজ করতে হতো যেহেতু যে কোন জরুরি সময়ে, যেমন, অগ্নিকান্ড বা শত্রুর আক্রমনের মুখে মার্ক সম্প্রদায়ের একে অন্যকে ভাইয়ের মত পাশে থেকে এবং গভীর আস্থা ও আনুগত্যের সাথে সাহায্য করতে হতো। মার্ক সম্প্রদায়ের সদস্যরা তাদের সেনাবাহিনীতে নিজেরাই নিজেদের বাহিনী গঠন করতো এবং নিজেরাই নিজেদের রক্ষা করতো। শত্রুর বর্শার মুখে সহযোদ্ধাকে ফেলে রেখে যাবার অনুমতি কারোরই ছিল না। ঘরের সিঁধ কেটে চুরি বা এজাতীয় কোন অপরাধ হয় মার্ক সম্প্রদায়ের কারো ঘরে সংগঠিত হতো অথবা যদি মার্ক সম্প্রদায়ের সদস্য কোন বহিরাগতের সাথে এমন অন্যায় করতো, তবে গোটা মার্ক সম্প্রদায় সংহতি নিয়ে দাঁড়িয়ে যেত। অতিথিদের আশ্রয় দেওয়া এবং অসহায় দরিদ্রদের সাহায্য করাটাও মার্ক সদস্যদের অবশ্য পালনীয় কর্তব্য ছিল। প্রত্যেক মার্ক সম্প্রদায়ই একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করতো এবং স্যাক্সনদের মত খানিকটা দেরিতেই- খ্রিষ্টীয় নবম শতকে জার্মানদের ভেতরেও খ্রিষ্ট ধর্ম প্রচারের পরই কেবল মার্ক সম্প্রদায় একটি ধর্মমন্ডলীর চেহারা লাভ করে। শেষত: মার্ক সম্প্রদায় গ্রামের তরুণদের জন্য প্রথামাফিক এক স্কুল শিক্ষক রাখা শুরু করে।

প্রাচীন জার্মানীর এই মার্ক সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার চেয়ে সরল ও সমন্বয়ধর্মী কিছুর কথা কল্পনা করাও কঠিন। স্পষ্টত:ই আমাদের রয়েছে সমাজ জীবনের গোটা প্রক্রিয়া। সমগ্রের ভেতরে যেমন অংশ ঢোকে, সেভাবেই একটি কঠোর পরিকল্পনা এবং শক্ত-পোক্ত সংগঠন সমাজের প্রতিটি ব্যক্তিকে তার যাবতীয় কাজ সমেত সমাজের ভেতরে একটি অংশ হিসেবে ঢোকায়। প্রাত্যহিক জীবনের জরুরি নানা প্রয়োজন এবং প্রত্যেকের প্রয়োজনের বা চাহিদার সমানভাবে পূরণই একটি সামাজিক সংগঠনের সূচনা ও সমাপ্তি বিন্দু। প্রত্যেকেই প্রত্যেকের জন্য কাজ করে এবং সমবেতভাবে সবাই সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ব্যক্তির উপর সমগ্রের এই ক্ষমতা কোথা থেকে শুরু হলো এবং কিভাবেই বা সমাজ নামে সংগঠনের জন্ম? জমি ও সমাজের সাম্যবাদ ব্যতীত এটা কিছুই না; আরো সঠিক ভাবে বলতে হলে সমাজে যারা কাজ করে বা কর্মী বাহিনীর উৎপাদনের উপকরণগুলোর উপরে সবার সর্বজনীন অধিকারই এই আদিম সাম্যবাদের মূল কথা। সাম্যবাদী, কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির গতানুগতিক চারিত্র্য আরো সহজ ভাবেই নির্দেশ করা সম্ভব যদি কেউ তুলনামূলক ভাবে একটি আন্তর্জাতিক পরিসরে এই বিষয়টি নিয়ে পড়া-শোনা করে আর যাতে করে এই বিষয়টি উৎপাদনের বৈশি্বক আঙ্গিকে এবং তার যাবতীয় বৈচিত্র্য ও নমনীয়তার সাথে বোঝা যায়। (চলবে)