করোনার নতুন উপসর্গ সর্দি-কাশি-জ্বর-গলা ব্যথা
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০১:৫৮ পিএম, ১৪ জুলাই ২০২২ বৃহস্পতিবার
ফাইল ছবি
এবারের করোনা সর্দি কাশিতেই সীমাবদ্ধ। করোনার এই নয়া ঢেউ ফুসফুসকে ছুঁতে পারছে না বলেই করোনা আক্রান্ত মানুষকে দূর্বল করতে পারছেনা। প্রধানমন্ত্রীর ব্যাক্তিগত চিকিৎসক ও এমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ একথা বলেছেন। তিনি বলেন, ডেল্টা সংক্রমণের দিনগুলির কথা শুনলে আজও হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে করোনা নিয়ে কাজ করা বহু চিকিৎসকের।
তিনি বলেন, ২০২০ ও ২১ সালে হাসপাতালকেই ঘরবাড়ি করে ফেলা হয়েছিলো, ডেল্টার দাপাদাপির দিনগুলির সঙ্গে এবারের করোনার তুলনাই হয় না। এবারে করোনা ছড়াচ্ছে ওমিক্রন প্রজাতির এক দুর্বল স্ট্রেইন বি এ ৪ এবং বি এ ৫। গত ১ জুন শুরু হয়েছে এবারের নয়া পর্ব।
ডা. আব্দুল্লাহ বলেন, এখন পর্যন্ত ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে এই প্রজাতির ভাইরাস ছুঁতে পারছে না বা ছুঁয়ে দেখছে না মানব ফুসফুসকে। করোনাভাইরাস টিকে থাকার লড়াইয়ে সে এবার বছরভর পরিবেশে থাকা ইনফ্লুয়েঞ্জা বি, রাইনো, আরএসভি ইত্যাদি ভাইরাসের ছদ্মবেশ ধরছে।
তিনি বলেন, এই ভাইরাসগুলির দৌরাত্যোই সর্দি-কাশি-জ্বর-গলা ব্যথা-গাঁটে গাঁটে ব্যথা প্রভৃতি ভোগান্তি হয়। ফলে এবারের করোনা সংক্রমণও সীমাবদ্ধ থাকছে নাক ও গলাতেই। শ্বাসনালীর উপরের অংশ বা আপার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্টে। তাই করোনার চারটি পর্বের মধ্যে এবার মৃত্যুহার ও হাসপাতালে ভর্তি সবচেয়ে কম। ডেল্টা স্টেইনের সময়ে কারও চেস্ট এক্স-রে দেখলে আজও চিকিৎসকদের বুক কেঁপে ওঠে। তখন দেখা যেত, বহু রোগীর দু’টি ফুসফুসই সংক্রমণে সাদা হয়ে গিয়েছে।
তিনি বলেন, এ আরডিএস হয়ে ফুসফুস ফেটে গিয়েছে এমন ঘটনাও ঘটেছে। সেখানে সিংহভাগ ওমিক্রন আক্রান্তের চেস্ট এক্সরেতে ফুসফুসে সংক্রমণের চিহ্নমাত্র নেই। এতটাই দুর্বল এর চরিত্র। কিছু ক্ষেত্রে উপসর্গ থাকলেও তা সাধারণ সর্দিজ্বর বা ইনফ্লুয়েঞ্জার লক্ষণেই সীমাবদ্ধ। সামান্য কয়েকটি ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি করতে বা অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। তাও সেটা করোনার জন্য নয়।
এদিকে মহাখালী বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. সাইদুল ইসলাম বলেন,করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে কোমরবিডিটিতে ভুগছিলেন করোনায় আক্রান্ত অধিকাংশ মৃত ব্যাক্তি। এদেরে মধ্যে কেউ ক্যান্সার, কিডনির অসুখ, কেউ সুগার বা হার্টের সমস্যায় ভুগছেন। এরই মধ্যে করোনা ধরা পড়ায় তাঁদের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সিসিইউ-এর এক সিনিয়র চিকিৎসক বললেন, এমন দিন গেছে আমাদের এখানে তিনজন করোনা পজিটিভ রোগীর মৃত্য্যু হয়েছে। বলার মতো বিষয় হল, কারও মৃত্যুর কারণ এখন আর করোনা নয়। করোনাভাইরাসে এখন ফুসফুস পর্যন্ত যাওয়ার ক্ষমতাই নেই। এর অন্যতম কারণ সবাই সচেতন হয়েছেন, পাশাপাশি করোনাটিকা নেওয়ার ফলে মৃত্যুর ঝুকিঁও কমেগেছে বলে তিনি মনে করেন।
ঢামেকের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক সহকারী অধ্যাপক ডা. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এখন কদাচিৎ করোনার কারণে ফুসফুসে সংক্রমণ দেখছি। সিংহভাগ ক্ষেত্রেই ভাইরাস ঘোরাঘুরি করছে নাক ও গলাতে। বিশিষ্ট ফিজিশিয়ান ডাঃ আরিফ হোসেন বলেন, খুব কম ক্ষেত্রে এবারের করোনা ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। তবে পুরনো অসুখবিসুখ থাকলে সাবধান থাকা ভালো। দুর্বল শরীরে করোনা বিপদ ডেকে আনছে। ঠিক এই কারণেই মাস্ক পরা দরকার।
ঢামেকের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের চিকিৎসকরা বলেন, অল্পবয়সিদের করোনা হলেও নিজস্ব প্রতিরক্ষা বর্মে রেহাই পাচ্ছে। কিন্তু ভাইরাসটি অত্যন্ত সংক্রামক হওয়ায় নিমেষে বড়দের মধ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে।
