দেশে দেশে ভাল্লুকের ছবি তোলেন যে প্রবীণ নারী
অনলাইন ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৯:২৬ পিএম, ২৩ জুলাই ২০২২ শনিবার
সংগৃহীত ছবি
জেনি হাইবার্ট নিজের বিবাহ বিচ্ছেদের কঠিন সময়ে যখন নিজের মনকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছিলেন তখন তিনি ফটোগ্রাফিকে বেছে নেন। মনের শান্তির জন্য স্বাধীন মত কাজ করতে চেয়েছিলেন তিনি। তখনো তিনি বুঝতে পারেননি এই ফটোগ্রাফির জন্য তাকে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বড় কিছু শিকারি প্রাণীর সামনে পড়তে হবে।
৭০ বছর বয়সী এই প্রবীণ নারী মঙ্গোলিয়াতে যান এবং মাইনাস ১৩ ডিগ্রী ফারেনহাইটে ১৯ মাইল হাঁটেন। তিনি আর্কটিকে যান এবং সেখানে তাকে মেরু ভল্লুকের তাড়া খেতে হয়। তিনি জাপান এবং পোল্যান্ডেও গেছেন। কিন্তু তার প্রিয় স্থান ফিনল্যান্ড - যেখানে তিনি ইউরোপের সবচেয়ে বড় শিকারি প্রাণী বাদামি ভল্লুকের ছবি তোলেন।
জেনি হাইবার্টের তোলা এই বাদামি ভল্লুকের ছবিটি ফটোগ্রাফিক অ্যালায়েন্স অব গ্রেট ব্রিটেনস ইন্টার ফেডারেশন এক্সিবিশনে দেখানো হয়। ছবিটিতে ভল্লুকটি তার শিকারকে মেরে খাওয়ার জন্য প্রস্তুত।
জেনি এই বছরেই দুই বার ফিনল্যান্ড সফর করেছেন বাদামি ভল্লুকের ছবি তোলার জন্য। জেনির চার সন্তান, ১০জন নাতি-নাতনি আর সেইসব নাতি-নাতনিদের ঘরে আরো দুইটি সন্তান আছে। জেনি সব সময় ছবি তুলতে ভালোবাসতেন। যখন তার বয়স ১১, তখন একবার বড় দিনের এক উৎসবে তাকে একটা ক্যামেরা উপহার দেয়া হয়। যখন তার বয়স ৬২ তখন তিনি নিজে একটা ডিজিটাল ক্যামেআ কেনেন।
জেনি যুক্তরাজ্যের মারগামে থাকেন। তিনি বলেন, আমি একটা কষ্টকর বিবাহ বিচ্ছেদের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। এরপর তিনি বিভিন্ন দেশে ফটোগ্রাফির জন্য সফর করা শুরু করেন। কিন্তু ছবি তুলে সেটা প্রদর্শনীতে দেয়া বেশ শ্রমের কাজ।
তিনি বলেন, আমি বলতে পারেন ১৬ ঘণ্টা লুকিয়ে ছিলাম। আমাকে লুকিয়ে থেকে ঘুমাতে হত। ভয়াবহ ঠাণ্ডা। আমার কাছে ছিল নয়টা ছোট মোমবাতি।
অবশেষে তার ধৈর্য সফলতার মুখ দেখে। এই ভল্লুকটা খুব সকালে আসে। তখন তুষারপাত হচ্ছিল এবং বরফে ঢেকে ছিল। এটা ছিল একটা অসাধারণ সময়। হরিণের মত ঐ মৃত প্রাণীকে খাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
ভল্লুকের ছবি তোলা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। জেনি একাধিকবার সেই ঝুঁকির মুখে পড়েছেন। ২০১০ সালে জেনি এবং ফটোগ্রাফারদের একটা ছোট দল আর্কটিকে ইয়টে করে ঘুরছিলেন। কয়েকদিন এভাবে থাকার পর তারা মাটিতে নেমে এলেন কিন্তু সেটা ছিল খুব অল্প সময়ের জন্য। তিনি বলেন, আমরা মেরু ভল্লুকের তাড়া খেলাম আর দৌড়াতে থাকলাম। ঐ অভিজ্ঞতা ছিল ভয়ঙ্কর।
২০১৬ সালে তিনি আরো একবার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন। তিনি মঙ্গোলিয়াতে যান কিন্তু তিনি জানতেন না সেখানে কি পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতে পারে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যে তিনি মেঝেতে শুয়ে ছিলেন।
জেনি বলেন, মনে হচ্ছিল আমি কত বোকা অথবা সহজ-সরল। প্রথম রাতে আমি বুঝতে পারছিলাম না কেন সেখানকার মানুষ থার্মাল এবং মাথায় টুপি পরে আছে।
জেনি দোভাষীর মাধ্যমে কাজাখদের সঙ্গে কথা বলতে সক্ষম হন। তিনি বলেন, তাদের জীবন খুব কঠিন তারপরেও তারা সবচেয়ে সুখি মানুষ বলে আমার মনে হয়েছে। শিশু এবং প্রাণীদের যেসব ছবি তিনি তুলেছেন সেগুলো তিনি খুব পছন্দ করেন।
জেনি বলেন, একটা ফটো ছিল এমন যে একটা উট তার বাচ্চাকে ঝড়ের কারণে হারিয়ে ফেলে। সে বাচ্চার জন্য কাঁদছিল আর খুঁজছিল - দৃশ্যটি ছিল হৃদয় বিদারক।
কাজাখদের অনেক ধন্যবাদ যে তারা সেই উটের বাচ্চাটি খুঁজে পেতে সক্ষম হয় এবং তার মায়ের কাছে পৌঁছে দেয়।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
