অাজকের পাইকারী ও খুচরা বাজারের হালচাল
সালেহীন বাবু
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ১১:১৬ এএম, ১ এপ্রিল ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ০৩:৫৪ পিএম, ১ এপ্রিল ২০১৮ রবিবার
নিঝুম রাতে যখন পুরো দেশবাসী ঘুমের দেশে, তখন রাজধানীসহ পুরো দেশের পাইকারী বাজারগুলোতে যেন কেনাবেচার হাট বসে। রাত থেকে শুরু করে ভোর হয়ে সকাল পর্যন্ত চলে এ বেচাকেনা। রাতের মধ্যেই মালামাল পরিবহনকারী ট্রাক, ভ্যান ঢুকে পড়ে পাইকারী বাজারগুলোতে। লোডিং আনলোডিং হওয়ার পর চলে কেনাবেচার ধুম।
একদিকে পাইকারী বিক্রেতা, আরেকদিকে খুচরা ক্রেতা। শুরু হয় বনিবনা। খুচরা ক্রেতারা অনেক হিসেব কসে বাজার করেন যেন তারা আবার বিক্রি করলে ভালো একটা লাভ পান। আর সাধারণ ক্রেতারা আবার খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে সব্জি, মাছ, মসল্ল, ফলমূল কিনে নেন।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় খুচরা বিক্রেতারা সাধারণ ক্রেতার কাছ থেকে বেশি দাম পণ্য নিচ্ছেন। সেক্ষেত্রে আবার নিত্য দিনের পণ্য সম্পর্কে একটা সম্যক ধারনা থাকলে ভাল হয় সাধারণ ক্রেতার জন্য। তাদের কথা মাথা রেখেই সরেজমিনে আমাদের পাইকারী ও খুচরা বাজারের আজকের দরদামের চিত্র।
পাইকারী সব্জি বাজারে আসতে শুরু করেছে হরেক রকমের রকমারী শাক–সবজি। আলু, লেবু, বেগুন, ঢেড়স, কাচামরিচ, চিচিংগা, লাউ, ধুন্দল, শিম, বেগুন, টমেটা, সজনা, পেপে, বরবটি থেকে শুরু করে কি নেই–সব্জি বাজারে। হরেক রকমের সব্জি।
একটা কথা বলে নেওয়া ভাল, পাইকারী বাজারে বিক্রেতারা বিক্রি করে পাললা হিসেবে। এক পাললা মানে ৫ কেজি। মূলত আপনি যদি পাইকারী বাজার থেকে ব্যক্তিগতভাবে কিনতে চান তাহলে নুন্যতম ৫ কেজি কিনতে হবে। তবে পাইকারী বিক্রেতাকে প্রভাবিত করতে পারলে সে অল্পও দিতে পারে।
পাইকারী বাজারে ছোট আলু, বড় আলু বিক্রি হচ্ছে পাল্ল প্রতি ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে আবার সেই আলু ১৫ থেকে–২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। যে পেঁয়াজের ঝাঝের হাসফাসে কিছুদিন আগেও মানুষ ছিল দিশেহারা সে পেঁয়াজের মূল্য এখন হাতের নাগালে। ৫ কেজির পাইকারী মুল্য ১১০ থেকে ১৪৫ টাকা পর্যন্ত। ইন্ডিয়ান পেয়াঁজের মূল্য ১১০ থেকে ১১৫ এর মধ্যে আর দেশী পেয়াঁজ ১৩০ থেকে ১৪৫ টাকার মধ্যে। যদিও খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারী বাজারে হরেক রকমের লেবুর গন্ধ। সে কারনে আবার দামেরও ভেদাভেদ রয়েছে। লেবু পাইকারী বাজারে শ মানে নুন্যতম ১০০ পিস হিসেবে বিক্রি হয়। শ প্রতি লেবু ভেদে ৪০০-৫০০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আবার ডজন বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে লেবু ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা হালি।
পেপে পাইকারী বাজারে বিক্রি হচ্ছে পাললা প্রতি ৬৫ থেকে ৭০ টাকা করে যা খুচরা বাজারে কেজি প্রতি ২০ টাকা করে। লাউ পাইকারী বাজারে প্রতি পিস ৩০ টাকা করে নিলেও বেশি পিস নিলে দাম ২০ থেকে ২২ টাকার মধ্যেই পড়ে। তবে খুচরা বাজারে আকার অনুসারে একই লাউ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা পর্যন্ত। ধুন্দল পাইকারী বাজারে পাললা প্রতি ১৫০ টাকা দরে যা খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শিম পাইকারী বাজারে ১১০ থেকে ১২০ টাকা পাললা বিক্রি হলেও ভাল শিম খুচরা বাজারে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। বেগুন পাইকারী বাজারে রকম ভেদে ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে লম্বা বেগুন ২০ থেকে ৩৫ টাকা ,গোল বেগুন ৩৫ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ঢেড়স পাইকারি বাজারে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা দরে বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা কেজি। করললা ১২০ টাকা পাইকারী বিক্রি হলেও খুচরা বিক্রি ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত। টমেটোর দাম এখন অনেকটাই কমে এসেছে পাললা প্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা ,খুচরা বাজারে ২০ থেকে ২৫ টাকা। আদা ভেদে কেজি প্রতি পাইকারী মুল্য ৭০ থেকে ৮০ টাকা যা খুচরা বাজারে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। রসুন ৪০ থেকে ৯০ টাকা কেজি পাইকারী দামে বিক্রি হলেও খুচরা বিক্রেতারা দাম হাকাচ্ছেন ৭০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। আপাতত কাচাবাজারের সম্যক ধারনা পাওয়া গেল।
চলে যাই মাছের বাজারে। মাছের দাম আজ স্থিতিশীল আছে। গরীবের আস্থা পংগাস মাছ পাইকারী বাজারে কেজি প্রতি ৯০ টাকা ,খুচরা বাজারে দাম ১০০ থেকে ১১০ টাকা। শিং মাছ কেজি প্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে পাইকারী বাজারে, খুচরা বাজারে যা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত।
মাছের রাজা ইলিশের মাথা গরম আজকেও। পাইকারী বাজারে সাইজ অনুযায়ী ৪০০ থেকে শুরু করে ৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে কেজি প্রতি ৮০০ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১১০০ টাকা কেজি। তেলাপিয়া মাছ পাইকারি বাজারে কেজি প্রতি ১০৫ টাকা থেকে ১১০ টাকা পর্যন্ত হলেও খুচরা বাজারে কেজি প্রতি ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। ছোট বড় বোয়াল পাইকারী বাজারে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে ৪০০ থেকে শুরু করে ৬০০ টাকা কেজি দরেও বিক্রি হচ্ছে। সরপুটি পাইকারী বাজারে কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা বিক্রি হলেও পাইকারী বাজারে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি। ছোট মাছের মধ্যে কাচকি মাছ পাইকারী ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি,খুচরা বাজারে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। পুটি মাছ ১০০ থেকে ১২০ টাকা পাইকারী মুল্য হলেও খুচরা বাজারে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা। বাহারি রকমের পাচমিশালি মাছের চাহিদা বাজারে বেশি থাকে। এগুলোর পাইকারী মূল্য ২০০ থেকে শুরু করে ৩০০ টাকার মধ্যে থাকলেও খুচরা বাজারে তা ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা কোজ।
গরুর মাংস কেজি ৪৮০ থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা,খাসির মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা ,কবুতরের জোড়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা,দেশি মুরগি ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা,পাকিস্তানী মুরগি ২৪০ থেকে ২৮০ দরে খুচরা বিক্রয় হচ্ছে। ডিম ১০০ প্রতি খুচরা মুল্য ৫৮০ থেকে ৬১০ টাকা যা খুচরা বাজারে প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ২৭ থেকে ৩০ টাকা হালি।
চালের বাজার গেল সপ্তাহের মতই স্থিতিশীল আছে। নাজিরশাইল চাল ৬৫ থেকে ৬৭ ,মিনিকেট (মানভেদে) ৬২ থেকে ৬৬ টাকা,স্বর্না ও পারিজ ৪৪ থেকে ৪৫টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
ক্ষেত্র বিশেষে, এলাকা ভেদে বাজার মূল্যে তারতম্য থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ অভিযাত এলাকায় জিনিসপত্রের মূল্য একটু বেশিই হাকায় খুচরা ব্যবসায়ীরা। আবার ঢাকার বাইরে দাম তুলনামুলক কমই থাকে।
