বিস্মৃতির অতলে চলে গেছেন বাংলার অগ্নিকন্যা বীণা দাস
অনলাইন ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০২:২১ পিএম, ২৭ আগস্ট ২০২২ শনিবার
বাংলার অগ্নিকন্যা বীণা দাস।
৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৩২। কলকাতার সিনেট হলে চলছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসব। মঞ্চে উপস্থিত আচার্য বাংলার গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসন ও আরও অনেক বিশিষ্ট অতিথি।
একে একে তাদের হাত থেকে মানপত্র নিচ্ছে কৃতি ছাত্র ছাত্রীরা, শেষদিকে মঞ্চে উঠে এলো কনভোকেশন গাউন পরিহিতা এক বঙ্গ তনয়া। গভর্নর করমর্দন করার জন্য যেই হাত বাড়িয়েছেন অমনি গাউনের ভেতর থেকে বের করলো রিভলভার। পরপর পাঁচটা গুলি...।
কিন্তু, একটা গুলিও জ্যাকসনের দেহ স্পর্শ করলো না। দেহরক্ষীরা নিমেষে ধরে ফেলে তাকে, তারপর সেই চিরাচরিত প্রশ্ন, কোথায় পেলে রিভলভার কে দিলো?
শত অত্যাচারেও মুখ খোলাতে না পেরে পুলিশ লক আপে হাজির করলো বাবা, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বেণীমাধব দাসকে যিনি নেতাজীর শিক্ষক ছিলেন। অর্থাত তিনি একবার মেয়েকে বুঝিয়ে বলুন মুখ খুলতে। সেই মেয়ে তখন পুলিশকে বললো, কেন শুধু শুধু বাবাকে আনলেন, উনি কি আমাকে বিশ্বাসঘাতক হতে বলবেন!
প্রথমে ডায়াসেশন ও পরে বেথুন কলেজে পড়া মেধাবী এই ছাত্রীটির জন্য আদালতে রোজই হাজিরা দিতেন মিশনারী সিস্টাররা। বিচার কালে তার বিবৃতি শুনে হৈচৈ পড়ে গেল শুধু এদেশে নয় বিলেতেও। এতো শুধুমাত্র বিবৃতি নয় , classic literature!
আদালতে সিস্টাররা তার দৃঢ়তা দেখে বিচারককে বললেন,
‘Just see, doesn't she looks like Madonna?’
তাদেরই অনুরোধে ফাঁসির বদলে হলো নয় বছরের সশ্রম কারাদণ্ড।
জেল থেকে মুক্তির পর তিনি কংগ্রেস দলে যোগ দেন এবং ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় আবার তিন বছরের জন্য জেলে যান।
স্বাধীনতার পর তিনি বিধায়ক নির্বাচিত হন এবং বিবাহ সূত্রে বিপ্লবী জ্যোতিষ ভৌমিকের সাথে আবদ্ধ হন। উদ্বাস্তু মহিলাদের পুনর্বাসনের কাজে সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৬০ সালে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত হন।
দক্ষিণ কলকাতার এক স্কুলে শিক্ষকতা করেন দশবছর, কিন্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট না পাওয়ায় বহু তদ্বির করেও পেনশন জোটেনি।
১৯৮২ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর সন্তানাদি না থাকায় নিসঙ্গতা তাকে গ্রাস করে এবং শান্তির আশায় সবকিছু ছেড়ে ঋষিকেশে থাকতে শুরু করেন।
১৯৮৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর প্রচন্ড ঠান্ডায় ঋষিকেশের বাসিন্দারা পথের ধারে এক নারীর মৃতদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে জানা যায়, মৃত্যুর কারণ অপুষ্টি ও অনাহার। কোন দাবীদার না থাকায় পুলিশ সেই দেহের ছবি তুলে অজ্ঞাতনামা লাশ হিসাবে পুড়িয়ে দেয়। মাসখানেক পর জানা যায় তিনি আর কেউ নন, বাংলার অগ্নিকন্যা বীণা দাস।
দুর্ভাগা দেশে এক স্বাধীনতা সংগ্রামী, বিধায়ক ও পদ্মশ্রী প্রাপ্ত শিক্ষিকার কি করুণ পরিণতি!
১৯১১ সালের ২৪ অগাস্ট নদীয়ার কৃষ্ণনগরে জন্মগ্রহণ করেন বাংলার এই অগ্নিকন্যা ।
শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় তার ও প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের ইংরাজী অনার্স বি.এ ডিগ্রি ২০১২ সালে (মরণোত্তর) প্রদান করে ।
