ঢাকা, শনিবার ০৬, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮:৩৮:৩৭ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

দেশে প্রথম ইসরায়েলি পদ্ধতিতে আম চাষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:৪৬ পিএম, ২৯ আগস্ট ২০২২ সোমবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

আম চাষের ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে চাষির। গাছের উচ্চতা হবে মানুষের সমান। ফলে পরিচর্যাও করা যাবে সহজে। উচ্চতা কম হওয়ায় গাছে আসা শতভাগ আমেই ফ্রুট ব্যাগিং করা সম্ভব। গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিস (জিএপি) অনুযায়ী আম চাষাবাদ হওয়ার কারণে এই আম সম্পূর্ণ বিদেশে রপ্তানি উপযোগী। এছাড়াও ইসরায়েলি প্রযুক্তি আলট্রা হাইডেনসিটি (অতিঘন) পদ্ধতিতে আমবাগানের প্রতি ইঞ্চি জায়গা ব্যবহার করা সম্ভব। 

সাধারণত এক বিঘা আম বাগানে কৃষি বিভাগ ১.৩ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। সেখানে আলট্রা হাইডেনসিটি পদ্ধতিতে বিঘাপ্রতি আমের উৎপাদন হবে ৫ টন করে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আম চাষে সফলতা পেয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষি ও রপ্তানিকারক ইসমাইল খান শামীম। তিনি শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রোডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিডেটের সাধারণ সম্পাদক। 

জানা গেছে, থাইল্যান্ডের বিভিন্ন বাগান পরিদর্শন ও ভারতের তামিলনাড়ু প্রদেশের কয়েমবাটরের জেইন এগ্রোর  বিভিন্ন বাগান পরিদর্শন করে ইসমাইল খান শামীম তিন বছর আগে শিবগঞ্জের একাডেমি মোড়ে প্রতিষ্ঠা করেন এই বাগান। তিনি ইসরায়েলের আলট্রা হাইডেনসিটি পদ্ধতি অনুসরণ ও সেচের ক্ষেত্রে দেশীয় পদ্ধতি ব্যবহার করে গড়ে তুলেছেন চার বিঘার বাগান। সেখানে বারোমাসি কাটিমন জাতের প্রায় ১ হাজার আমগাছ রয়েছে। মাত্র তিন বছরেই এখন তার বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে আম। 

আলট্রা হাইডেনসিটি পদ্ধতিতে একই পরিমাণ জমিতে প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় অনেক বেশি গাছ রোপন করা যায়। ফলে ফলন হয় অন্তত তিনগুণ বেশি। এই পদ্ধতিতে দক্ষিণ আফ্রিকা, থাইল্যান্ড, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে আম উৎপাদন হলেও বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এই পদ্ধতি ব্যবহার করে আম চাষ শুরু করেছেন ইসমাইল খান শামীম। ইতোমধ্যে সুইজারল্যান্ড ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে সুইস কন্ট্রাক্ট ও স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি) যৌথভাবে আলট্রা হাইডেনসিটি পদ্ধতিতে আম চাষের উদ্ভাবনী দিকগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেছে।  

আমচাষি ইসমাইল খান শামীম বলেন, ভারতের তামিলনাড়ু ও ফিলিপাইনে কোকাকোলার ম্যাংগো প্রজেক্ট দেখে ইসরায়েলের আলট্রা হাইডেনসিটি পদ্ধতিতে আমচাষের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। সেই থেকে তিন বছর আগে এই বাগান শুরু করি। কিন্তু ইসরায়েলের এই প্রযুক্তির একটি অংশ ড্রিপ ইরিগেশন (বিন্দু সেচ) আমি বাদ দিয়েছি। কারণ আমাদের এই এলাকায় এতো বেশি পানির প্রয়োজন হবে না এবং ড্রিপ ইরিগেশনে অনেক বেশি খরচ হবে। যা চার বিঘার একটি আম বাগানে প্রায় লাখ টাকার মতো। তাই ইসরায়েলের আলট্রা হাইডেনসিটি পদ্ধতির সঙ্গে এখানে শুধুমাত্র সেচের ক্ষেত্রে দেশীয় পদ্ধতি যুক্ত করেছি। 
প্রচলিত পদ্ধতিতে আম চাষে প্রায় ৩০ শতাংশ আম নষ্ট হলেও এই পদ্ধতিতে নষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো- বাগান পরিচর্যায় লোকবল ও খরচ কম লাগে। এছাড়াও গাছের প্রত্যেকটি ডাল ও আমের প্রতি নজর রাখা যায় ও পরিচর্যা করা সহজ। আলট্রা হাইডেনসিটি পদ্ধতিতে ল্যাংড়া, আম্রপালি, গৌড়মতি, বারি আম-৪, বারি আম-১১, কাটিমন, হাড়িভাঙ্গা, ব্যানানাসহ বিভিন্ন প্রচলিত জাতের আম চাষ করা যায় বলে জানান এই আমচাষি। 

আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. কামরুল ইসলাম আলট্রা হাইডেনসিটি প্রযুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম এই পদ্ধতিতে আম চাষাবাদ শুরু হয়েছিল। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা সেখানে গিয়ে দেখতে পান, অতিঘন মাত্রায় লাগানো হয়েছে আমগাছ। এর ফলাফল ও কার্যকারিতা নিয়ে এরপর থেকেই  গবেষণা শুরু হয়েছে ভারতে। বাংলাদেশেও আমরা এ নিয়ে গবেষণা করে আসছি। 
তিনি জানান, বারোমাসি কাটিমন জাতের আম চাষ করেছেন। ফলে আমের মৌসুম থাকবে এমন সময়ে তার গাছে ফলন দেবে। দেশে ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে বিদেশ থেকে এক শ্রেণির ক্রেতার জন্য আম আমদানি করতে হয়। এই প্রযুক্তির সম্প্রসারণ হলে বিদেশ থেকে আম আমদানির প্রয়োজন হবে না। তার বাগানে বিঘা প্রতি প্রথম বছরে খরচ হয়েছে ৫৮ হাজার টাকা। দ্বিতীয় বছর ২৫ হাজার ও তৃতীয় বছরে বিঘা প্রতি আমগাছের সেচ ও পরিচর্যা করতে ব্যয় হয়েছে ২৭ হাজার টাকা। 

ইসমাইল খান শামীম বলেন, বারোমাসি জাতের আম হওয়ায় প্রচলিত দামের তুলনায় ৪-৫ গুণ দামে বিক্রি করা যাবে আলট্রা হাইডেনসিটি পদ্ধতিতে চাষ করা আম। এই প্রযুক্তির বাগানে উৎপাদন খরচ কম। এই প্রযুক্তির বাগানে ৯৫ শতাংশ প্রিমিয়াম কোয়ালিটির আম পাওয়া যায়। গাছ লাগানোর পাঁচ বছর পর থেকে প্রতি বিঘা জমিতে উৎপাদন হয় ৪-৫ মেট্রিক টন আম। আমাকে দেখে চলতি বছরে শিবগঞ্জের কয়েকজন চাষিও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আম বাগান শুরু করেছেন। তাদেরকে বিভিন্ন সময়ে নানা রকম পরামর্শ দিচ্ছি।