ঢাকা, সোমবার ১৩, মে ২০২৪ ১২:৩৪:৫১ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

রোজা লুক্সেমবার্গের নির্বাচিত রচনা: অনুবাদ: অদিতি ফাল্গুনী

(ভূমিকা: পিটার হুদিস এবং কেভিন বি. এন্ডারসন)  

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৩:২৬ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ শুক্রবার

রোজা লুক্সেমবার্গের নির্বাচিত রচনা: অনুবাদ: অদিতি ফাল্গুনী

রোজা লুক্সেমবার্গের নির্বাচিত রচনা: অনুবাদ: অদিতি ফাল্গুনী

পর্ব-১৯: ইনকা সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ সংগঠন বিষয়ে মোটামুটি অবগত কেউ উপরে বর্ণিত গ্রিসের বীর যুগের অনুকরণে নাজি জার্মানীতে কিছু বিশেষ ধরনের সংগঠন গড়ে ওঠার পারষ্পরিক সম্পর্ক বিষয়ে বিষ্মিত হবেন না। 
নি:সন্দেহে এরা একটি পরজীবী দ্বৈত কাঠামোর ফলাফল যা কিনা একটি সাম্যবাদী সামাজিক সংগঠন দ্বারা একটি কৃষিজীবী মার্ক সম্প্রদায়ের বশ্যতাকরণ হতে সৃষ্টি হয়েছিল। শাসকদের আচার-আচরণে সাম্যবাদী সমাজ কাঠামোর কি কি রীতি-নীতি থেকে গেছিল (যেমনটা ছিল বিজিত জনগোষ্ঠির সার্বিক অবস্থানের ক্ষেত্রেও) তার পরিসর মূলত: নির্ভরশীল ছিল উন্নয়নের স্তর ও দৈর্ঘ্য, সমাজ কাঠামোর আবহ প্রভৃতি শর্তাদির উপর যার সবকিছু মিলে স্তরায়নের এক সম্পূর্ণ পরিসর তৈরি করতে পারে। 
ইনকা সাম্রাজ্যে শাসকেরা নিজেরাই ছিলেন এবং সেখানে প্রজাদের সমষ্টিগত সম্পত্তি সামগ্রিক ভাবে স্পর্শ করা হয়নি এবং সমাজের প্রতিটি স্তর সামঞ্জস্যপূর্ণভাবেই যে যার নিজের জন্য সংগঠিত ছিল; তথাপিও এমন একটি সমাজকে বিজিত জনগোষ্ঠির উপর বিজয়ীর শোষণমূলক সম্পর্কের আদি আঙ্গিক হিসেবে বিবেচনা করা যায়। 
ইনকা সাম্রাজ্য অবশ্য শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছে। এক্ষেত্রে ইনকা সমাজের সাংস্কৃতিক বিকাশের তুলনামূলক প্রারম্ভিক পর্যায়। এবং দেশটির ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা ধন্যবাদ পাবার দাবিদার।
ঐতিহ্যবাহী নানা সূত্র থেকে প্রাপ্ত ক্রিট দ্বীপ বিষয়ক ঐতিহাসিক তথ্যাদি সেই সমাজের বিকাশের একটি অগ্রসর পর্যায়ের কথা বলে যেখানে বিজিত কৃষক সম্প্রদায়কে শুধুমাত্র খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার খোরাকটুকু বাদে তাদের সব পরিশ্রমের ফসল অধিপতি, শাসক শ্রেণির হাতে তুলে দিতে হতো। 
অন্যদিকে শাসক শ্রেণিকে কিন্ত বেঁচে থাকার জন্য জমিতে নিজ পরিশ্রমের উপর নির্ভর করতে হতো না, বরঞ্চ শোষিত মার্ক সম্প্রদায়ের দেয়া খাজনার উপরেই তারা বেশ ভাল ভাবেই চলতে পারত। তবে বিজিত মার্ক সম্প্রদায়ের দেয়া খাজনা খুব যে সাম্যবাদী কায়দায় বিজয়ী সম্প্রদায়ের ভেতর বণ্টিত হতো তা কিন্ত নয়। 
স্পার্টায় কিন্ত আমরা দেখতে পাই যে, উন্নয়নের আর একটি স্তর সেখানে সমাপ্ত হয়েছে- ভূমি এবং মৃত্তিকাকে কোনভাবেই আর বিজিত সম্প্রদায়ের সম্পদ বলে মনে করা হচ্ছে না, বরঞ্চ এ দুইকে বিজয়ী বা শাসক শ্রেণির সম্পদ হিসেবে মনে করা হচ্ছে এবং ভূমি বা সম্পদ বিক্রি করে বিজয়ী সম্প্রদায়ের সবার ভেতর সমান ভাবেই বন্টিত হতো। 
তবে, সাধারণত: বহিরাগত কোন সম্প্রদায় কর্তৃক বিজিত হবার পর বিজিত সম্প্রদায়ের সামাজিক সংগঠন অনেক সময়ই তাদের ভিত্তি হারিয়ে ফেলতো। হারিয়ে ফেলতো তাদের ভূমির মালিকানা। বরঞ্চ তারা নিজেরাই হয়ে উঠতো বিজয়ীদের সম্পদ। যারা সম্প্রদায়গতভাবে অথবা ‘রাষ্ট্র কর্তৃক‘ আদিষ্ট হয়ে সম্প্রদায়ের ভূমিহীন মানুষটিকে বিজয়ী জাতির কাছে ‘শ্রমিক‘ হিসেবে দান করতো। 
শাসক স্পার্টানরা অবশ্য বিজিত মার্ক সম্প্রদায়ের মতই কঠোর নিয়মানুবর্তীতার শৃঙ্খলে নিজেদের সবসময় বেঁধে রাখতো। এবং থেসালিতে সমধর্মী সম্পর্কগুলো একটি মাত্রা পর্যন্ত ছিল বলে অনুমান করা যায়। যেখানে অতীতের অধিবাসী বা ‘পেনেস্টাই‘গণ (দরিদ্র) এয়োলিয়গণ কর্তৃক বিজিত হয়েছিল অথবা বিথিনিয়ায় আদিবাসী ‘মারিয়ান্দিনোই‘য়েরা আক্রমণকারী থ্রেসিয়ান গোত্রগুলো কর্তৃক বিজিত হয়েছিল। 
যাহোক, বিজিতদের শ্রমের উপর নির্ভরশীল এই পরজীবী অস্তিত্ব  একটা পর্যায়ে পৌঁছে কিন্ত শাসক সম্প্রদায়গুলোর ভেতর বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতার বীজ বুনে দিলো। সামরিক বিজয় এবং অন্যকে বঞ্চণা করাটাকেই একটি চিরস্থায়ী কাঠামো হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার অনুজ্ঞা ইনকা। 
স্পার্টার মত দু‘টো সম্প্রদায়েই সামরিক নানা যন্ত্রপাতির বিকাশের পথ খুলে দিয়েছে। আর সামরিক এই বিকাশই ছিল শুরুতে মুক্ত চিত্ত, স্বাধীণ প্রাণ কৃষক সমাজের হৃদয়ে অসাম্যের প্রথম ভিত্তি। সুবিধাভোগী শ্রেণিগুলোর সংগঠনের প্রথম বুনিয়াদ প্রতিষ্ঠার সোপাণ। আর এর জন্য যা দরকার তা‘ হলো শুধুই অনুকূল ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক এবং ঐতিহাসিক পরিস্থিতি। যা অপেক্ষাকৃত সভ্যদের সংস্পর্শে আসা ও দ্রুত বাণিজ্যের প্রেক্ষিতে মানুষের ভেতর আরো পরিশীলিত জীবনের আকাঙ্খা জাগায়। যাতে করে শাসক শ্রেণির ভেতরেও দ্রুতই বৈষম্য বিস্তৃততর হয়। এবং সমাজের সাম্যবাদী সংহতি দূর্বল হয় ও ধনী-দরিদ্রের বিভাজন সৃষ্টিকারী ব্যক্তিগত সম্পত্তির জন্ম হয়।প্রাচ্যের সভ্য জনগোষ্ঠিগুলোর সাথে সংস্পর্শে আসার পর প্রাচীন গ্রিসের শুরুর ইতিহাস এমন বিকাশের এক ধ্রুপদী উদাহরণ।  
(চলবে)