এ বছর সাহিত্যে নোবেল পাওয়া কে এই অ্যানি এরনো?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৬:৫০ পিএম, ৭ অক্টোবর ২০২২ শুক্রবার
ফাইল ছবি
এ বছর সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন ফরাসি লেখক এবং সাহিত্যের অধ্যাপক অ্যানি এরনো। বৃহস্পতিবার রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি এই পুরস্কারের জন্য তাঁর নাম ঘোষণা করে। -- খবর বিবিসি ও সিএনএনের
পুরস্কার ঘোষণার সময় রয়্যাল সুইডিশ একাডেমির পক্ষ থেকে বলা হয়, ৮২ বছর বয়সী অ্যানি এরনোকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে তাঁর ৪০ বছরের ‘আপসহীন’ লেখার জন্য, যেখানে জেন্ডার, ভাষা ও শ্রেণিগত কারণে বিপুল বৈষম্যের শিকার হওয়া জীবনকে তিনি তুলে ধরেছেন। অ্যানি এরনো সাহসী ও ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে ব্যক্তিগত স্মৃতির শিকড়, বিচ্ছিন্নতা ও সম্মিলিত অবদমন উন্মোচন করেছেন।
বিশ্ব সাহিত্যের আসরে তিনি যথেষ্ট পরিচিত হলেও, সাধারণ পাঠকের মধ্যে বিশেষ পরিচিত নন তিনি। তাঁর নোবেল পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই ইন্টারনেটে তাঁর নাম ধরে সার্চ বেড়ে গিয়েছে। অনেকেরই প্রশ্ন, কে এই অ্যানি এরনো? কেন তিনি পেলেন এই সম্মান?
'গেটিং লস্ট’ নামে আত্মজীবনীমূলক বইয়ের জন্য এ পুরস্কার পেলেন তিনি। বইটি এক রুশ কূটনীতিকের সাথে নিজের গোপন-গভীর প্রেম নিয়ে ডায়েরির ভিত্তিতে লেখা। ৮২ বছর বয়সী লেখক এই বইয়ে মানবসম্পর্কের গভীর ও সূক্ষ্ণ দিকগুলো তুলে ধরেছেন।
১৯৪০ সালে ফ্রান্সের লিয়েবোন এ জন্ম নেওয়া এই লেখক স্মৃতিকথা বা আত্মজীবনী ধর্মী সাহিত্যচর্চাই করেন। রুয়েঁ এবং বোর্দো বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য নিয়ে পাঠগ্রহণের পরে তিনি সাহিত্য জগতে প্রবেশ করেন। প্রথম জীবনে কিছু আখ্যানধর্মী লেখা লিখলেও পরে তিনি সরে আসেন স্মৃতিকথায়। এক নারীর বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাওয়া পৃথিবী এবং পরিপার্শ্ব তাঁর লেখায় বার বার ছায়া ফেলে। ব্যক্তিগত সময়ের সঙ্গে বাঁধা পড়ে নৈর্ব্যক্তিক সমাজ বা বৃহত্তর পরিসরের মানুষের কাহিনিও। কখনও তাঁর লেখায় উঠে আসে তাঁর নিজের গর্ভপাতের প্রসঙ্গ, আসে মাতৃবিয়োগ, অ্যালঝাইমার্স বা ক্যানসারের কথাও।
১৯৭৪ সালে তাঁর লেখা প্রথম বই ‘লে আখঁমখে ভিদ’ প্রকাশিত হয়। ১৯৯০ সালে ‘ক্লিনড আউট’ নামে বইটির ইংরেজি সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ১৯৮৩ সালে তাঁর উপন্যাস ‘লা প্লাস’ প্রকাশিত হয়। ১৯৯২ সালে এর ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয় ‘আ ম্যানস প্যালেস’ শিরোনামে। এই উপন্যাস বিপুল পাঠকপ্রিয়তা পায়। প্রখ্যাত লেখক হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি।
তাঁর বই ‘আ উওম্যান’স স্টোরি, আ ম্যান’স প্লেস’, ‘সিম্পল প্লেস’ বা ‘আই রিমেন ইন ডার্কনেস’ ইতিমধ্যেই পাঠকের নজর কেড়েছে, আদায় করেছে আলোচকদের শ্রদ্ধা। ‘প্যাসন সিম্পল’ গ্রন্থে এক পূর্ব ইউরোপীয় পুরুষের সঙ্গে তাঁর প্রেমের সম্পর্ক বহুমাত্রিক বর্ণালির ভালবাসাকে উপস্থাপন করে।
২০০৮ সালে প্রকাশিত তাঁর স্মৃতকথা ‘দ্য ইয়ার্স’-কেই আলোচকরা তাঁর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বলে চিহ্নিত করেন।
লেখনীর ধরণের জন্য তাঁর সঙ্গে তুলনা চলে এসেছে প্রায় একই ঘরানার কিংবদন্তি সাহিত্যিক মার্সেল প্রুস্তের।
তিনি কি প্রুস্ত দ্বারা অনুপ্রাণিত? যদিও অ্যানি বলেছেন, তাঁর উপর প্রুস্তের প্রভাব খুবই কম। বরং তাঁর উপর অনেক বেশি প্রভাব রয়েছে আমেরিকার সাহিত্যিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের। খুব সচেতনভাবেই তিনি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন ফরাসি সাহিত্যের সব ধরনের বৈশিষ্ট্য। ভাষাটুকু বাদ দিয়ে তিনি নিজেই হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছেন একেবারে স্বতন্ত্র এক ঘরানা। ফরাসি ‘মিঠে বোল’, মেদুরতা, রোম্যান্টিসিজমকে বুড়ো আঙুল দেখাতেই ভালো লেগেছে তাঁর। নিজ ভাষ্যেই তিনি হয়ে উঠেছেন কর্কশ, কঠিন, এবং অবিশ্বাসী। আর সেটিই তাঁকে তাঁর নিজের দেশ, নিজের ভৌগলিক সীমারেখা, নিজের জাতিসত্ত্বার থেকে অনেক দূরে নিয়ে গিয়ে ফেলেছে।
ইতিপূর্বে পেয়েছেন প্রি দি লা লাঙ্গে ফ্রাঁসে-র মতো সম্মান। আন্তর্জাতিক লেখক হিসেবে যুক্ত হয়েছেন রয়্যাল সোসাইটি অফ লিটারেচারের সঙ্গে। তাঁর নোবেলপ্রাপ্তি এক নারীর ব্যক্তিগত যাপনের, আনন্দ-বেদনা-নির্লিপ্তির স্বীকৃতি। সেই সঙ্গে এ-ও বলা যায় যে, এক নির্জন নারীসত্তার বিশ্বজনীন হয়ে ওঠার এক বিশেষ ঘটনা হয়ে রইল এই পুরস্কার।
