চিকিৎসক জোহরা বেগম কাজীর জন্মদিন আজ
অনলাইন ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৪:৩৮ পিএম, ১৫ অক্টোবর ২০২২ শনিবার
অবিভক্ত বাংলার প্রথম বাঙালি মুসলিম নারী চিকিৎসক ডাক্তার জোহরা বেগম কাজী
অবিভক্ত বাংলার প্রথম বাঙালি মুসলিম নারী চিকিৎসক ডাক্তার জোহরা বেগম কাজীর জন্মদিন আজ। স্ত্রীরোগের উপমহাদেশীয় সমস্ত কুসংস্কারের খোলস ভেঙে তিনি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিলেন। তিনিই প্রথম ধাত্রীবিদ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করে এই অঞ্চলের অজ্ঞ ও অবহেলিত নারী সমাজকে নিজেদের চিকিৎসার অধিকারের ব্যাপারে সচেতন করেছেন।
নারীশিক্ষা, কুসংস্কার ও ভ্রান্তপ্রথা বিরোধিতা, সমাজসেবা ও অধিকার সচেতনতার যে আলোর মশাল তিনি জ্বেলেছিলেন তা আজও এদেশের বাঙালি মুসলিম নারীদের অনুপ্রাণিত করে।
চিকিৎসাশাস্ত্রে এদেশের বর্তমানে লাখ লাখ মুসলিম নারী দেশে-বিদেশে অধ্যয়ন করছে অধ্যাপক ডা. জোহরা বেগম কাজীর মতো কিংবদন্তীর অবদানেই।
জোহরা বেগম কাজী ১৯১২ সালের ১৫ অক্টোবর অবিভক্ত ভারতের মধ্য প্রদেশের রাজনান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন৷ তার বাবা ডাক্তার কাজী আব্দুস সাত্তার ও মায় মোসাম্মৎ আঞ্জুমান নেসা। তার পৈতৃক নিবাস ছিল বাংলাদেশের মাদারীপুর জেলার কালকিনি থানার গোপালপুর গ্রামে।
তিনি ১৯২৯ সালে আলিগড় মুসলিম মহিলা স্কুল থেকে প্রথম বাঙালি মুসলিম আলিগড়ি-অধ্যেতা হিসাবে এসএসসি পাশ করেন। ২৩ বছর বয়সেই তিনি দিল্লির লেডি হাডিং মেডিকেল কলেজ থেকে ১৯৩৫ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এমবিবিএস উত্তীর্ণ হন। এজন্য পুরস্কার হিসেবে পান ভাইসরয় পদক।
১৯৩৫ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করার পর জোহরা কাজী কর্মজীবনে প্রবেশ করেন৷ তিনি প্রথমে ইয়োথমাল ওমেন্স পাবলিক হাসপাতালে ডাক্তার হিসেবে যোগ দেন৷ এরপর বিলাসপুর সরকারি হসপিটালে যোগ দেন৷ পরবর্তীকালে মানুষের সেবার জন্য মহাত্মা গান্ধী নির্মাণ করেন সেবাগ্রাম৷ এই সেবাগ্রামে অবৈতনিকভাবে কাজ করেন জোহরা৷ এছাড়াও তিনি ভারতের বিভিন্ন বেসরকারি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে ডাক্তার হিসেবে নিরলসভাবে কাজ করেছেন।
বঙ্গভঙ্গের পর তিনি ঢাকায় চলে আসেন৷ ১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগ দেন৷ ঢামেক হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় অবসর সময়ে তিনি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (ঢাকা)-এ সাম্মানিক কর্নেল হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন৷ মিটফোর্ড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (বর্তমানে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের প্রধান ও সাম্মানিক অধ্যাপক ছিলেন৷ ১৯৭৩ সালে চাকরি থেকে অবসর নেবার পর বেশ কিছু বছর হলি ফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট হাসপাতালে পরামর্শক (কনসালট্যান্ট) হিসাবে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন৷ পরে তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজে সাম্মানিক অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন৷
ঢাকা মেডিকেলে দায়িত্ব পালন করার সময় নারী রোগীদের চিকিৎসা সংক্রান্ত কুসংস্কার তাকে আহত করে। তিনি তাদের সাথে সরাসরি কথা বলে তাদের ভুল ধারণা দূর করার চেষ্টা করতেন। তার কারণে পরবর্তীতে চিকিৎসা শাস্ত্রে এদেশে নারী শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পায়।
ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধে এই মহান চিকিৎসকের অসামান্য অবদান রয়েছে।
জীবনে তিনি বহু পুরস্কার, স্বীকৃতি ও সম্মাননা লাভ করেছেন। তিনি তমঘা-ই-পাকিস্তান (১৯৬৪), একুশে পদক (২০০৮), বেগম রোকেয়া পদক (২০০২) লাভ করেন।
২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর তার জন্মদিনে গুগল ডুডল প্রকাশ করে সম্মান প্রদর্শন করে।