আইপিএলে যৌন লালসার শিকার চিয়ার লিডাররা
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০১:২৬ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ০১:৫৫ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০১৮ মঙ্গলবার
আইপিএলে যৌন লালসার শিকার ভিনদেশী চিয়ার লিডার নারীরা। মাঠের একপ্রান্তে মঞ্চে দাড়িয়ে সংক্ষিপ্ত পোষাক পরে নাচতে থাকেন এসব নারীরা। আইপিএলের অংশ এটি। চার-ছয় কিংবা আউট, শুরু হয়ে যায় নাচ। বরাবরই খেলার মাঠে নারীদের এ ধরনেরেউপস্থাপন নিয়ে কথা উঠেছে। কিন্তু তার ধার ধারেনি আইপিএল কর্তৃপক্ষ।
বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত, জমকালো আসর আইপিএল (ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ)। আইপিএল-এ চলে ডলারের ছড়াছড়ি। কিন্তু শত আলোর মধ্যেও যে অন্ধকারের হাতছানি থেকেই যায়।
এ মাসে ভারতে শুরু হওয়া আইপিএলের মাঠে চলছে তুমুল লড়াই। দেশ বিদেশের নামী সব ক্রিকেটারদের মোটা অঙ্কের অর্থ দিযে ভাড়া করা হয়। একই মাঠে সব তারকা। দর্শকরা এ সুযোগটাই বা হাতছাড়া করবে কেন! টিকিট যত টাকারই হোক একসঙ্গে, একই মাঠে, একসময়ে এত তারকাদের পাওয়া যাবে না। লড়াইয়ের মধ্যে কোহলি, গেইলস, গামভীর, স্টার্ক, সাকিবরা যখন বোলিং-ব্যাটিংয়ে মাতোয়ারা, প্রত্যাশিত আউট কিংবা আকাঙ্খিত ছয় হলেই উল্লাসে ফেটে পড়ছে দর্শক। গ্যালারির কাছাকাছি তখন শুরু হয় চিয়ার লিডারদের কোমর দোলানো নাচ। দর্শকদের আনন্দ তখন আরো বেশি বেগবান হয়।
আইপিএল নামক মোহনীয় ক্রিকেটের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডার এই চিয়ার লিডাররাই। তাদের পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। বিনিময়ে আয়োজকরা হাতিয়ে নেন মোটা অঙ্কের টাকা। বাস্তবিকপক্ষে এত আনন্দের মধ্যে চিয়ার লিডারদের ভাল থাকার কথা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে ভাল নেই তারা।
সম্প্রতি ভারতের এক শীর্ষ গণমাধ্যমেকে তারা খোলাখুলি জানালেন তাদের সেই অভিজ্ঞতা। তবে শর্ত একটাই নাম প্রকাশ করা যাবে না। কারণ নাম প্রকাশ করলে তাদের চাকরি তো যাবেই, আরও খারাপ কিছু হতে পারে।
সাক্ষাৎকারে চিয়ারলিডাররা বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। এক চিয়ারলিডার বলেন, পাশ্চাত্যে যখন কোন নারী নৃত্যশিল্পী নাচেন, তখন তার পোষাক, শরীর নিয়ে কেউ ভাবেনা। কিন্তু এখানে (ভারত) এটাই দেখে। এদেশে চিয়ারলিডারদের ভোগপণ্য ছাড়া আর কিছুই ভাবা হয় না।
আরেকজন বলেন, আমি একজন নৃত্রশিল্পী হিসেবে টুর্নামেণ্টে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি এখানে যৌন পণ্য হিসেবেই আমাকে দেখা হয়। আমাদের মূল্য এভাবেই দেওয়া হচ্ছে। আইপিএলে আমাকে নৃত্য শিল্পী না, শুধু মাত্র ভোগপণ্য ভাবা হয়।
এছাড়াও দর্শকদের কাছাকাছি থাকতে হয় বলে গ্যালারি থেকে প্রায় যৌন ইঙ্গিত পেতে হয় এবং মুখ বুজে সেসব সহ্য করতে হয় বলে জানান আরেক চিয়ারলিডার। মাঠে অনেকেই এমন অঙ্গভঙ্গি করে,মন্তব্য করে যা সহজে মেনে নেওয়া যায়না। তারপরেও এড়িয়ে যেতে বাধ্য হই। ক্ষমাসুলভ দৃষ্টিতে দেখি। কিছু বলতে গেলে আরও খারাপ কথা শুনতে হয়।
আইপিএলে এসে যেন নতুন নৃত্য শিল্পীরা ভেঙে না পড়েন তাই প্রথম অবস্থায় এই পেশা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন এসব চিয়ারলিডাররা।
একজন বলেন, যদি কেউ চিয়ারলিডার হতে চায়, তাহলে অবশ্যই নাচের তালিম দিয়ে চিয়ারলিডার লওয়া উচিত। কারণ সে ক্ষেত্রে এই পেশা হতাশ করলে, নৃত্যশিল্পী হিসেবে জীবনযাপন করা যাবে।
এ ছাড়া আইপিএলের বিরুদ্ধে এসব চিয়ারলিডারদের বর্ণবিদ্বেষেরও অভিযোগ তুলেছেন। তাদের মতে শ্বেতাঙ্গ মেয়েদের বেশি ছোট পোশাক পড়তে দেওয়া হয়। অনেকটাই বাধ্য করা হয। প্রতিবাদ করলে উল্টো চুক্তির অর্থ কমিয়ে দেয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
তবে আশার কথা হলো, রয়েল চ্যালেঞ্জার বেঙ্গালুরের (আরসিবি) হয়ে স্বল্প পোশাকে আর নাচবে না চিয়ালিডাররা। এ ফ্র্যাঞ্চাইজিটির এমন পরিকল্পনায় সাধুবাদ জানিয়েছেন খোদ আইপিএল কর্তৃপক্ষ। এখন দেখার বিষয় এই যৌন হয়রানির বন্ধে কি উদ্যোগ নেওয়া হয়? আদৌ তা বন্ধ হবে কিনা?
