ঢাকা, শনিবার ০৬, ডিসেম্বর ২০২৫ ৮:৫৯:২৮ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

গহীন বনের পোস্টমাস্টারনি সৃজনা

ডেস্ক প্রতিবেদন

উইমেননিউজ২৪.কম

প্রকাশিত : ০১:২২ এএম, ১৭ এপ্রিল ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৯:১৭ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০১৮ বুধবার

ভারতের এ রাজ্যে মেঘের গায়ে এক জেলখানা ছিল। তার কথা লিখেছেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। আমরা তাকে জানি বক্সা ফোর্ট বলে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এই দুর্গের অবস্থান প্রায় ২৮২০ ফুট। আর এখানেই রয়েছে বৃটিশ আমলের এক পোস্ট অফিস। এই বক্সা পোস্ট অফিসে রয়েছেন এক পোস্টমাস্টারনি। তার নাম সৃজনা থাপা।

 

গভীর সমীহ জাগানো ঘন বনের মাঝে রয়েছে ১১টি বনবস্তি। জনসংখ্যা প্রায় হাজার চারেক। অধিকাংশই ডুকপা। এঁরা আদি বাসিন্দা। আর রয়েছে নেপালিরা। যেমন সৃজনারা।



পোস্টমাস্টারনির দায় এই মানুষগুলোর কাছে চিঠিপত্র, প্রয়োজনীয় দলিল, মোবাইলের বিলসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ নথি পৌঁছে দেওয়া। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা। আদিম অরণ্য, আদিম সেই পথ। আদমা গ্রাম তার পোস্ট অফিস থেকে ১২ কিমি পাহাড়ি পথ। তাসিগাঁও চার কিমি। পোছলুং ছ’কিমি। লাপচাখা দু’কিমি। এছাড়া তো রয়েছে স্থানে স্থানে আধা সামরিক বাহিনী এসএসবি’র জওয়ানদের ক্যাম্প। চিঠি আসে তাদেরও। মনে রাখতে হবে এই অরণ্য বক্সা, একটি টাইগার রিজার্ভ।

 

সৃজনার বাবা কবি ও সমাজসেবী পুষ্পরাজ থাপাও ছিলেন বক্সার পোস্টমাস্টার। বাবার তবু একজন রানার ছিল। তার রানার সমতলের মানুষ। তিনি পাহাড়ে আসেন না বলেই অভিযোগ। অতএব দায় সৃজনার। বক্সা থেকে পাঁচ কিলোমিটার উতরাইয়ে সান্তারাবাড়ি। সেখানে নেমে বাস বা অটো চেপে রাজাভাতখাওয়া পোস্ট অফিস। সেখান থেকে পাহাড়ের সব মেইল নিয়ে ফের যাত্রা। এ কাজে কোনও ক্লান্তি নেই পাহাড়ি মেয়ের। ভয়ঙ্কর সাপ, চিতাবাঘ, বর্ষার পিছল পথ, পাথরের ফাঁকে-ঘাস-গাছের উপর থেকে নেমে আসা জোঁক, রাজাভাতখাওয়ার পথে বুনো হাতি–না ভয় পেলে চলে না তার।

 

বক্সা দুর্গের একমাইল উপরে তার গ্রাম খাটালাইন। বাড়িতে বৃদ্ধা মা আর ছোট ভাই। চাকরিরত অবস্থায় বাবার মৃত্যুর পর চাকরি পেয়েছিল সে। বাড়িতে সেই গৃহকর্ত্রী। মাকে দেখা, রান্নাবান্না, সামান্য চাষবাস তারও দেখভাল করা।

 


সব দায়দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে সৃজনা চলেছে, সৃজনা। বক্সা বাঘ বনের পথে পথে। ঝুমঝুম ঘন্টা বাজে না বটে। তবে সে পথে পায়ে পায়ে ঝিঁ ঝিঁ-র ঐকতান, জানা-না জানা পাখির ডাক, হিংস্র জন্তুর হুঙ্কার পেরিয়ে সৃজনার একদিন প্রতিদিন কাটে সারাবেলা।

 

(ভারতিয় পত্রিকা অবলম্বনে)