ঢাকা, সোমবার ২৯, এপ্রিল ২০২৪ ২০:৫৪:৩৪ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

‘পলিনেট হাউজে’ বিষমুক্ত সবজি চাষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:৫৮ এএম, ১৪ নভেম্বর ২০২২ সোমবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

জলবায়ু ঝুঁকির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৃষি বিজ্ঞানের নতুন উদ্ভাবন ‘পলিনেট হাউজ’ জয়পুরহাটে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিষমুক্ত ও কীটনাশক ছাড়াই সারাবছর নানা রকম উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদন করতে পারছেন কৃষকরা। জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলা কুসুম্বা ইউনিয়নের ধুরইল গ্রামে এমনই একটি প্রকল্প আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে। এই চাষ পদ্ধতি কৃষির উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সবজি চাষের জন্য দেশের অন্যতম উপযোগী জয়পুরহাট জেলা মাটি। প্রতিবছর এ জেলায় হাজার হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন রকম শাক-সবজি-ফলমূলের চাষ করেন কৃষকরা। তবে বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হুমকির মুখ থেকে বাদ যায়নি কৃষিখাতও। এদিকে কৃষিকে বাঁচাতে নতুন নতুন গবেষণা শুরু করেছে সরকারের কৃষি বিভাগ। এরই একটি অংশ ‘পলিনেট হাউজ’।

এর মাধ্যমে শীতকালীন সবজি যেমন গ্রীষ্মকালে উৎপাদন করা যাবে, তেমনি গ্রীষ্মকালের সবজিও শীতে উৎপাদন করা যাবে। যে কোন আবহাওয়া এতে খারাপ প্রভাব ফেলবে না। হাতের মুঠোয় নতুন এই প্রযুক্তি চলে আসায় কৃষককে কোনো বেগ পেতে হবে না। প্রযুক্তির মাধ্যমে ভারী বৃষ্টি, তীব্র দাবদাহ, পোকা-মাকড়, ভাইরাসজনিত রোগের মতো প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নিরাপদ থাকবে সবজি। দিতে হবে না কোন কীটনাশক।

পাঁচবিবি ধুরইল গ্রামের কৃষক আব্দুস ছাত্তারকে পলিনেট হাউজ নির্মাণ করে দিয়েছে কৃষি বিভাগ। এতে চাষ হচ্ছে ক্যাপসিকাম, টমেটো, ব্রোকলি, স্কোয়াশ, স্ট্রবেরি, মেলন, শসা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রাসেসলস, লেটুসসহ বিভিন্ন শাক-সবজি। এর দৈর্ঘ্য ২৫ শতক। এর চারপাশ নেট দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছে। যাতে কোন পোকা-মাকড় ঢুকতে না পারে। এতে উন্নত মানের পলিপেপার ব্যবহার করা হয়েছে। লোহার অ্যাঙ্গেলের ওপর পলিপেপার দিয়ে শেডে এই পলিনেট হাউস নির্মাণ করা হয়েছে। রয়েছে পানি সেচ দেয়ার আধুনিক প্রযুক্তি। প্রথমবার কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে পুরো খরচ দেয়া হয়েছে তাকে। তবে এই টাকা আর শোধ দিতে হবে না। এ পদ্ধতিতে ফসল চাষে ব্যাপক লাভের আশা আব্দুস ছাত্তারের।

আব্দুস ছাত্তার  বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে প্রায় দুই মাস আগে আমাকে বিনামূল্যে পলিনেট হাউজ নির্মাণ করে দিয়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ দেখতে আসে এটি। এই সবজি হাউজে আমি ক্যাপসিকাম, টমেটো, ব্রোকলি, স্কোয়াশ, স্ট্রবেরি, মেলন, শসা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রাসেসলস, লেটুসসহ বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ করছি। কিছু সবজির চারাও রোপণ করেছি। এতে কোন সার-কীটনাশক দিতে হয় না। চারদিকে ঘিরে দেয়ায় কোন পোকামাকড়ও ঢুকতে পারে না। নিরাপদভাবে এ পদ্ধতিতে উচ্চমূল্যের সবজি চাষ করে লাভবান হওয়ার আশা করছি।

পাঁচবিবি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, পলিনেট হাউজটি এলাকায় ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলেছে। এই পদ্ধতি দেখতে ও জানতে দূর-দুরান্ত থেকে মানুষ আসছে। উচ্চমূল্যের শাক-সবজি উৎপাদনে এটি রোল মডেল হিসেবে তৈরি করতে চাচ্ছি। এ থেকে সারাবছর নিরাপদ ও রোগমুক্ত ফসল পাওয়া যাবে, যা বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে। এটি দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি।

এদিকে ধুরইল এলাকার আব্দুস ছাত্তারের পলিনেট হাউজের প্রকল্পটি পরিদর্শনে আসেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক কৃষিবিদ এসএম হাসানুজ্জামান।

তিনি বলেন, বর্তমানে বৈশ্বিক আবহাওয়ার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। কৃষিতেও এর প্রভাব পড়ায় আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি, এরই অংশ পলিনেট হাউজ। এর জন্য আমরা কৃষকদের বিনাখরচে নেট হাউজ নির্মাণ করে দিয়েছি। উপরে যে পদ্ধতিতে ছাউনির ব্যবস্থা করা তার জন্য সূর্যের আলো ৫০ ভাগ কম পড়বে খেতে। এছাড়া চারপাশে পলিনেট দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছে, যাতে কোন পোকা-মাকড় খেতে প্রবেশ করতে না পারে। এখানে কোন কীটনাশক দিতে হবে না। বাইরে যে ফসল করা সম্ভব হবে না, তা পলিনেট হাউজে সারাবছর চাষ করা যাবে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য এখানে নিরাপদ-বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন করব।

তিনি আরও বলেন, এই আধুনিক পদ্ধতিতে শাকসবজি চাষ আরও সম্প্রসারিত হলে একদিকে যেমন সাধারণ মানুষ বিষমুক্ত শাকসবজি খেতে পারবেন, অন্যদিকে কৃষকরাও এ থেকে ব্যাপক লাভবান হতে পারবেন।