ঢাকা, শনিবার ০৬, ডিসেম্বর ২০২৫ ৯:০৬:১০ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

ছেলের ছদ্মবেশে ইটভাটায় ১৮ বছর কাজ করছে সিতারা!

অনলাইন ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪.কম

প্রকাশিত : ০২:৫৩ এএম, ২৫ এপ্রিল ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০২:৫৫ এএম, ২৮ এপ্রিল ২০১৮ শনিবার

মন থকে আস্ত রক্ত-মাংসের শরীরটা, গোটাটাই মেয়েদেরই তার ৷ তবুও বছরের পর বছর সেই পরিচয়ে পরিচিত হতে না পারার যন্ত্রণা, সে কী কম কথা?


মেয়ে হয়েও এক দশকের বেশি সময় ছেলে সেজে থাকার যে কষ্ট, তা জানেন শুধু সিতারা ওয়াফাদারই ৷ ১৮ বছরের ওই তরুণীর বাড়ি আফগানিস্তানের নাঙ্গারহার প্রদেশে ৷

বাবা-মা তাকে জোর করে তাকে এক দশকেরও বেশি সময় ছেলের বেশ ধরে থাকতে বাধ্য করেছিলেন ৷ বাড়িতে মেয়ে আর বাইরে ছেলে এমন দ্বৈত পরিচয়েই সিতারা থেকে গিয়েছেন বছরের পর বছর ৷ আর এই ধরনের মানুষকে আফগানিস্তানে ‘বাছা পোশি’ বলা হয় ৷ কিন্তু কেন এমনভাবে থাকতেন সিতারা?


রক্ষণশীল আফগানিস্তানে সিতারার এই দ্বৈত চরিত্রের পিছনে রয়েছে গভীর বেদনার ইতিহাস। দেশটিতে মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের কদর বেশি । নারীদের বেশির ভাগ সময় নিজের বাড়ির গণ্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয় । বাবা ছাড়া তাঁদের পরিবারের কোনও পুরুষ মানুষ নেই। বাইরের সমাজে মেয়েদের পদে পদে সমস্যা সৃষ্টি হয় ৷ হতে হয় যৌন হয়রানির শিকার । কিন্তু ছেলে হলে আর এ সব সমস্যা স্পর্শ করতে পারে না। মূলত মেয়েদের জটিলতা এড়াতে এবং দরিদ্র পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করতেই তার এই ছদ্মবেশী জীবনযুদ্ধ ।

সিতারারা পাঁচ বোন। তবে তার বাবা-মা চেয়েছিলেন তাদের পুত্র সন্তান হোক ৷ পুত্র সন্তান হলে সে বাইরে খেটে অর্থের সংস্থান করতে পারবে ৷ আর তাতে পারিবারিক সমস্যা খানিকটা হলেও মিটবে ৷ কিন্তু বিধি বাম৷ সিতারার বয়স যখন আট বছর, পেটের টানেই তখন থেকে তিনি ইটভাটায় কাজ শুরু করেন।

তার বড় চার বোনের বিয়ে হওয়ার আগ পর্যন্ত স্কুলে যাওয়ার পরিবর্তনে ইটভাটায় ইট তৈরির কাজই করেছিলেন। আর সেই পথেই এখন রয়েছেন সিতারা। সকাল সাতটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দিনে প্রায় ৫০০ ইট তৈরি করেন তরুণের ছদ্মবেশী এই তরুণী।

তিনি এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এই কাজ করে আমি লজ্জিত নই। কিন্তু মানুষ আমার বয়স নিয়ে কথা বলে। তারা বলে, তুমি সাবালক হয়ে গেছ এবং এখন তোমার ইটভাটায় কাজ করা ঠিক নয়।’


যদি সবাই বুঝতে পারে যে, তিনি ১৮ বছরের তরুণী, এবং সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইটভাটায় তিনি কাজ করেন, তাহলে তাকে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো। এমনটাই ভয় সিতারার৷

এখনও প্রতিদিন ইটভাটায় অমানুষিক খাটুনি খেটে যাচ্ছেন এই তরুণী ৷ জানেন না কোনওদিনও ছেলের খোলস ছেড়ে পুরোপুরি মেয়েদের মতো বাঁচার সম্পূর্ণ অধিকার পাবেন কিনা ৷ সমাজের কাছে তার একটাই প্রশ্ন-‘আমার কী করা উচিত, আমার বিকল্প কোনো পথ নেই।’