চৈতন্য নার্সারী ও ফোরটাঙ্কস গার্ডেন
অনু সরকার
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০৬:৩৫ পিএম, ৩০ এপ্রিল ২০১৮ সোমবার | আপডেট: ০২:৫৮ পিএম, ৩১ মে ২০১৮ বৃহস্পতিবার
সময়টা ১৮৯৪ সাল। প্রায় ১২৪ বছর আগের কথা। বৃটিশ শাসনে এ উপমহাদেশ। আমাদের মাটিতেই পরাধীন আমরা। মুক্ত চিন্তার কোনো সুযোগ নেই। এমন ক্রান্তিকালেই প্রত্যন্ত জনপদ জামালপুর শহরের বোসপাড়ায় এক অভাবনীয় গবেষণায় মেতে ওঠেন উদ্যানবিদ ঈশ্বরচন্দ্র গুহ। তার কর্মপরিধি তখনকার সময়তো বটেই, বর্তমান যুগেও বিস্ময়কর।
তিনি এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির নাম নিজের বাবার নাম অনুসারে রাখেন ‘চৈতন্য নার্সারী’। এর আয়তন ৪৫ বিঘা। নার্সারীর পাশাপাশি ‘ফোরটাঙ্কস গার্ডেন’ নামে একটি মনোরম উদ্যানও তৈরি করেন। দেশের উদ্যান ও কৃষিকে সম্মানজনক স্তরে উত্তরণে তিনি অবসর মুহূর্তটুকু ব্যয় করতেন দেশ বিদেশের ফুল-ফলের চারা উৎপাদনের পরীক্ষা নিরীক্ষায়।
এই নার্সারী ও উদ্যানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে এর শ্রীবৃদ্ধি ঘটিয়ে খাদ্য ও উদ্ভিদজাত দ্রব্যে দেশকে স্বনির্ভর করে তোলার জন্য এটি ছিলো একটি দৃষ্টান্তমূলক প্রতিষ্ঠান। নার্সারি ও উদ্যানকে সমৃদ্ধ করতে মরু অঞ্চল থেকে শুরু করে মেরু অঞ্চলসহ সকল মহাদেশের ফুল-ফল লতাপাতা আলঙ্করিক বৃক্ষ ও অর্থকরী উদ্ভিদ, বীজ প্রভৃতি নিয়ে আসেন তিনি। সেই সময় এই মহাযজ্ঞে সাকুল্যে তার বিনিয়োগ দাঁড়ায় দুই লাখ টাকার কাছাকাছি।
আর এখান থেকে দেশ-বিদেশের বিভিন্না স্থানে বিক্রি হতো প্রায় ৪৬৮৮ ধরনের চারা। কৃষি খামারে নৈনিতাল জাতীয় আলু প্রতি বিঘায় ১১৫ মণ পর্যন্ত উৎপাদন করতে সক্ষম হন ঈশ্বরচন্দ্র গুহ। প্রতিটি আলু ওজনে প্রায় আধাসের পর্যন্ত হতো বলেও জানা যায়।
অর্থকরী বৃক্ষের কথা মাথায় রেখেই নার্সাারীতে তিনি কর্পুর গাছের চারা উৎপাদন করতেন। নিজস্ব গাছ থেকে কর্পুর উৎপাদন করে তিনি ১৯০৬ সালে কলকাতার প্রদর্শনীতে উপস্থাপন করেন। কর্পুর চাষে দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তিনি একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। সেটি অমৃত বাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
বিশ্বমানের এই নার্সারীটি বর্তমানে বিলুপ্ত। বিস্মৃতও বটে। স্থানীয় মানুষরা এ নার্সারি সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানেন না। তবে নার্সারীর শেষ প্রদীপ একমাত্র গর্জন গাছটিকে সবাই ‘লম্বা’ গাছ নামে চেনেন। কিন্তু এর উৎস ও পরিচিতি সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই কারো। বরং কিছু লোককাহিনী প্রচলিত রয়েছে। বিপন্ন এই গাছটির অবস্থান শহরের দয়াময়ী বাড়ির মোড়ে।
এর উল্টোদিকে আরেকটি গাছ ছিলো, জ্বরা দেখা দেওয়ার অজুহাতে পৌর প্রশাসন গাছটি কেটে ফেলে। বেঁচে থাকা গাছটি সংরক্ষণেরও কোনো উদ্যোগ নেই। ৪৫ বিঘার পরিবর্তে ৪৫ ফুট জায়গাও বরাদ্দ নেই গুহ’র জন্য। অথচ একসময় কত জমজমাট ছিলো তার আঙ্গিনা।
সেই বর্ণাঢ্য ইতিহাসের বাঁকে আমি যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করি। কোথায় থাকতেন গুহ, কোথায় বসে কাজ করতেন, পরবর্তীতে তার নামে কোনো স্মৃতি ফলক তৈরি হয়েছিলো কি না। এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর মেলে না।
চৈতন্য নার্সারীর বুকচিরে চলে গেছে শহরের ব্যস্ততম প্রধান সড়ক। চারপাশে অসংখ্য ঘরবাড়ি, পথঘাট, স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মন্দির, দোকানপাট আর ব্যস্ত মানুষের মিছিল। এসবের আড়ালে ঘুমিয়ে আছে কিংবদন্তি সেই নার্সারী।
ঘুরতে ঘুরতে একসময় নিজেকে ‘বাগানবাড়ি লেখা’ একটি পুরনো দালানের সামনে আবিস্কার করি। এর সঙ্গে চৈতন্য নার্সারীর কোনো যোগসূত্র থাকলে থাকতেও পারে। না, সেরকম কিছুই ঘটল না। তবে একটা সূত্র পাওয়া গেল। জানা গেলো স্থানীয় জাকাত মিয়ার (আবদুর রউফ) কাছে গেলে কিছু তথ্য হয়তো পাওয়া যাবে। এই এলাকার সবচেয়ে প্রবীণ মানুষ, বয়স ৮৯। তিনি মাথা নেড়ে বললেন, না বাবা এসব জায়গা অনেক আগেই বেদখল হয়ে গেছে। আমি নার্সারীর কোনো চিহ্নই দেখিনি। তবে বোসপাড়ায় চিত্তদেব, ফটিকদেবদের একটি বাগান ছিলো। সেই বাগানে ছিলো বিচিত্র গাছপালা।
এই সব কথার ফাঁকে বসন্তের কাঁচাসবুজ বিকেল সন্ধ্যার কোলে মুখ লুকাতে থাকে। আমার ভাবনায় শুধু এক বৃহৎ সবুজপ্রাণের কারুকার আর তাঁর কর্মের ব্যাপ্তি ফুটে থাকে।
বিস্মৃত স্মৃতিকণার সন্ধানে আবার বেরিয়ে পড়ি। তরুণ ব্যবসায়ী রমজান আলী রঞ্জু আমাকে বোসপাড়া দেখাতে নিয়ে গেলেন। আর দশটা লোকালয়ের মতোই। মাত্র ১২৪ বছর আগের কথাও কেউ মনে রাখেন নি। চৈতন্য নার্সারীর বুকে এখন ১২৪ বছরের জনপদ, কিছুই বোঝার উপায় নেই। এই নার্সারীর কথা শোনেননি এমন মানুষও এই শহরে অনেক আছেন। গর্ব করার মতো এই বিষয়টি নিয়ে কাউকে খুব একটা উৎসাহী বলেও মনে হলো না।
পরের দিন স্থানীয় সাংবাদিক মোস্তফা মনজু আমাকে নিয়ে গেলেন বর্তমান পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিসের পেছনে। এখানে আছে ৬টি পুরনো রয়্যাল পাম। স্থানীয় গবেষকদের ধারণা এগাছগুলোও ঈশ্বর চন্দ্র গুহ’র লাগানো। চৈতন্য নার্সারীর মূল কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত স্থানেই পামগুলোর অবস্থান।
গুহর নতুন জীবন :
বহুমুখী প্রতিভাধর ঈশ্বর চন্দ্র গুহকে নতুন জীবন দান করেন অধ্যাপক মু. আজিজুর রহমান। তিনি প্রথমে চৈতন্য নার্সারী নিয়ে ও পরে ঈশ্বর চন্দ্র গুহ’র জীবন নিয়ে মোট দু’টি বই রচনা করেন। বইয়ের পাতায় পাতায় তার শ্রমের ছাপ স্পষ্ট। জীবনের একটি বড় সময় তিনি এর পেছনে ব্যয় করেছেন। তথ্য উদ্ঘাটনে ছুটে বেড়িয়েছেন যত্রতত্র। একটা অস্থির সময়ে আমরা যখন বেপথু ঠিক তখনই উজ্জ্বল নক্ষত্রসম এক উদ্যানবিদকে আমাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন তিনি। গুহ’র জীবন ও কর্মতৎপরতার কোনো তথ্যই সুশৃঙ্খলভাবে সংরক্ষিত ছিলো না। এ ক্ষেত্রে তার প্রধান উৎস গুহ’র নাতনী ড. সবিতা গুহ। তার অনেক তথ্যে আরো সমৃদ্ধ হয় গ্রন্থ দু’টি। আজিজুর রহমান যদি এই গুরুদায়িত্ব পালন না করতেন তাহলে ঈশ্বরচন্দ্র গুহ পুরোপুরিই বিস্মৃত হয়ে যেতেন।
ফোরটাঙ্কস গার্ডেন :
চৈতন্য নার্সারীর প্রধান আকর্ষণ ছিলো মূলত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নির্মিত বাংলাদেশের প্রথম উদ্যান ফোরটাঙ্কস গার্ডেন। এই উদ্যানেও গুহ অনেক প্রায়োগিক গবেষণা চালান এবং সে সব অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘কৃষি সম্পদ’ ও ‘কৃষি সমাচার’ পত্রিকায় দুটি তথ্যবহুল প্রবন্ধ লেখেন। এখানকার যাবতীয় সংগ্রহ বিভিন্ন পর্যায়ে বিভক্ত ছিলো। ফলোদ্যান, জলোদ্যান, বিভিন্ন দেশ থেকে সংগৃহীত আলঙ্করিক বৃক্ষ, গ্রীণহাউজে সংরক্ষিত শীতপ্রধান অঞ্চলের গাছ, সাত’শ প্রজাতির গোলাপ, আঁকাবাঁকা পথ, কৃত্রিম পাহাড়, আমাজান লিলি, অর্থকরী ও ওষুধি বৃক্ষ, ইত্যাদির সমন্বয়ে শৈল্পিক হয়ে ওঠে ফোরটাঙ্কস গার্ডেন।
উদ্যান রচনায় প্রথমেই তিনি আলো-ছায়া, সূর্যের উত্তাপের বিষয়টি মাথায় রাখেন। জলোদ্যানের পুকুরগুলো এমনভাবে খনন করা হয় যাতে শেষ সূর্যের আলোটুকু নির্বিঘ্নে প্রতিফলিত হতে পারে।
গ্রীন হাউজে ছিল নানান জাতের ফার্ণ, অর্কিড, অ্যাজালিয়া ও হিমালয়ী বিচিত্র লতা-গুল্ম। বর্তমান হোসেন মঞ্জিল ও সংলগ্ন বাড়ি ছিলো এর মূল কেন্দ্র।
জনৈক উদ্ভিদবিজ্ঞানীর বক্তব্যে অ্যাজালিয়া চাষকে তিনি চ্যালেঞ্জ হিসেবেই গ্রহণ করেন এবং সফলও হন। অ্যাজালিয়ার চারা সংগ্রহ করেন জাপান থেকে। বিভিন্ন ধরণের পতঙ্গভূক গাছপালা এ বাগানের বাড়তি আকর্ষণ হয়ে ওঠে। দেশ-বিদেশের দুস্প্রাপ্য অর্কিডে সমৃদ্ধ ছিল অর্কিড বাগান। নার্সারীর ক্যাটালগে ২৮৮ প্রকার অর্কিডের সন্ধান পাওয়া যায়। সংগ্রহটি নি:সন্দেহে বিস্ময়কর। কয়েকবার চেষ্টার পর বিশেষ পদ্ধতিতে তিনি আমাজান লিলিও ফোটাতে সক্ষম হন। গুহ এর নাম লিখেছিলেন ’নীল পদ্ম’। সময়ের বিচারে তাও ছিলো আরেক বিস্ময়। সুদূর আমেরিকা থেকে সংগ্রহ করেন বীজ। হল্যান্ড থেকে বীজ আনিয়ে জাফরান চাষেও সফল হন। মশলার চেয়ে তিনি এর বাহারি রঙকেই প্রাধান্য দেন। আমাদের আবহাওয়ায় জাফরান চাষ প্রায় অসম্ভব। এক্ষেত্রেও তিনি অসাধ্য সাধন করেছেন।
জলোদ্যান ছিল ফোরটাঙ্কস গার্ডেন’র ঈর্ষণীয় সংযোজন। দেশীয় জলজ উদ্ভিদের পাশাপাশি তিনি এখানে উষ্ণ ও উপ-উষ্ণ অঞ্চলের অনেক ধরণের প্রজাতিরও সমাবেশ ঘটান। পদ্ম-শাপলার সহাবস্থানে ছিল সাদা ও লাল রঙের জাপানী শতদল পদ্ম, ওয়াটার পপি, ওয়াটার ফর-গেট-মি-নট প্রভৃতি।
ফার্ণ ঘরে ছিল ৩১১ ধরণের ফার্ণ। আলঙ্করিক বৃক্ষের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল আফ্রিকান অয়েল পাম, মোমপ্রেদ তালগাছ, আমব্রেলা পাম, অ্যানথোরিয়াম, রঙন, অরকেরিয়া, থুজা, পাইন, বিগোনিয়া প্রভৃতি। তবে সবকিছু ছাড়িয়ে খ্যাতির স্বর্ণ শিখরে আরোহণ করে এখানকার গোলাপ বাগান। তবে এই বর্ণাঢ্য সংগ্রহের জন্য গুহকে অপেক্ষা করতে হয়েছে বছরের পর বছর। গোলাপের উপস্থাপন ছিল যথেষ্ট আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত। প্রতিটি গাছের সঙ্গে নামফলক ও সংক্ষিপ্ত বিবরণীও লিপিবদ্ধ ছিল। উদ্যানের লনে সযত্নে লালিত সবুজ ঘাসের গালিচা, প্রবেশ পথের দু’ধারে বিচিত্র গাছের সারি, মেহগিনি ইউক্যালিপটাসে ঘন সবুজের প্রচ্ছায়া, লতাকুঞ্জ, বাহারী মৌসুমী ফুলের বিচিত্র পরিবেশ-সব মিলিয়ে স্বর্গীয় সুষমা।
ফোরটাঙ্কস গার্ডেন এতটাই পরিকল্পিত ছিল যে এখানে ঋতুভেদে সারাবছরই কিছু না কিছু ফুল, ফল পাওয়া যেত।
আন্তর্জাতিক অঙ্গণে পরিচিতি :
চৈতন্য নার্সারী নি:সন্দেহে এ অঞ্চলে অদ্বিতীয় ছিল। শুধু এখানেই নয়, এর খ্যাতি ও কার্যক্রম ছিল বিশ্বজোড়া। বিদেশ থেকে এখানে যেমন বীজ, চারা ও উদ্যান উপকরণ আসত তেমনি বিভিন্ন দেশে পাঠানও হতো। নার্সারীর ব্যবহৃত টেলিগ্রাফিক ঠিকানা BOTANICHEN, JAMALPORE-এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
মৌরিশাস সরকারের বন ও উদ্যান বিষয়ক পরিচালক সে দেশে ব্যাপক পিয়াল চাষের লক্ষ্যে ১০ পাউন্ড বীজ চেয়ে চৈতন্য নার্সারীতে চিঠি লেখেন। এছাড়া চৈতন্য নার্সারীর বীজ পেয়ে এন্টিগুয়া থেকে চিঠি লেখেন A. S ArcherA. S Archer এবং একই কারণে অস্ট্রেলিয়া বোটানিক্যাল গার্ডেনের পরিচালক ড. R Guilfoyleও চিঠি লিখেন। শ্রীলঙ্কার J P WILLIAM & BROTHERS চৈতন্য নার্সারী থেকে আম ও লিচুর কলম কেনার জন্য মূল্য তালিকা চেয়ে চিঠি লিখেছিল। মালয়েশিয়া পরীক্ষামূলক ভাবে কর্পুর চাষের জন্য এক পাউন্ড কর্পুর গাছের বীজ চেয়ে অর্ডার পাঠায়। রাশিয়ার সঙ্গেও চৈতন্য নার্সারীর পত্র যোগাযোগ ছিলো।
সাধারণের সুবিধার্থে ১৩২২ বঙ্গাব্দে ঢাকার তাঁতি বাজারে চৈতন্য নার্সারীর একটি শাখা খোলা হয়। এর দায়িত্বে ছিলেন বিহারীলাল দত্ত। জামালপুরের স্থানীয় সাংবাদিক মোস্তফা বাবুল জানিয়েছেন ঢাকার কার্জন হল ও বাহাদুর শাহ পার্কের রয়্যাল পামগুলো চৈতন্য নার্সারী থেকে সংগ্রহ করা। ১৯০৫ সালে ঢাকা বিভাগের কমিশনার T. Ingles-এর লেখা একটি চিঠি থেকে এই তথ্যের সত্যতা মেলে।
গুহ তার নার্সারীর কার্যক্রমের জন্য একটি চমৎকার মনোগ্রামও তৈরি করেন। প্রসঙ্গত মু. আজিজুর রহমান জানান ‘হিমালয় হতে কন্যাকুমারী এবং চীন হতে সুদূর পেরু, বলতে গেলে সমগ্র পৃথিবীর উদ্যানবিদ ও কৃষি তত্ত্বাভিজ্ঞদের নিকট পরিচিত ছিল।’
গুহ উপঢৌকন হিসেবে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গের কাছে বাগানে উৎপাদিত ফল, ফুল ও শাকসবজি পাঠাতেন। তারা আবার সপ্রশংস চিঠি লিখে তাকে ধন্যবাদও জানাতেন। নার্সারীর শ্রেষ্ঠ কৃষি পণ্য সাড়ে সাত সের ওজনের ফুলকপি, ১২ সের ওজনের বাঁধাকপি ও ৭ সের ওজনের মুলা। গুহ এই ফুলকপি ও বাঁধাকপি ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার লটমন জনসকে উপহার দেন। উপহার গ্রহণ করে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন, ‘I have never seen such big cauliflower and cabbage even in London market।’
ঈশ্বর গুহ ছিলেন অত্যন্ত অতিথিবৎসল ও সঙ্গীত অনুরাগী। সমাজের গুণীজনদের তার বাগান পরিদর্শনে আমন্ত্রণ জানাতেন। আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে অনেকেই আসতেন এই বিস্ময়কর বাগান দেখতে। অতিথিদের নিয়ে আয়োজন করা হতো জমকালো অনুষ্ঠান। অনেক দিন পর স্বনামে খ্যাত মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকার সম্পাদকীয়তে ঈশ্বরচন্দ্র গুহ’র কর্মকান্ডকে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে স্মরণ করা হয়, ‘এই তো সেই ঈশ্বরের বরপুত্র ঈশ্বরচন্দ্র গুহ, যাঁর সারা চৈতন্যে জুড়ে ছিল চৈতন্য নার্সারী। তিনি গাছপালাকে যেমন ভালোবেসেছিলেন, তাঁর স্বদেশবাসীকেও ততটাই। তিনি এদেশের মানুষকে গাছপালার প্রতি সদয় হওয়ার জন্য যেমন আহবান জানিয়েছিলেন তেমনি তাঁর বিভিন্ন রচনার মধ্য দিয়ে নানা লাভজনক ব্যবসার নতুন নতুন পথের সন্ধান দিতেও কার্পণ্য করেন নি।’ (২য় বর্ষ, ২য়-৩য় সংখ্যা, অক্টোবর’ ৮৬-মার্চ, ১৯৮৭)।
কৃষি-সংবাদ পত্রিকায় ১৩৩৭ বঙ্গাব্দে কার্তিক-অগ্রহায়ণ সংখ্যায় সম্পাদকীয়তেও গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করা হয়-‘জীবনের প্রায় আর্ধশতাব্দী পর্যন্ত উদ্যানিক কৃষিকর্মে সংশ্লিষ্ট রহিয়া এবং নিজের অর্থ-ব্যয় করিয়া ঈশ্বরচন্দ্র তাঁহার কর্মস্থল ময়মনসিংহ-জামালপুরে ‘চৈতন্য নার্সারী’ প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন।’
কৃষি উদ্যানের সংগ্রহ :
চৈতন্য নার্সারীর প্রতিটি কাজই ছিল ছকেবাঁধা, গোছান, সর্বোপরি বিজ্ঞানসম্মত। গুহ সকল সংগ্রহের জন্য একটি ক্যাটালগ নাম্বার ব্যবহার করতেন। ক্যাটালগে উল্লেখ থাকত সংশিষ্ট গাছের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। এসব ক্যাটালগ আবার বিজ্ঞাপনের কাজেও ব্যবহার করা হতো। এসব কর্মকান্ড থেকে সহজেই অনুমেয় চৈতন্য নার্সারী কতটা আধুনিক ও বাণিজ্যিক ছিল।
নার্সারীর সকল সংগ্রহকে তিনি আধুনিক পদ্ধতিতে বিন্যাস করতেন। মাঠের শস্যের মধ্যে ছিল ধান, তুলা, গোলআলু, রিহা; সবজি বাগানে ছিল বেগুন, কপি, রুবার্ব, এ্যাসপারাগাছ, জাপানি কচু; ফলের সংগ্রহে ছিল আম, লিচু, পীচ, আলু বোখারা, কমলালেবু, খেজুর ইত্যাদি; অর্থকরী বৃক্ষ হিসেবে ছিল বিভিন্ন পাম, কর্পুর, জাপানি তুঁত, মোমপ্রদ পাম, পোর্টুমেন্টো, রিঠা, কফি, রাবার, সেগুন, নীল, লগউড, গোলমরিচ, দারুচিনি, এলাচ, পান ইত্যাদি; ভেষজ গাছের মধ্যে ছিল চালমুগরা, বরুণ, লতাকস্তুরি, ঈশবগুল, পিপ্পলী, নিম, কালোমেঘ, বাসক, ভূর্জপত্র, সর্পগন্ধা, দাঁদমর্দন, ভৃঙ্গরাজ ইত্যাদি; আলঙ্করিক বৃক্ষের সংগ্রহ ছিল ব্যাপক-সুলতানচাঁপা, স্বর্ণচাঁপা, উইপিং উইলো, আমহার্দ্বয়া, উদয়পদ্ম, পাখিফুল, জ্যাট্রোফা, চামেলী, স্থলপদ্ম, ইয়ক্কা, দোলনচাঁপা, কলাবতী, লিলি, রজনীগন্ধা, নার্গিস, অ্যালমান্ডা, বিউমনশিয়া, কমব্রেটাম, থানবার্জিয়া, সাইপ্রেস, জুনিফার, সাইকাস, জুনিফার থুজা, বিচিত্র অর্কিড, গোলাপের মধ্যে বুর্বন রোজ, চায়না রোজ, টি-রোজ, পলিয়েন্থা রোজ, ক্যাপ্টেন ক্রিদ্ব, জেনারেল জ্যাকুইমিন্ট, লা ফ্রান্স, ফায়ার ব্যান্ড, হোরেস ভারনেট, এ্যামাবিলিস, এলিস সভেজ, ম্যারি ভ্যান হট ইত্যাদি অন্যতম ছিল।
বহুমুখী প্রতিভা :
দরিদ্র ঘরের সন্তান ঈশ্বরচন্দ্র গুহ বহু কষ্টে পড়াশোনা করেন। অনেক পেশা বদলে শেষ পর্যন্ত আইন পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। এতে সফলতা আসে, উপার্জনও বাড়ে। উপার্জিত সকল অর্থ নার্সারীর কাজে ব্যয় করেন। নার্সারীর কাজে কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না তার। শুধুমাত্র সাধনা থেকেই অসাধ্য সাধন করেন তিনি। লেখালেখির প্রতিভাও ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। তিনি ছিলেন কৃষি ও উদ্যান সাহিত্যের লেখক। পরবর্তীতে তার সমস্ত লেখা একত্র করে ১৩ খন্ডে ‘উদ্ভিদের বিশ্বকোষ’ শিরোনামে গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগ নেন। কিন্তু শেষ সময়ে আর্থিক টানাপোড়ন ও নানা জটিলতায় গ্রন্থটি আলোর মুখ দেখেনি। ঈশ্বরচন্দ্র গুহর পুত্র ভূদেব চন্দ্র গুহ পিতার এই আরদ্ধ কাজকে তার মৃত্যুর আগেই প্রকাশের উদ্যোগ নেন। তিনি ১৩১৯ বঙ্গাব্দে প্রকাশিতব্য ‘উদ্ভিদের বিশ্বকোষ’ সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ ও প্রতিখন্ডের বিষয়সূচিসহ ‘কৃষি সংবাদ’ পত্রিকায় প্রকাশের ব্যবস্তা করেন। তখন গ্রন্থটি ১০ খন্ডে সমাপ্ত করার পরিকল্পনা করা হয়। শুধু এটুকুই নয়, গাছপালার বিভিন্ন অংশ কাজে লাগিয়ে তিনি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য তৈরি করে বাজারজাতও করতেন।
শেষ পরিণতি :
ঈশ্বরচন্দ্র গুহ ছিলেন সঙ্গীতপ্রিয়, ধর্মপরায়ণ আবার বেহিসেবি। তার সরলতার সুযোগে বাগানের আয় ব্যয়ের সঠিক হিসাব গোপন করা হতো। এদিকে বাগানের সকল ব্যয় তিনি বিনাবাক্যে মিটাতেন। তার পরিবারে সদস্য কম থাকলেও আশ্রিত ছিলেন অনেক। শেষ দিকে অতিরিক্ত পরিশ্রমে তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে, উপার্জনও কমে যায়। চরম আর্থিক সঙ্কটে পড়ে গুহ পরিবার।
লুপ্ত ঐতিহ্য চৈতন্য নার্সারী গ্রন্থে মু. আজিজুর রহমান জানান ‘চৈতন্য নার্সারী ১৮৯৪ সাল থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৬/২৭ বছর জাঁকজমকের সঙ্গে এর সকল প্রকার কাজকর্ম চালিয়ে গেছে। কিন্তু এর পর থেকেই নার্সারী ও এর পরীক্ষামূলক কৃষি খামার পরিচালনায় বিভিন্ন প্রকার সমস্যা এসে দাঁড়ায়। এই সঙ্কট ঈশ্বরচন্দ্র গুহের মৃত্যুকাল ১৯২৪ সাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।’
জীবদ্দশাতেই গুহ বাগানের করুণ পরিণতি দেখেছেন, প্রত্যাশা ছিল কোনো সমাজপতি হয়তো বাগানের হাল ধরবেন। কিন্তু তার সে আশা পূরণ হয় নি। বিভিন্ন সূত্র ও উদ্বৃতি থেকে প্রমাণিত হয়, গুহ রাজনৈতিক কারণে বৃটিশদেরও বিরাগভাজন হন। এ কারণে সরকারিভাবে কোনো পৃষ্ঠপোষকতাও পাননি। ধারণা করা হয়, অর্থকষ্টে পড়ে গুহ শেষ পর্যন্ত কিছু জায়গা বিক্রি করে দেন।
বেঁচে থাকতে তো নয়ই মৃত্যুর পরও তার এই বিশাল কর্মযজ্ঞের কোনো স্বীকৃতি মেলেনি। এমন কি পালিত হয় না তার জন্ম-মৃত্যু দিবস। তার নামে নেই কোনো স্মৃতিসংঘ-স্মৃতিফলক বা প্রতিষ্ঠান, খোদ জামালপুরেই বিস্মৃত তিনি। এই বিজ্ঞানীর সঠিক মূল্যায়ন হলে আমাদের লুপ্ত ঐতিহ্যও ফিরে পাবে হারানো গৌরব।
আপন আলোয় :
জামালপুর শহরের কুরুশা (বর্তমানে কুর্শা) গ্রামে ১২৬৫ বঙ্গাব্দের ১৩ অগ্রহায়ণ শনিবার ঈশ্বরচন্দ্র গুহ এফ আর এইচ এস মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা চৈতন্য গুহ, মায়ের নাম জানা যায় নি। দরিদ্র ঘরের সন্তান ঈশ্বরচন্দ্র জন্মের দুবছরের মধ্যে মাকে হারান। তারপর পিসিমা রাসমণি দেবীর আশ্রয়ে যান। এখানেও ভাগ্য নির্মম, মাত্র ৮ বছর বয়সে পিসিমাকেও হারান। আবার ফিরে যান মাতুলালয়ে, সঙ্গে বাবাও। ভগ্নদেহ, ভগ্নস্বাস্থ্যের কারণে চৈতন্য গুহ আর বেশিদিন বাঁচলেন না। ১২৭৭ বঙ্গাব্দের চৈত্র মাসে ইহলোক ত্যাগ করেন তিনি।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে সম্পন্ন একা ঈশ্বরচন্দ্র। মাতুলালয়ের অবস্থাও অসচ্ছল। সেখানে গো-পালন থেকে শুরু করে সব ধরণের কাজই তাকে করতে হতো। ফলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কোনো সুযোগ থাকল না। এ অবস্থায় মাতামহী একটি সচ্ছল পরিবারে তার বিয়ের ব্যবস্থা করেন (১২৭৯ বাং)। তার শ্বশুর আইনজীবী। তিনি জানতেন ঈশ্বরচন্দ্র মেধাবী ও অধ্যবসায়ী। তাই জামাতাকে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে উদ্যোগী হলেন তিনি। কিন্তু সে সময়ে উচ্চশিক্ষার কোনো সুযোগ ছিল না জামালপুরে।
আনুমানিক ১২৮৬ বঙ্গাব্দে প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য নৌকায় করে ঢাকা যাত্রা করেন তিনি। কিন্তু ঢাকা পৌঁছেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ কারণে পুরোপুরি পরীক্ষা না দিয়ে আবার জামালপুরে ফিরে যান। আনুষ্ঠানিক লেখাপড়া এ পর্যায়েই শেষ।
পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। কিন্তু স্বাধীনচেতা, তেজস্বী ও আত্মাভিমানী ঈশ্বরচন্দ্র নিজেকে কোথাও মানিয়ে নিতে পারেন নি। স্বাধীন ও স্বাবলম্বী হয়ে বেঁচে থাকতে চাইলেন। আইন ব্যবসা করার জন্য মনোস্থির করলেন। তিন মাস পড়াশুনা করে ইংরেজি ১৮৮৪ সালে মোক্তারী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৮৮৫ সালে আইন ব্যবসা শুরু করেন।
ঈশ্বরচন্দ্র’র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সামান্য হলেও প্রচুর পড়াশুনা করতেন। জানার আগ্রহ ছিলো অদম্য। এই জ্ঞানপিপাসাই তাকে আজীবন অধ্যয়নে জড়িত রেখেছে। নিরলস অধ্যয়নের ফলশ্রুতিতে তিনি ‘কৃষি ও উদ্যানতত্ত্ব বারিধি বা উদ্ভিদের বিশ্বকোষ’ ১৩ খন্ডে আনুমানিক ৩ হাজার পৃষ্ঠা সম্বলিত গবেষণামূলক বাস্তব জ্ঞানলব্ধ গ্রন্থের পান্ডুলিপি তৈরি করেছিলেন।
১৩৮৫ বঙ্গাব্দে শ্বশুরের মৃত্যু হলে সংসারের সকল দায়িত্ব গুহ’র ওপর বর্তায়। অগত্যা আবার চাকুরি নিতে বাধ্য হন। স্কুলে শিক্ষকতা দিয়ে তার কর্মজীবনের শুরু। সাকুল্যে মাসিক বেতন ১৫ টাকা। শেষমেষ আইন ব্যবসায়ে জড়িয়ে পড়েন। তাতে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে আসে, আশাতীত সফলতা ধরা দেয়।
এ প্রসঙ্গে তার নাতনী ড. সবিতা গুহ’র মন্তব্য, ‘শিক্ষকতা দিয়ে জীবন শুরু করেন। কিন্তু পরে আইন ব্যবসায় লিপ্ত হন। আইন ব্যবসায়ে তার প্রচুর অর্থ সমাগম হতো। তখনকার দিনের অনেক বড় মানুষের মতো তিনি জুড়ি গাড়ি হাঁকিয়ে আরাম করে জীবন কাটাতে পারতেন।কিন্তু তিনি তা করেননি’
পরিবারে প্রাচুর্যতা ধরা দিলে তার সংসার-জীবন আনন্দ উচ্ছ্বাসে ভরে ওঠে। তিনি ছিলেন সঙ্গীত রসিক, সঙ্গীত পিপাসু সুধীজন নিয়ে একটি দল ছিলো। পাখোয়াজ বাজনায় তার জুড়ি ছিলো না। এই শিল্পী মনই তাকে সম্ভবত অলঙ্কারিক বৃক্ষচাষ ও উদ্যান নির্মাণে উদ্ভূদ করে।
খরচের ক্ষেত্রে কিছুটা বেহিসেবী ছিলেন। তার সহযোগীতায় বহু দরিদ্র ছাত্র পড়ালেখার সুযোগ পেয়েছে। ধর্মের প্রতি ছিলো প্রগাঢ় বিশ্বাস। জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে প্রতিবছর দেবী কালিকার অর্চনা করতেন। কিন্তু পূজায় পশুবলি হতো না, বাজি পোড়ানো হতো। জামালপুরের ইতিহাসে এ উৎসবও স্মরণীয় ঘটনা।
গুহ’র শেষ জীবন ছিল বড়ই কষ্টকর। অত্যধিক পরিশ্রম ও অনটনের কারণে স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে। চরম হতাশা গ্রাস করে তাকে। অবশেষে ৬৪ বছর বয়সে ১৩৩০ বঙ্গাব্দের ৮ বৈশাখ বিকল্পধারার এই গবেষক দেহত্যাগ করেন।
আমরা এখন দু’একটি বিদেশি ফল-ফুল চাষ করে বেশ পুলকিত বোধ করি। কিন্তু এসবের অধিকাংশই চৈতন্য নার্সারীতে পাওয়া যেত। এখানে নতুনভাবে শুরু করা যেসব বিদেশী ফল-ফুলের চাষ করা হচ্ছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্রেডফ্রুট, পীচ, স্টার আপেল, স্ট্রবেরি, আলুবোখারা, অ্যাজালিয়া, জাফরান, আমাজান লিলি, সাইপ্রেস, কফি ইত্যাদি। এসব চৈতন্য নার্সারীতেই চাষ হতো। অথচ এক’শ বছরের বেশি সময় পরে এসে আমরা আবার নতুন করে শুরু করেছি। রাখতে পারিনি ধারাবাহিকতা। ফলে পিছিয়ে পড়েছি। শুধু এক্ষেত্রেই নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। অতীতকে ধারণ করে এগুতে না পারায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি জাতীয় উন্নয়ন ও মূল্যবোধের প্রকৃত কাঠামো থেকে। কোনো জাতির জন্যই এটা সুখকর নয়।