নিঝুম দ্বীপের খেজুর রস-গুড় যাচ্ছে বিভিন্ন অঞ্চলে
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১২:০৩ পিএম, ২ জানুয়ারি ২০২৩ সোমবার
ফাইল ছবি
গ্রামের প্রতিটি সড়কে সারি সারি খেজুর গাছ। গাছে লাগানো হাড়ি। রাতভর ফোঁটা ফোঁটা রস পড়ে ভর্তি হয় হাড়িগুলো। কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে সেই রস সংগ্রহ করছে গাছিরা। গাছিদের সঙ্গে থেকে পরিবারের শিশুরা এগিয়ে দিচ্ছে কলসি-হাড়িগুলো। গ্রামের চিরায়িত এই দৃশ্য নোয়াখালী দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপে।
এখন শীতের মৌসুম হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা ছুটে আসছেন নিঝুম দ্বীপে। বনের হরিণ দেখার পাশাপাশি দ্বীপের বিভিন্ন খাবাররের স্বাদ গ্রহণ করছেন তারা। বিকেলে ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছে তাজা খেজুর রস খাওয়ার আগ্রহ অনেক।
নিঝুম দ্বীপের গাছি আবুল হাসেম জানান, প্রতিদিন বিকেলে ভ্রমণে আসা লোকজন রস খেতে আসে। বাড়ি থেকে গ্লাস এনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তাজা রস খাওয়ান পর্যটকদের। গাছের নিচে দাঁড়িয়ে তাজা রসের স্বাদ গ্রহণ করতে পেরে খুশি পর্যটকরা। কেউ কেউ কাঁচা রস চুলাই বসিয়ে একটু গরম করে নিয়ে যান।
গাছি হাসেম আরও জানান, প্রতি হাড়ি রস ৬০-৭০ টাকা করে বিক্রি করেন। এখন রসের কদর অনেক বেশি। রস দিয়ে পায়েস ও পিঠা তৈরি করতে লোকজন এসে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। শতাধিক গাছ কেটে প্রতিদিন এক শ হাড়ি রস পান। এর মধ্যে সকালে অর্ধেকের চেয়ে বেশি রস বিক্রি হয়ে যায়। বিক্রি হওয়ার পর যা থাকে তা দিয়ে গুড় তৈরি করেন। নিঝুম দ্বীপের গুড়ের অনেক সুনাম রয়েছে। বিক্রি করার জন্য বাজারে নেওয়া লাগে না। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা লোকজন বাড়ি থেকে এই গুড় কিনে নিয়ে যায়।
শুধু নিঝুম দ্বীপে নয়, এই দৃশ্য হাতিয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের সবকটি ইউনিয়নে। গাছিদের মধ্যে অনেকে বংশানুক্রমে এই পেশায় জড়িত। শীত এলে তারা নিজেদের গাছ ছাড়াও, বর্গা বাগে অন্যের গাছও কাটেন। বিকেলে স্থানীয় গ্রামীন হাটে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় বসে গুড় বিক্রি করেন গাছিরা। স্থানীয় লোকজন এসে চিতল পিঠা খাওয়ার জন্য কিনে নিয়ে যান। শীতের সকালে নারকেল ও খেজুর গুড় দিয়ে চিতল পিঠা খাওয়া এই দ্বীপের শত বছরের ঐতিহ্য।
জাহাজমারা হাতিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের সব চেয়ে বড় বাজার। এই বাজারের বনিক সমিতির সভাপতি জয়নাল মিয়া জানান, সপ্তাহে দু’দিন হাঁট বসে এই বাজারে। এতে প্রতি হাঁটে প্রায় ৪০-৫০ মন খেজুর গুড় বিক্রি হয়।
উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নর আমতলি গ্রামের বাসিন্ধা আব্দুল কুদ্দুছ। গত ৩০ বছর ধরে তিনি খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহের সঙ্গে জড়িত। কুদ্দুছ মিয়া জানান, দুই শতাধিক গাছ কেটে প্রতিদিন এক শ হাড়ি রস সংগ্রহ করে থাকেন। এতে দৈনিক ১৮-২০ কেজি গুড় তৈরি করতে পারেন। প্রতি কেজি গুড় স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন। গাছ কাটা, রস সংগ্রহ করা, হাড়ি পরিষ্কার ও চুলাই রস জ্বাল দেওয়া এসব কাজে পরিবারের দুই-তিনজন লোক নিয়োজিত থাকেন। খরচ বাদে ভালো লাভ হয় তাদের।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, পরিসংখ্যান অনুযায়ী হাতিয়াতে ৩০ হেক্টর জমিতে খেজুর গাছ রয়েছে। প্রতি হেক্টরে গাছ রয়েছে এক হাজার ৯৯টি। এক একটি গাছে মৌসুমে ১৬ কেজি করে গুড় পাওয়া যায়। তাতে বছরে হাতিয়াতে ৫২৭ টন গুড় পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল বাছেদ সবুজ বলেন, খেজুরের রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরি করা এই দ্বীপের জন্ম থেকে হয়ে আসছে। হাতিয়ার খেজুরের গুড় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। আগে হাতিয়ার সব কটি ইউনিয়নে খেজুর গাছ ছিল, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন অনেক গাছ মরে গেছে। এখন নিঝুম দ্বীপসহ দক্ষিণাঞ্চলে বেশি দেখা যায়। তবে সরকারিভাবে এই লাভজনক গাছ লাগানোর চেষ্ঠা করা হচ্ছে।
