জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরি দীর্ঘদিন বন্ধ, নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান বই
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১২:২২ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০২৩ সোমবার
জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরি
বই আলো ছড়ায়, বই জ্ঞান বৃদ্ধি করে, বই নতুন প্রজন্ম সৃষ্টি করে। অথচ জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরিতে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ে আছে ৩৪ হাজার বই। গত ছয় মাস ধরে বন্ধ হয়ে গেছে এই সমৃদ্ধ পাঠাগারটি। পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
এক সময় জামালপুরের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সূতিকাগার ছিল জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরি। কমিটির নিস্ক্রিয়তায় দেশি-বিদেশি দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ অচলাবস্থা থেকে প্রায় ৬ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে নষ্ট হতে বসেছে প্রায় ৩৪ হাজার মূল্যবান বই।
স্থানীয় সূত্র বলছে, বৃটিশ আমলে এই লাইব্রেরি গড়ে ওঠে। পরে ১৯৫৯ সালে পৌরসভার দুতলা বিল্ডিংয়ের একটি কক্ষে পাবলিক লাইব্রেরির কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৬ সালে শহরের বকুলতলা মোড়ে ২৯ শতাংশ ভূমিতে নিজস্ব একতলা ভবন তৈরি করা হয়। তখন থেকেই এই পাবলিক লাইব্রে এলাকার শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠে। এক সময় এ লাইব্রেরি পাঠকের আনাগোনায় মুখরিত থাকতো। প্রতিদিন বিকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত প্রায় শতাধিক পাঠক বই লেনদেন ও সংবাদপত্র পড়তে ভিড় জমাতেন।
এ লাইব্রেরি দেশি-বিদেশি মূল্যবান বই ও চাকরির বিজ্ঞাপন সংগ্রহের একমাত্র ভরসাস্থল ছিল। সরকারি-বেসরকারি অনুদানে প্রায় ১৮ হাজার বই কেনা হয়েছিল। এখন মোট ৩৪ হাজার বই আছে। পাঠকও ছিল অনেক। কিন্তু কালের বিবর্তনে পাঠক কমে গিয়ে বর্তমানে ছাত্র পাঠক ২৪৯ জন। এ ছাড়া সাধারণ সদস্য ও আজীবন পাঠক সদস্য রয়েছেন ১৭৫ জন। একজন লাইব্রেরিয়ান ও একজন পিয়ন লাইব্রেরির দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা দুজনে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে লাইব্রেরিটি চালালেও দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা থেকে বর্তমানে প্রায় ৬ মাস ধরে একবারে বন্ধ রয়েছে।
সদস্যদের মাসিক চাঁদা ও হল রুম ভাড়ার টাকা ছিল লাইব্রেরির আয়ের উৎস। এ টাকা দিয়ে চলত তাদের বেতন। কিন্তু সদস্যদের মাসিক চাঁদা ও হল রুম ভাড়া না হওয়ায় তাদের বেতন বকেয়া পড়েছে। অসুস্থতা ও বেতন বকেয়ার কারণে তারাও দায়িত্ব পালন করছেন না। লাইব্রেরি পরিচালনার জন্য একটি আহ্বায়ক কমিটি থাকলেও তাদের কোন কার্যক্রম নেই বললেই চলে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জরাজীর্ণ বিল্ডিং। লাইব্রেরির ভেতরে প্রবেশের প্রধান ফটকের কেঁচি গেইটে তালা ঝুলছে। ভেতরে অন্ধকার। ডেক্সগুলো জমানো। কিছু সংস্কার কাজ হলেও বইগুলো পড়ে রয়েছে। এখনো সেলফে উঠেনি। ধুলোবালি, পোকা-মাকর, মাকরশা ছেঁয়ে গেছে বই রাখার বিশাল কক্ষটি। ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান বই ও নথিপত্র।
এ বিষয়ে লাইব্রেরিয়ান শ্যামল চন্দ্র দাস জানান, শরীরিক অসুস্থতার জন্য অনেক দিন থেকে আমি লাইব্রেরির কাজ ছেড়ে দিয়েছি। এখন কি অবস্থা বলতে পারব না। তবে অনেক দিনের বিদ্যুৎ বিল ও বেতন বকেয়া রয়েছে।
জামালপুর পাবলিক লাইব্রেরির পিয়ন দুদু মিয়া জানান, প্রায় আট বছরের বেতন বাকি। আমি আর লাইব্রেরিতে যাই না। সাবেক মেয়র মামুন সাহেব বেশ কিছুদিনের বেতন দিয়েছেলেন। তারপর আর বেতনের ব্যবস্থা হয়নি। আমি লাইব্রেরির দায়িত্ব থেকে সরে এসেছি।
কবি সাযযাদ আনসারী জানান, সরকার যুগে যুগে জ্ঞানবৃদ্ধির সমাজ গঠনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং স্লোগান দেয়। এ জায়গায় আজকে জ্ঞানের প্রসার একদমই বন্ধ প্রায়। এ জায়গায় একটি লাইব্রেরি প্রায় বহু বছর থেকেই অচলাবস্থা। শুধু ছয় মাস আগে বন্ধ হয়েছে দরজা। ১৯৯০ সালে কমিটি হয়েছিল। তারপরে এক বছর আগে জেলা প্রশাসক একটি আহ্বায়ক কমিটি করেছেন। এর মধ্যে আসলে কোন কার্যক্রম নাই।লাইব্রেরিভিত্তিক কার্যক্রম না হলে নতুন প্রজন্ম গড়ে উঠতে পারে না। সুতরাং এ লাইব্রেরিকে সচল করা এবং লাইব্রেরিকে আরও কার্যকর করে গড়ে তোলার দাবি জানান তিনি।
পাবলিক লাইব্রেরির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন বলেন, পাবলিক লাইব্রেরি জামালপুরের একটা প্রাচীন প্রতিষ্ঠান। আমি মেয়র থাকাবস্থায় সচল রাখতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু রাজনৈতিক ও কমিটির অন্য সদস্যদের অসহযোগিতার কারণে প্রতিষ্ঠানটি সচল করতে পারিনি। নতুন প্রজন্মের জ্ঞান প্রসারের জন্য এই ধরনের প্রতিষ্ঠান সচল রাখা খুবই জরুরি।
জামালপুর পৌরসভার মেয়র ও পাবলিক লাইব্রেরি পরিচালনা কমিটির সদস্য ছানোয়ার হোসেন ছানু বলেন, কমিটি জেলা প্রশাসন আটকে রাখছে। আমাকে পুরোপুরি দায়িত্ব দিলে উদ্যোগ নিয়ে সচল করার ব্যবস্থা নেব।
এ বিষয়ে পাবলিক লাইব্রেরি পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও জেলা প্রশাসক শ্রাবস্তী রায় বলেন, বিগত জেলা প্রশাসক পাবলিক লাইব্রেরি নিয়ে কাজ করেছিলেন। করোনা আসার পরে তা সঠিকভাবে সচল করতে পারেননি। পাবলিক লাইব্রেরি পরিদর্শন করে সচল করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
