শোনা যায় ‘হাফ উইডো’দের আর্তনাদ
অনলাইন ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০৯:২৭ এএম, ৮ মে ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ১০:৫৬ এএম, ১৩ মে ২০১৮ রবিবার
জম্মু-কাশ্মীরের শ্রীনগর, ফেকাসে চোখে জানলার দিকে তাকিয়ে থাকেন বেগম জান৷ গায়ের চামড়ায় বয়সের ছাপ স্পষ্ট। কোনো রোজগার নেই। এক বেলা খেয়ে-না খেয়ে দিন কেটে যায় কোনো রকমে৷ সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবনাটাও বেগমের কাছে বিলাসীতা৷
স্বামী মানিয়া তানচাকে সেই যে সেনারা ধরে নিয়ে যায়, আজও মেলেনি খোঁজ৷ মানিয়ার দোষ জানা নেই, জঙ্গি সন্দেহেই নাকি সেদিনের ধরপাকড়৷ কোথায় মানিয়া? আদৌ কি বেঁচে আছে সে? না কি পলাতক? কিচ্ছু জানেন না বেগম৷ দিন মজুরি করে সে ক্লান্ত৷ খালি থালা-বাসনের শব্দে চিন্তার অতলে হাফ উইডো বেগম৷
স্বামী নিখোঁজের উত্তর খুঁজছিলেন দিলশাদ শেখও৷ সালটা ১৯৯২, ঈদ উপলক্ষে ছেলে মেয়েদের জন্য জামা-কাপড় কিনতে যান স্বামী বসির আহমেদ শেখ৷ পেশায় চিত্রকর বসির আর ফেরেননি৷ কেন ফিরলেন না বসির? ২৪ বছর পরও উত্তর খুঁজে পাননি দিলশাদ৷ শোনা যায়, ৯২-র ঈদে লাল চকে গোলাগুলি চলছিল, বসির ভয়ে একটি বাড়িতে ঢুকে পড়েন৷ সেখান থেকে তাকে টেনে বার করে ভারতীয় সেনা, উঠিয়ে নেয় গাড়িতে৷ ব্যাস ওইটুকুই জানতে পারেন দিলশাদ৷ গভীর শোকেই ২০১৬-র ৩১ মার্চ মৃত্যু হয় হাফ উইডো দিলশাদের৷
এখনও দরজায় কে যেন খট খট করে৷ শুনতে পান জুনা বেগম৷ দরজা খুলতেই বুঝতে পারেন আজও ভুল করে ফেলেছেন৷ দরজার ওদিকে নেই তার স্বামী৷ ৯২-র ধরপাকড়ে জুনার স্বামী মহম্মদ আবদুল্লা দারকে তুলে নিয়ে যায় সেনাবাহিনী৷ তোলার সময়ই আবদুল্লাকে বেধড়ক মারা হয়৷ ওইটুকুই শেষ স্মৃতি৷
বেগম জান, জুনাদের সংখ্যাটা আজও গুনে উঠতে পারেনি প্রশাসন৷ উপত্যকার প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে হাফ উইডোদের চাপা যন্ত্রণা দেখতে পায় না শাসকগোষ্ঠী৷ শাসকের আসনে যে দলই থাকুক হাফ উইডোদের প্রসঙ্গই ওঠে না উন্নয়নের খাতায়৷ কপালে জোটে শুধু সেনার রক্ত চোখের রাঙানি৷
বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবি সংস্থার সমীক্ষা বলছে, জম্মু-কাশ্মীরে হাফ উইডোদের মধ্যে ৯৮ শতাংশের রোজগার প্রতি মাসে মাত্র ৪ হাজার টাকা৷ ৬৫ শতাংশের ঘর বাড়ি ভাঙা, নেই শৌচালয়৷ তারপর রক্ষকদের নানাপ্রকারের হেনস্থা লেগেই আছে৷ স্বামী মৃত প্রমাণিত না হলে কোনও রকম ক্ষতিপূরণও পাবেন না তারা৷ এমনকি পাবেন না স্বামীর সম্পত্তির ১/৮ অংশও৷
প্রতি মাসের ১০ তারিখে শ্রীনগরের প্রতাপ চকে জমায়েত হন এই অলিখিত বিধবারা৷ হাতে প্ল্যাকার্ড, লেখা- ‘আমাদের ভালোবাসার মানুষটি কোথায়? ’নেই উত্তর, নেই উত্তাপ৷ জমায়েতের প্রত্যেকেই সত্যিটা জানেন, তাও আশায় বাঁচেন দিলশাদরা৷ যেমন তিরের খোঁজে বয়ে চলে ঝিলম৷
(সূত্র : বিদেশী পত্রিকা)
