ঢাকা, মঙ্গলবার ২৩, ডিসেম্বর ২০২৫ ৫:১৭:০৭ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

রোজার বাজারে ক্রেতার নাভি:শ্বাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪.কম

প্রকাশিত : ১২:১৬ পিএম, ১৭ মে ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৪:৫৩ পিএম, ১৭ মে ২০১৮ বৃহস্পতিবার

আগামীকাল শুক্রবার রোজা শুরু। সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমযান। আজ বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস। রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখা নিয়ে সরকারের আশ্বাসের পরও রাজধানীর কাঁচাবাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।

 

বাজার ঘুরে সরেজমিনে অনেক ব্যতিক্রম জিনিস লক্ষ্য করা গেল। যে পণ্যেও দাম কিছুদিন আগেও হাতের নাগালের মধ্যে ছিল সে পণ্যের দাম হঠাৎ করেই অনেক বেড়ে গেছে। খুচরা বিক্রেতারা যেন রোজা  উপলক্ষে খেই হারিয়ে ফেলছেন। একেকজন এক এক দাম চাচ্ছেন। অনেকেই আবার পরিস্থতি দেখছেন দাম কত বাড়ে। ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে সারা বছর, বিশেষ করে রমজানে নৈতিকভাবে ব্যবসা করার আহ্বান জানিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। সেই সাথে বিবেকহীন ব্যবসায়ীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছাড় দেবে না বলে হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন তিনি।

 

অন্যদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ গত ১৩ মে জানিয়েছিলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ চিনি, ভোজ্য তেল, ছোলা, পেঁয়াজ, রসুন ও খেজুরের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। কেউ বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করলে কঠিন পদক্ষেপ নেয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তোফায়েল আহমেদ। কিন্তু এত কিছুর পরও যেন ব্যবসায়ীরা রোযার আগেই শতভাগ লাভের চিন্তা করছেন। তাই আজ বাজারগুলোতে যেন দামের স্ফুলিঙ্গ প্রকট হয়ে উঠছে। কি পাইকারি, কি খুচরা,দাম যেন পাগলা ঘোড়ার মত ছুটছে। ব্যবসায়ীরা যেন এই দিনটির জন্যই অপেক্ষা করছে।

 

সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজার, রাজধানীর বাইরের খুচরা বাজারগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, সব্জির দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। বিভিন্ন সবজি বাজার ঘুরে দেখা যায় প্রতিকেজি ধুন্দল ৫০ থেকে ৫৫ , শশা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৪০-৬০, বেগুন ৭৫--৮০, আলু ২৫, টমেটো ৮০, শসা ৭০-৮০ , পটল ৫০ থেকে ৫৫, কাঁচাকলা হালি ৪৫, কচুর লতি ৪০, পেঁপে ৫০ থেকে ৫৫, ঢেঁড়স ৫০ থেকে ৫৫, বরবটি ৫০, চিচিঙ্গা ৫০ থেকে ৫৫, করললা ৫০ থেকে ৫৫ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লেবু হালি ৩৫ থেকে ৪০, লাল শাক, পালং শাক ও ডাটা শাক ৩ আঁটি ২০ থেকে ২৫ টাকা,কাচা কলা ৫০ টাকা হালি দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

মালিবাগ কাঁচাবাজারে আসা মো. অসাদ বলেন, শসা কিনেছি ৭৫ টাকা কেজি। আর টমেটো নিয়েছে ৮০ টাকা কেজি। অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য গত কয়েক দিনের তুলনায় এখন দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য জিনিসের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে নাজিরশাইল চাল ৬৬ থেকে ৭০, মিনিকেট (মানভেদে) ৬০ থেকে ৬৫, পাইজাম ৫২, বিআর-২৮ ৫১ থেকে ৫৩, স্বর্ণা ও পারিজ ৪৫, দেশি মশুর ডাল ১১০ থেকে ১২০, দেশি পিঁয়াজ ৫০ থেকে ৫৫, আমদানি পেঁয়াজ ৪৫, রসুনের দাম বেড়ে ১০০ থেকে ১২০, চিনি ৬৫ থেকে ৭০ এবং চীনা আদার দাম ১২০ টাকা,দেশি আদার দাম ১৫০ টাকা কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ছোলার কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা,চিনি ৬০ থেকে ৬২ টাকা, খেজুর কেজি প্রতি ২০০ থেকে ২২০ টাকা,মুড়ি ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা হাবিব আলি প্রতি কেজি চীনা আদা ১২০ ও দেশি আদা ১৫০ টাকা দরে বিক্রি করছিলেন। জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোজার কেনাবেচা শুরুর আগে আদার দর কেজিপ্রতি ১০০-১২০ টাকা ছিল। অন্যদিকে সয়াবিন তেলের দামও বাড়তির দিকে। একটি কোম্পানির তেলের পাঁচ লিটারের বোতলের দর পড়ছে ৪৮৩ টাকা, যার মোড়কে লেখা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) ৫৪০ টাকা। আরেকটি কোম্পানির তেলের এমআরপি ৫৫০ টাকা, যা খুচরা বিক্রেতারা কিনতে পারেন ৫০৭ টাকায়। এতে পাঁচ লিটারের একটি বোতলে ৪৩ থেকে ৫৭ টাকা মুনাফার সুযোগ পাচ্ছেন খুচরা বিক্রেতারা। কিন্তু সাধারণ মানুষেরা এ থেকে কোন সুবিধা পাচ্ছেন না।

 

অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) রমজানের জন্য গরুর গোশতের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল ৪৫০ টাকা কেজি, গত বছরের তুলনায় তা ২৫ টাকা কম। এই প্রসঙ্গে মাসুদ খন্দকার নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের নির্দেশ তো মানা হচ্ছে না। মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪৮০-৫০০ টাকা কেজি।’ খাসির মাংস ৭০০-৭৭০, ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৬০ ও দেশি মুরগি ৩৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। দামবৃদ্ধি অব্যাহত আছে মাছের বাজারেও। মাছ প্রতিকেজি কালিবাউস ২৫০, কাতল ৩২০, পাঙ্গাশ ১১০, রুই ৩২০, সিলভারকার্প ১৫০, তেলাপিয়া ১৬০ থেকে ১৮০, শিং ৫০০ থেকে ৭০০ ও চিংড়ি ৫৫০ থেকে ৭০০, ইলিশ (আকারভেদে) ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা ,বোয়াল ৮০০ টাকা,পাবদা ১১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

 

রোজা আসার আগেই এরকম উর্ধমুখী দাম নিয়ে সাধারণ মানুষের মুখে আক্ষেপ ঝড়ে পড়ল। শামীম নামের একজন ক্রেতা বলেন,প্রতিদিনই দাম বাড়ছে। আমরা সাধারণ মানুষ কিভাবে বাচবো। সরকারকে আরো কঠোর হতে হবে। তবে এই দামই কিন্তু চূড়ান্ত নয়। বাজারের এই আবহাওয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর দাম দিনকে দিন আরও বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।