ঢাকা, রবিবার ০৫, মে ২০২৪ ১৭:৩৪:৫০ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

নিষিদ্ধ ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ দেখে মুখ খুললেন তসলিমা

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:৪৩ এএম, ১১ মে ২০২৩ বৃহস্পতিবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

সুদীপ্ত সেন পরিচালিত আলোচিত সিনেমা ‘দ্য কেরালা স্টোরি’। ৫ মে ভারতের ২ হাজার পর্দায় মুক্তি পেয়েছে বিতর্কিত এই সিনেমা। তামিল নাড়ুর পর সিনেমাটি পশ্চিমবঙ্গে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আলোচিত এ সিনেমা দেখে নিজের ভাবনার কথা জানিয়েছেন ভারতে বসবাসরত বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিন। বুধবার (১০ মে) সামাজিক যোগাযোগামাধ্যমে দেওয়া স্ট্যাটাসে সিনেমাটির নানা দিক নিয়ে কথা বলেন তিনি।

লেখার শুরুতে তসলিমা নাসরিন বলেন, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ দেখা হলো। ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ দেখার সময় যেরকম অনুভূতি, এই সিনেমা দেখার সময় প্রায় একই রকম অনুভূতি আমার। যেন মুসলমান মাত্রই বদের হাড্ডি, মুসলমান মাত্রই আতঙ্কবাদী।’


‘পৃথিবীর প্রায় ১.৯ বিলিয়ন মুসলমান যদি জঙ্গি হতো, তাহলে পৃথিবীর কী হাল হতো, তা নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারি। মুসলমানদের মধ্যে বেনামাজি, বেরোজাদার বহুত, মুসলমানদের মধ্যে ধর্ম না জানা, ধর্ম না মানা লোকের সংখ্যাই আমার বিশ্বাস বেশি। মেয়েদের সমানাধিকারে আর মানবাধিকারে বিশ্বাস করা, শিক্ষিত সভ্য লোকও এই সম্প্রদায়ে প্রচুর। এগনোস্টিক আর এথিস্টের সংখ্যাও তো বাড়ছে। এরা ধর্ম ঠিকঠাক না মানলেও এদের মুসলমান বলেই ডাকা হয়। যেমন— ইহুদি, খ্রিষ্টান, হিন্দু-বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্ম না মানা লোকদেরও ইহুদি, খ্রিষ্টান, হিন্দু-বৌদ্ধ বলে ডাকা হয়। এসব তাদের ধার্মিক পরিচয় নয়, এসব সাংস্কৃতিক পরিচয়।’ বলেন তসলিমা।

‘দ্য কেরালা স্টোরি’ সিনেমা অতিরঞ্জন করে প্রদর্শন করা হয়েছে। এ বিষয়ে তসলিমা নাসরিন বলেন, ‘‘দ্য কেরালা স্টোরি’ কোনোভাবেই উন্নতমানের ফিচার ফিল্ম নয়। এতে আছে কিছু সত্য তথ্য, আছে অতিরঞ্জন। কোরান-হাদিসের মানবতাবিরোধী আর নারীবিরোধী শ্লোকগুলো বিভিন্ন কথোপকথনের মধ্যে এত বেশি গুঁজে দেওয়া হয়েছে, যে কারো সংলাপকে স্বাভাবিক এবং স্বতস্ফূর্ত মনে হয়নি। আইসিসদের বর্বরতা আর বীভৎসতা নিয়ে এ পর্যন্ত বেশ কিছু সিনেমা বানানো হয়েছে, সিনেমাগুলো দ্য কেরালা স্টোরির চেয়ে কিন্তু বেটার।’’

কেরালার মুসলমানদের আচরণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে তসলিমা নাসরিন বলেন, ‘কেরালা লিটফেস্টে অংশ নিতে রাজ্যের মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা কোঝিকড় বা কালিকটে বেশ কয়েকবার গিয়েছি আমি। কালিকটে, আমি অবাক হয়েছি, অনেক মুসলমান নারী-পুরুষ আমার স্পিচ শুনতে এসেছে, এমনকী আমার অটোগ্রাফ নিয়ে গেছে। আমার নাম ঘোষণা করা সত্ত্বেও মুসলমানরা তসলিমা বিরোধী মিছিল করেনি, মিছিল বরং সেক্যুলার কলকাতায় করেছিল কট্টর মুসলমানেরা। কেরালার ৩২ হাজার মেয়ে আইসিসে যোগ দিয়েছে, এই তথ্য সম্পর্কে আমার যথেষ্ট সন্দেহ। পাকিস্তান আর বাংলাদেশ থেকে বরং মুসলমানেরা বেশি যোগ দিয়েছে আইসিসে। এই দুটো দেশে আইসিসের আক্রমণও নেহাত কম হয়নি। দ্য কেরালা স্টোরির চেয়ে জরুরি ‘দ্য পাকিস্তান স্টোরি’ বা ‘দ্য বাংলাদেশ স্টোরি’ বানানো।’

বিতর্কিত সিনেমাটি তসলিমা নাসরিনের পছন্দ হয়নি। কিন্তু তিনি চান না সিনেমাটির প্রদর্শন বন্ধ হোক। তা উল্লেখ করে তসলিমা নাসরিন বলেন, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’ আমার পছন্দের সিনেমা নয়। তাই বলে আমি কিন্তু চাই না এই সিনেমা কোথাও নিষিদ্ধ হোক, কোথাও এর প্রদর্শনী কোনো কারণে বন্ধ থাকুক। এই সিনেমা হয়তো কিছু মানুষকে মুসলিমবিরোধী হতে উদবুদ্ধ করবে। অনেক শিল্প সাহিত্যেই কোনো দর্শনের বিপক্ষে, কোনো জাতি বা সম্প্রদায় বা ব্যক্তির কার্যকলাপের বিরুদ্ধে সমালোচনা থাকে, তাই বলে সেইসব শিল্প-সাহিত্যকে ঝেঁটিয়ে বিদেয় করতে হবে কেন! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ওপর তৈরি সিনেমাগুলো দেখে জার্মান জাতির ওপর দর্শকরা ক্ষুব্ধ হতে পারে, তাই বলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ওপর সিনেমা বানানো বন্ধ করতে হবে নাকি! দ্য কেরালা স্টোরি যারা নিষিদ্ধ করতে চাইছে, তাদের ক্ষোভের বারুদে আগুন নিক্ষেপ না করে বরং ‘দ্য ইউপি স্টোরি’ নামে সিনেমা বানান! কেউ তো বাধা দেয়নি।’