ঈদ কেনাকাটায় জমজমাট ইসলামপুর
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০২:০৫ পিএম, ২৩ মে ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০৪:০৯ পিএম, ২৪ মে ২০১৮ বৃহস্পতিবার
ঈদ কেনাকাটায় জমজমাট বৃহত্তম পাইকারি বাজার ইসলামপুর। ষষ্ঠ রোজা পেরিয়ে সপ্তম রোজায় আরও জমে উঠেছে পুরান ঢাকার ইসলামপুর। দেশের বৃহত্তম পাইকারি কাপড়ের বাজার হিসেবে যার পরিচিতি। সালোয়ার-কামিজ, শাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের থান ও গজ কাপড়ের বৃহৎ সম্ভার রয়েছে এখানে। মিলছে বিদেশের নামকরা ব্র্যান্ডের কাপড়ও।
তাই ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে জমজমাট এখন ইসলামপুর। কাপড়ের গজ মাপা, মাল বোঝাই করে ট্র্যাক-কাভার্ড ভ্যান, লঞ্চ কিংবা ঠেলাগাড়ি করে রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া যেন এখানকার নিত্যদিনকার দৃশ্য। নতুন পোশাক দেশের সব অঞ্চলে পৌঁছে দেয়ার কাজে যার পরনাই ব্যস্ত ক্রেতা-বিক্রেতারা। তবে প্রতিদিনের বেরসিক বৃষ্টির কারণে বেচা-বিক্রিতে একটু প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে বৈকি।
ইসলামপুরে বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির নিবন্ধন করা ছোট-বড় দোকান রয়েছে প্রায় চার হাজার। এর বাইরে আরও অন্তত ছয় হাজার ছোট ও মাঝারি দোকান রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন টং মার্কেট, হাজি শরফুদ্দিন ম্যানশন, হাজি ইউসুফ ম্যানশন, আমানউলাহ কমপ্লেক্স, হাজি কে হাবিবুল্লাহ কমপ্লেক্স মার্কেট, লতিফ টাওয়ার, আহসান মঞ্জিল সুপার মার্কেট, এ মাবুদ রাইন টাওয়ার, লায়ন টাওয়ার, মদিনা ভবন, হাজি শামসুদ্দিন ম্যানশন, ২৪ নম্বর মসজিদ মার্কেট নুরজাহান ম্যানশন, হালিম প্লাজা, সোনার বাংলা মার্কেট।
আজ বুধবার সরেজমিনে এ মার্কেটগুলো ঘুরে দেখা গেল, প্রতিটি দোকানে রকমারি পোশাকে সুসজ্জিত। বেচাকেনা চলছে। মোড়ে মোড়ে মালপত্র ওঠানো-নামানো হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলেন, রমজানের শুরুতেই এবারের কেনাকাটায় যে মন্দাভাব ছিল, তা কেটে গিয়ে দুই দিন ধরে ব্যবসাটা একটু চাঙ্গা হয়েছে। পাইকার ও খুচরা দুই পর্যায়ের ক্রেতা এখন ভিড় করছেন। বেচাকেনা চলবে চাঁদ রাত পর্যন্ত।
হাবিবুল্লাহ কমপ্লেক্স মার্কেটের ব্যবসায়ী আহসান জামিল জানান, রাজধানীর গাউসিয়া, নিউমার্কেট, বিভিন্ন বুটিক, ফ্যাশন হাউসসহ দেশের সব প্রান্তে যাচ্ছে ইসলামপুরের থ্রিপিস সহ বিভিন্ন পোশাক। যাচ্ছে বিদেশেও। নবাববাড়ি এলাকার আল-রহমান স্টোরের বিক্রেতা জসিম বেপারি বলেন, এখন বেশি বিক্রি হচ্ছে থ্রিপিস। ইসলামপুরের পোশাকের দোকানগুলোতে মান ও কাজ ভেদে ৬০০ টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকায় মিলছে দেশি থ্রিপিস। সেলাই ছাড়া থ্রিপিস মিলছে ৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা।
কেয়া ফ্যাশনের বিক্রেতা কামাল উদ্দীন বলেন, ভারত, পাকিস্তানের সুপার মডেল আর জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেত্রীদের পরনে যে পোশাক দেখা যায়, হুবহু সেই থ্রিপিস এখানকার মার্কেটে পাওয়া যায়। রঙ ও ডিজাইন দেখে কেউই দুটি পোশাকের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারবেনা। অন্যান্য ব্যবসায়ীরা জানান, দেশি কাপড়ে ডিজাইনার ও কারিগররা এসব থ্রিপিস তৈরি করেন। দাম হাতের নাগালের মধ্যে থাকায় ভারত-পাকিস্তানের থ্রিপিসের চেয়ে এখানকার থ্রিপিসের চাহিদা বেশি।
ইসলামপুরের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নরসিংদীর মাধবদী ও বাবুরহাট, ঢাকার সাভার, কুমিল্লার দাউদকান্দি এবং নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মিল থেকে শাড়ি তৈরি করিয়ে এনেছেন তারা। রাজধানীসহ রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, রংপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের আগমনে মুখরিত আজ ইসলামপুরের মার্কেটগুলো।
ইসলামপুর মার্কেটের গেটের সামনে কথা হয় মানিকগঞ্জের ব্যবসায়ী ফয়সাল মিয়ার সঙ্গে। দোকানের জন্য রোজার আগেই দু’বার ইসলাপুরের এসেছিলেন এই ব্যবসায়ী। ফয়সাল বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার পাইকারিতে দাম একটু বেশি। বিশেষ করে শাড়ি, থ্রি পিসের দাম গত বছরের তুলনায় বাড়তি।
চট্রগ্রামের ব্যবসায়ী লিখন চৌধুরী দোকানের কর্মচারিদের নিয়ে কাপড় কিনতে এসেছেন ইসলামপুরে। তিনি জানালেন, মূলত দেশী পোশাকই তিনি এখান থেকে কিনে থাকেন। ইন্ডিয়ান পোশাকের জন্য আলাদা কদর রয়েছে। এবার বাচ্চাদের ও নারীদের পোশাকে বৈচিত্র এসেছে বেশ।
এখানকার ব্যবসায়ীরা জানান, এক সময় বিদেশ থেকে আমদানি করা কাপড়ের পাইকারি বাজার ছিল ইসলামপুরে। এখন আর সে রকম নেই, চিত্র পাল্টে গেছে। ইসলামপুরের কাপড়ের ব্যবসার বড় অংশই এখন দেশী কাপড়ের দখলে। ইসলামপুরে পাকিজা ফেব্রিক্সের মোট ছয়টি শোরুম রয়েছে। এ শোরুমের বিক্রেতা জানান, মূলত শবেবরাতের পর থেকে দশ রমজান পর্যন্ত তাদের বেচাবিক্রি হয়। ইতোমধ্যে বেশিরভাগই বেচা শেষ। তবে মূলত থ্রিপিস, বিছানার চাদর, শাড়িই এবার বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান। এ দোকানে থ্রিপিস বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকায়।
বেক্সিফেব্রিক্স ফ্যাশনের শাহরিয়ার ইকবাল জানালেন, ৫০-৯০ টাকা দামে লেডিস আইটেমের গজ কাপড় বিক্রি করছেন তারা। মূলত নিম্নবিত্তদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে তারা কাপড় সরবরাহ করেন। তবে রাস্তার বেহাল অবস্থা ও যানজটের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন ব্যবসায়ীরা।
ইসলাপমপুরের পাশাপাশি উর্দু রোডেও চলছে জমজমাট বেচাকেনা। বেচাকেনায় ব্যতিব্যস্ত ব্যবসায়ীদের দম ফেলার যেন ফুরসত নেই। উর্দু রোডের দোকানি ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার ঈদ উপলক্ষে দেশী মিনি থ্রিপিস ৪২০-৮০০ টাকা, থ্রিপিস ৩৫০-৩৫০০ টাকা, থান কাপড়ের প্রিন্টের থ্রিপিস ৪৫০-৯৫০ টাকা।
অন্যদিকে চায়না মার্কেটের সামনে ফুটপাতে রয়েছে শতাধিক খুচরা দোকান। এখান থেকে নিজের ইচ্ছেমতো কাপড় কিনে যে কেউ সালোয়ার-কামিজ তৈরি করাতে পারেন কাছাকাছি থাকা দর্জির দোকানগুলো থেকে।
