ঢাকা, শনিবার ০৪, মে ২০২৪ ১৯:৪৪:৪২ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

কচুরিপানা বদলে দিয়েছে জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪.কম

প্রকাশিত : ০৮:২৩ পিএম, ২৩ মে ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০২:০২ এএম, ৮ জুন ২০১৮ শুক্রবার

একসময় কচুরিপানা সিদ্ধ করে খেতেন তারা৷ এখন এই কচুরিপানা দিয়ে কাগজ বানিয়ে বিভিন্ন উপহার সামগ্রী তৈরি করছেন৷ এটা তাদের জীবনে যেমন এনেছে উন্নতি, তেমনি তাদের সন্তানরাও হয়েছেন শিক্ষিত৷


বলছিলাম বরিশালের নারীদের কথা৷ প্রায় ২০ বছর ধরে সেখানকার কয়েকটি অঞ্চলের নারীরা কচুরিপানা থেকে বিভিন্ন পণ্য তৈরির কাজ করছেন৷ তাদের এই পণ্যগুলো প্রায় ২০টি দেশে রফতানি হচ্ছে৷


শুরুতে ‘মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি` নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা বরিশাল অঞ্চলের নারীদের উন্নয়নে কাজ শুরু করে৷ এখন সেই কাজটা এগিয়ে নিচ্ছে এমসিসির তৈরি সংস্থা ‘প্রকৃতি`৷


কথা হচ্ছিল প্রকৃতি-র ডিজাইনার সুরাইয়া চৌধুরীর সঙ্গে৷ তিনি জানান, প্রকৃতির নারীরা কচুরিপানা থেকে প্রথমে কাগজ তৈরি করে৷



একটা সময় উপমহাদেশের জলাশয়গুলোতে কচুরিপানার পরিমাণ এত বেড়ে গিয়েছিল যে ১৯৩৭ সালের নির্বাচনে প্রায় সব দলের ইশতাহারে দেশকে কচুরিপানা মুক্ত করার অঙ্গীকার করা হয়েছিল৷ শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক নির্বাচনে জয় লাভ করে ওয়াদা পূরণে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বলে জানা যায়৷

 

এখনো বাংলাদেশের খালে-বিলে, পুকুরে, নদীতে প্রচুর কচুরিপানা দেখতে পাওয়া যায়৷ তবে বরিশালে গত প্রায় ২০ বছর ধরে কচুরিপানা থেকে প্রথমে কাগজ তৈরি করে পরে উপহার সামগ্রী সহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করছেন নারীরা৷


পরে সেই কাগজ দিয়ে ছবির অ্যালবাম, নোটবুক, গহনা, ঝুড়ি, গিফট বক্স, গ্রিটিংস কার্ড, মালা ইত্যাদি তৈরি করা হয়৷ যুক্তরাষ্ট্রের ফেয়ার ট্রেড কোম্পানি ‘টেন থাউজেন্ড ভিলেজেস` প্রকৃতির তৈরি পণ্য সবচেয়ে বেশি কেনে৷ এছাড়া জাপানের ‘পিপল ট্রি লিমিটেড`, ইটালির ‘সিটিএম`সহ মোট ২০টি দেশে তাদের পণ্য রপ্তানি হয় বলে জানান সুরাইয়া৷


তিনি বলেন, বরিশালের যেসব নারী এই কাজে যুক্ত তাদের জীবনে এসেছে বিশাল পরিবর্তন৷ আগে তারা কচুরিপানা সিদ্ধ করে খেতেন৷ এখন অনেকের সন্তান লেখাপড়া শিখে ডাক্তার হয়েছে৷ প্রায় ৫০ শতাংশ নারীর সন্তান গ্রাজুয়েট৷ আর ছোট ছেলেমেয়েরা সবাই স্কুলে যাচ্ছে৷`

 

প্রকৃতি-র হয়ে যেসব নারী কাজ করেন তারা মাসে গড়ে প্রায় ৬-৭ হাজার টাকা আয় করেন৷ এছাড়া বছর শেষে তারা লাভের অংশও পেয়ে থাকেন৷ এখন প্রায় এক হাজারেরও বেশি নারীর প্রকৃতির হয়ে কাজ করছেন বলে জানান সুরাইয়া৷


কচুরিপানাকে কাজে লাগানোর জন্য শুধু যে এলাকার নারীদের উন্নয়ন হচ্ছে তা নয়, এর মাধ্যমে পরিবেশও রক্ষা হচ্ছে৷ কারণ বরিশাল অঞ্চলে প্রচুর কচুরিপানার জন্য আগে লঞ্চ, নৌকা চলতে পারত না৷ তাছাড়া সেগুলো পোকামাকড়েরও আবাস হয়ে থাকত৷