কুষ্টিয়ায় তাল বিক্রি করে আয় ২ কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৯:০১ পিএম, ৪ জুন ২০২৩ রবিবার
সংগৃহীত ছবি
কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার কাকিলাদহ তাল গ্রামে গ্রামবাসীর ভাগ্য বদলে দিচ্ছে তালগাছ। তালের রস ও তালশাঁস বিক্রি করে মাত্র ৪ মাসে আয় প্রায় ২ কোটি টাকা।
সরজমিনে উপজেলার কাকিলাদহ গ্রামে গেলে দেখা যায়, রাস্তার দু’ধারে সারি-সারি তালগাছ। যত দূর দৃষ্টি যায় শুধু তালগাছই চোখে পড়ে। তালগাছের কারণে এখানে বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনার আশংকা নেই।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার আমলা বাজার। কুষ্টিয়া-মেহেরপুর মহাসড়কের পাশেই অবস্থিত এলাকার ঐতিহ্যবাহী এ বাজারটি। এ বাজার থেকে বামে সড়ক ধরে ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার এগুলোই সড়কের দু’ধারে চোখে পড়বে এমন সারি-সারি তালগাছ। শুধু সড়কেই নয়, এলাকার পথে-পথে, মাঠ-ঘাটে যেদিকে চোখ যায় শুধুই তালগাছ। তালগাছের এ গ্রামটি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের কাকিলাদহ গ্রামের। তাল গাছের কারণে কাকিলাদহ এখন ‘তালগাছের গ্রাম’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এটিকে আন্তজার্তিক খ্যাতি সম্পন্ন বিচারপতি ড. রাধাবিনোদ পালের গ্রাম হিসেবেও চেনেন অনেকে।
জানা গেছে, তালগাছ ঘিরে বাড়তি মুনাফা করেন এই গ্রামের বাসিন্দারা। কাঁচা তাল, তালের রস, পাকা তাল, তালের শাস, তালের গাছ ও পাতা বিক্রি করে অর্থ আয় করেন তরা। শুধু তালের রস বিক্রি করেই সংসার চালাচ্ছেন প্রায় দেড়শ পরিবার। সুস্বাদু তালের রস খেতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এখানে ভিড় জমান।
এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি ইমাম আলী। তিনি ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে তালগাছ কেটে রস সংগ্রহ করেন। সকাল-বিকেল দুই বেলা তিনি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন। প্রতিদিন দুটি গাছ থেকে তিনি পান ৩০ লিটার মিষ্টি তালের রস। বিকেলে এসব রস তিনি নিয়ে আসনে স্থানীয় সড়কে। এ সড়কের দুই পাশে তাল গাছের দীর্ঘ সারি। বিকেলে নানা স্থান থেকে লোকজন আসেন রস খেতে। বিকেল ৪টা থেকে ৬টা পর্যন্ত মানুষের ভিড় থাকে। এ সময় ইমাম আলীর মতো অনেক গাছি রস নিয়ে আসেন এখানে। এক গ্লাস তালের রস বিক্রি হয় ১০ টাকায়। আর এক লিটার নিলে ৫০ টাকা। ইমাম আলী বলেন, ‘গরমের ৪ মাস তালগাছ কেটে রস সংগ্রহ করি। প্রতিদিন ৩০ লিটার রস পাই দুটি গাছ থেকে। ৫০ টাকা লিটার হিসাবে প্রতিদিন ১ হাজার ৫০০ টাকা আয় করি। ৫ জনের সংসার চালানোর পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থ জমাতেও পারি।’ কাকিলাদাহ গ্রামের জজপাড়া গ্রামের সুন্নত আলী বলেন, আমাদের গ্রামে প্রথম তালগাছ রোপণ করেন হাজি দাউদ আলী। তিনি শিক্ষিত ও জ্ঞানী মানুষ ছিলেন। তিনি এলাকার বেশ কয়েকটি সড়ক ও নিজের জমিতে তালগাছ রোপণ করেন প্রায় ৭০ বছর আগে। এরপর তার দেখাদেখি এলাকার সব মানুষ তালগাছ রোপণ শুরু করেন। এভাবে কাকিলাদাহ গ্রামটি এখন তালগাছের গ্রাম। গ্রামটিতে প্রায় ১৫ হাজারের বেশি তালগাছ আছে।
তালের রসের ব্যবসায়ী আক্কাস আলী ও শওকত আলী বলেন, তালগাছ থেকেও যে লাখ-লাখ টাকা আয় করা যায় তার উদাহরণ আমাদের গ্রাম। আমাদের এলাকার অনেক পরিবার গরম কালের এ সময় রস, কাঁচা তাল, পাকা তাল, তাল পাতা বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকা আয় করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। প্রতিদিন গড়ে ১৫ হাজার লিটার রস উৎপাদন হয়। যেসব রস বিক্রি হয় না সেগুলো দিয়ে তালের গুড় ও পাটালি তৈরি করা হয়। এছাড়া যেসব জমিতে তালগাছ আছে সেইসব জমির মালিকরা তালগাছ বর্গা দেন কয়েক মাসের জন্য। এ সময় গাছ প্রতি ১ হাজার টাকা পান তারা।
