ঢাকা, শনিবার ১৩, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৫:৪১:০৪ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

বঙ্গবাজার মার্কেট : সাধ ও সাধ্যের সবকিছু

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪.কম

প্রকাশিত : ০৯:৩৯ পিএম, ২৭ মে ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ০৪:২৫ পিএম, ২৮ মে ২০১৮ সোমবার

রাজধানীর বঙ্গবাজারের মার্কেটে এই সময়টায় কেনাকাটায় ধুম পড়ে। কিন্তু এবার চিত্র ভিন্ন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখনো বাজার জমেনি। তবে এ সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে মার্কেটটি জমে উঠবে বলে তারা আশা করছেন। ক্রেতার হাতে ঈদ বোনাশ চলে এলেই বাজার জমতে শুরু করবে।

 

ঈদ এলেই ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই চেষ্টা করেন সামর্থ্যের মধ্যে পছন্দের পোশাক কিনতে এবং প্রিয়জনকে উপহার দিতে। এক্ষেত্রে রাজধানীর মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের ভরসাস্থল পুরান ঢাকার বঙ্গবাজার মার্কেট। কারণ এখানে কম মূল্যে রুচিসম্মত, ফ্যাশনেবল পোশাক পাওয়া যায়। স্বল্প আয়ের ক্রেতাদের কাছে আধুনিক নকশা ও বুনন এবং চলতি সময়ের ব্র্যান্ডের চেয়ে পোশাকের ক্ষেত্রে মুখ্য বিষয় পছন্দের রং এবং শরীরের মাপে ঠিক হওয়া।

 

অভিজাত বিপণিবিতানে পণ্যের গায়ে ঝুলিয়ে রাখা এক দরের স্টিকারের সঙ্গে তারা পরিচিত নয়। বিক্রেতার সঙ্গে দরকষাকষি করে কেনাকাটায় জয়ী হওয়াই তাদের লক্ষ্য। আবার ক্রেতাদের ফিরিয়ে না দিয়ে অল্প লাভেই বেশি বিক্রির কৌশল ধরে রেখেছেন এখানের বিক্রেতারা। দেশীয় গার্মেন্টস পোশাক বেশ কম দামে বিক্রি হওয়ায় বিশেষ কদরও রয়েছে সর্বমহলে।

 

শুধুই কি স্বল্প আয়ের, মধ্যবিত্ত, এমনকি উচ্চ-মধ্যবিত্তের অনেক ক্রেতাও ছুটে যাচ্ছে বঙ্গবাজার মার্কেটে। এই বিপণিবিতানের পাশে থাকা অ্যানেক্সকো টাওয়ার, মহানগর কমপ্লেক্স, বঙ্গ ইসলামিয়া সুপার মার্কেট ১ ও ২, সিটি প্লাজা, মহানগর প্লাজা ঘুরে মধ্যবিত্তদের বঙ্গবাজার থেকেই শেষ পর্যন্ত কেনাকাটা করতে দেখা যায়। ঈদকে কেন্দ্র করে বঙ্গবাজার মার্কেটের ভেতরে দুই পাশের সারি সারি দোকানের সরু পথগুলো বিক্রেতাদের ডাকে মুখরিত হয়ে উঠেছে।

 

সেখানকার কয়েকজন বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই বিপণিবিতানে বিদেশি শাড়ি এবং অন্যান্য পোশাকও পাওয়া যায়। তাই উচ্চবিত্তের ক্রেতারাও এখানে কেনাকাটা করতে আসে। ভবনটির দোতলা পর্যন্ত রয়েছে ছোট-বড় মিলিয়ে দুই হাজারের বেশি দোকান। এসব দোকানে হাতের নাগালে থাকা দামের মধ্যে মিলছে শাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, ফতুয়া, পায়জামা, সালোয়ার-কামিজ, জুতা, শিশুদের পোশাক, মেয়েদের অলঙ্কার, স্যান্ডেল, বিভিন্ন ধরনের কেডস, ব্যাগ এবং মহিলাদের প্রসাধনীসহ সব ধরনের প্রয়োজনী পণ্য।

 

বঙ্গবাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব দোকানের সামনে ক্রেতাদের হালকা ভিড়। এখানকার ক্রেতা আবার দুই ধরনের। এক পাইকারি, আরেক খুচরা ক্রেতা। বিক্রেতারা ক্রেতাদের বিভিন্নভাবে আকর্ষণ করছে। প্রতিটি দোকানের সামনে কয়েকজন কর্মচারী রেখেছে ক্রেতাদের ডাকার জন্য। হকাররা জানান, ঈদ উপলক্ষ্যে আনা হয়েছে নানা ডিজাইনের নতুন নতুন সব মেয়েদের পোশাকও। বাচ্চাদের পোশাক, পাঞ্জাবি, জিন্স সবই মিলছে অল্প দামেই। মেয়েদের পোশাকের মধ্যে বুটিকস আইটেমের ভারতীয় থ্রিপিস পাওয়া যাচ্ছে দেড় হাজার থেকে তিন হাজার পাঁচশ টাকায়। লোন, ভয়েল, ও সার্টিনের থ্রিপিস কিনতে পড়বে ৮০০ থেকে ১৮০০ টাকায়। প্রিন্টের থ্রিপিস কেনা যাবে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়।

 

মার্কেটের জামালপুর ফ্যাশন হাউজের বিক্রেতা আব্দুল বাতেন বলেন, ঈদেরে মুল বিক্রি এখনো শুরু হয়নি। বিকেল নাগাদ কিছু ক্রেতার ভিড় হয়। যদিও অধিকাংশ ক্রেতা কেনাকাটা শুরু করেননি। আগামী তিন চারদিনের মধ্যে মার্কেট পুরোদমে জমবে। পাইকারি ব্যবসায়ী শরীফ খান বলেন, সারা বছর আমরা থ্রিপিসসহ গার্মেন্টস পণ্য পাইকারি দরে বিক্রি করি। তবে ঈদ উপলক্ষ্যে খুচরা বিক্রি করা হচ্ছে। অল্প লাভে বেশি বিক্রি। এতে ক্রেতারাও লাভবান হচ্ছে আমরাও বেশি বিক্রিতে লাভ বেশি পাচ্ছি।

 

নাইস কালেকশনের ব্যবসায়ী আজগর বলেন, রমজানের ঈদ উপলক্ষে এই মার্কেটে দাঁড়িয়ে কেনাকাটা করা কঠিন। এতো বেশি ভিড় হয়। তবে এবার চিত্র দেখছি ভিন্ন। আমাদের এখানে দরদামে বাধে না। অল্প লাভেই আমরা সেল করি। আশা করছি দু’চার দিনের মধ্যে মার্কেট পুরো জমবে। মার্কেটটিতে বেশ কিছু ক্রেতাকে দেখা যায় দর কষাকষি করতে।

 

মা ফ্যাশন হাউসের স্বত্বাধিকারী সোহেল জানান, এবার ঈদে রকমারি সালোয়ার-কামিজ, ফ্রক, লেহেঙ্গা এবং গাউনসহ নতুন নতুন ডিজাইনের পোশাক এসেছে। তিনি বলেন, আগের বছরের তুলনায় এবার বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, অন্যান্য মার্কেটের তুলনায় আমাদের এখানে পণ্যের দাম কম। তাই ক্রেতারা ভিড় করছে।

 

হাজারীবাগ থেকে কেনাকাটা করতে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রহিমা আক্তার বলেন, একই পণ্যের দাম একেক দোকানে একেক রকম চাইছে দোকানিরা। সেজন্য দোকান থেকে দোকানে ঘুরে যাচাই করে কিনছি। মহাখালী থেকে আসা ছুরাইয়া বলেন, বাচ্চার জন্য ঈদের কাপড় কিনতে এসেছি। কম দামে পছন্দমতো কাপড় পাওয়া যায় এখানে। এজন্য প্রতি বছরই আমার পরিবারের বেশিরভাগ পোশাক এবং অন্যান্য পণ্য এই বিপণিবিতান থেকে কেনা হয়।

 

পণ্যের দাম আগের তুলনায় কিছুটা বেশি হওয়ায় তিনি অভিযোগ করে বলেন, ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে বলে দোকানিরা ইচ্ছা করেই পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে আজকের গরমে যেন ক্রেতা,বিক্রেতারা হাঁপিয়ে উঠেছেন। তারপরেও থেমে নেই কেনাকাটা। বঙ্গবাজারে দোকানীদের হাঁকডাকে মুখোরিত হচ্ছে এ মাথা থেকে ওমাথা।