ঈদে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির চাহিদা বেশি
সালেহীন বাবু
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০৫:৪২ পিএম, ৩১ মে ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১১:৫২ এএম, ১ জুন ২০১৮ শুক্রবার
টাঙ্গাইলের শাড়ি নিয়ে সে অঞ্চলের মানুষ গর্ব করে বলে, নদী চর খাল-বিল, গজারির বন/টাঙ্গাইল শাড়ি তার গর্বের ধন। মান, নকশা বৈচিত্র্যই শুধু নয়, এই শাড়ির ঐতিহ্যও অনেক পুরনো। যে কারণে দেশ এবং দেশের বাইরের লক্ষ-কোটি বাঙালি রমণীর অন্যতম পছন্দ টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি।
টাঙ্গাইলের শাড়ির কদর এখনও কমে না। কারণ যুগ ও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে টাঙ্গাইলের শাড়িতে নতুনত্ব এসেছে। বিভিন্ন সময় শাড়ির নকশায় নিয়ে আসা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন সব পরিবর্তন। দেশের বিভিন্ন এলাকার তাঁতীরা এই শাড়ির অনুকরণ করেছেন। কিন্তু তারা সফল হননি। এসব কারণে বিভিন্ন উৎসবে বাজারে এই শাড়ির আলাদা একটি গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়। সে কথা মাথায় রেখে আগে ভাগে প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন এ অঞ্চলের তাঁতীরা। এবারের ঈদের বাজারের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।
মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতরকে ঘিরে টাঙ্গাইলের শাড়ির রাজধানী হিসেবে খ্যাত পাথরাইলের তাঁতশিল্পীরা শাড়ি তৈরির পাশাপাশি তৈরি করেছেন বিভিন্ন নকশার থ্রি-পিস। তারা মেধা এবং শ্রম দিয়ে নিঁপুণ দক্ষতায় তৈরি করছেন ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়ি। টাঙ্গাইলের শাড়ি কেনার জন্য পাথরাইলে ভিড় করছেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার শাড়ি ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মহিলারাও তাঁত পল্লীতে এসে পছন্দ অনুযায়ী শাড়ি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে এ সময় তাঁতীদের বাড়তি পরিশ্রম করতে হচ্ছে। কিন্তু তারপরও চাহিদা অনুযায়ী শাড়ি সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। আগে টাঙ্গাইলের তাঁতে শুধু সাধারণ মানের শাড়ি তৈরি হতো। কিন্তু এখন বাহারি নকশার দামি শাড়িও তৈরি হচ্ছে। ঈদের মার্কেটে এবার সফট সিল্ক, বেনারসি, জামদানি, বালুচুরী, সুতি, ধানসিঁড়ি, গ্যাস সিল্ক, একতারি, দোতারি ও রেশম শাড়ির চাহিদা বেশি। শাড়িগুলো পাঁচশ থেকে ৪২ হাজার টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এখন টাঙ্গাইল শাড়ি নিন্মবিত্তের সীমানা ডিঙ্গিয়ে উচ্চবিত্ত এবং ফ্যাশন সচেতন নারীর মন জয় করে নিতে সক্ষম হয়েছে।
টাঙ্গাইল শাড়ির ডিজাইনার ও নীল কমল শাড়ির স্বত্বাধিকারী নীল কমল বসাক বলেন, ঈদ সামনে রেখে প্রতি বছরের মতো এবারও আমরা বাহারি ডিজাইনের শাড়ি তৈরি করেছি। ক্রেতার চাহিদা আর যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নকশায় নতুনত্বও এসেছে।
তিনি আরো বলেন, সারা বাংলাদেশে টাঙ্গাইলের শাড়ির যে সুনাম রয়েছে আমরা সেই সুনাম ধরে রাখতে বদ্ধ পরিকর। শাড়ির সাথে আমরা থ্রি-পিসও বাজারে এনেছি। সব সময় ব্যবহার উপযোগী এবং মানও আগের চেয়ে অারো উন্নত।
টাঙ্গাইলের করোটিয়ার হাটে শাড়ি কিনতে এসেছেন এক দম্পতি। ঢাকা থেকে সরাসরি এখানে শাড়ি কিনতে আসা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তারা বলেন, ঈদ মাকের্টের ভিড় এড়িয়ে নিরিবিলি স্বাচ্ছন্দে নিজের জন্য এবং প্রিয়জনকে উপহার দেয়ার জন্য পছন্দের শাড়ি কিনতে এখানে এসেছি।
তারা বলেন, ঢাকার বাইরে বেড়ানোও হলো আবার কেনাকাটাও হলো। বড় বড় বিপণীবিতান, মার্কেট ও শো-রুমের চেয়ে অনেক কম দামে এখানে শাড়ি পাওয়া যায়। তাই প্রতি বছর ঈদের শাড়ি কিনতে এখানে চলে আসি।
প্রখ্যাত তাঁত শাড়ি ব্যবসায়ী যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোং এর সত্বাধিকারী রঘুনাথ বসাক বলেন, ঈদ উপলক্ষে টাঙ্গাইলের শাড়ির ব্যবসা আবার জমজমাট হয়ে উঠেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এবারও ঈদের বাজারে অতীতের মতো টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি স্বকীয়তা বজায় রেখে ক্রেতার মন ধারাবাহিকভাবে জয় করবে বলে মনে করছেন অনেকে।
