ঢাকা, রবিবার ০৭, ডিসেম্বর ২০২৫ ৬:৩৬:৫৯ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

সান্ত্বনার জয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়াল টাইগাররা

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৮:৪২ পিএম, ১১ জুলাই ২০২৩ মঙ্গলবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে জয় পেলেও ছিল না বিজয়ের হাসি। সিরিজ হাতছাড়া হয়ে গেছে আগেই। মান বাঁচানোর লড়াইয়ের জয় তাই টাইগারদের মুখের হাসি প্রশস্ত করতে পারেনি।

 রোববার (১১ জুলাই) টস জিতে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ৪৫ ওভার ২ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১২৬ রান তুলেছিল আফগানিস্তান। বাংলাদেশের হয়ে ২১ রানে ৪ উইকেট শিকার করে ইনিংসের সেরা বোলার ছিলেন শরিফুল। জবাবে ২৩ ওভার ৩ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৫৭ রান করেছেন লিটন দাস। এই ম্যাচ হারলেও ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে আফগানিস্তান।

ছোট লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা মোটেই ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। তামিমের বিশ্রামে একাদশে সুযোগ পাওয়া মোহাম্মদ নাঈম শেখ আবারও ব্যর্থ। এবার ৮ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারলেন না এই ওপেনার। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের ফারুকির লেন্থ বলে বোল্ড হয়েছেন তিনি। তাতে বাংলাদেশের উদ্বোধনী জুটি টিকেছে কেবল ১৪ বল, স্কোরবোর্ডে যোগ করতে পেরেছে ২ রান। 


নাঈম দ্রুত ফিরলেও লিটন-শান্ত জুটি আক্রমণাত্মকই শুরু করেছিল। সপ্তম ওভারের তৃতীয় বলে ফারুকিকে ছক্কা মেরেছিলেন লিটন। একবল পর এই পেসারকে আরও একবার বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়েছেন শান্ত। কিন্তু পরের বলেই তার স্টাম্প উপড়ে গেছে। সোজা বলে লাইন মিস করে সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১৫ বলে ১১ রান। 

তৃতীয় উইকেট জুটিতে সাবলীল ব্যাটিং করছিলেন সাকিব-লিটন। মনে হচ্ছিল, তারাই ম্যাচ শেষ করে আসবেন। সেটি আর হলো না। মোহাম্মদ নবির বলে ক্যাচ তুলে ফিরলেন সাকিব। শর্ট লেংথে দেখে টেনে তুলে মারতে চেয়েছিলেন সাকিব। তবে যেদিকে চেয়েছিলেন, সেদিকে সেভাবে খেলতে পারেননি। ৩৯ বলে ৩৯ রান করে থেমেছেন তিনি। এই ইনিংস খেলার পথেই বিশ্বের একমাত্র অলরাউন্ডার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৪ হাজার রান আর ৬০০ উইকেটের মাইলফলক অর্জন করেন। 

গত দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে সুবিধা করতে না পারলেও শেষ ম্যাচে দলের মতোই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন অধিনায়ক লিটনও। দলের হয়ে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৫৭ রান করেছেন অধিনায়ক। তাতে  ২৩ ওভার ৩ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। এ জয়ে ৯ বছর দেশের মাটিতে ধবলধোলাই না হওয়ার রেকর্ডটা টিকে থাকল বাংলাদেশের।  


এর আগে শুরুতে ব্যাটিং করতে নেমে সুবিধা করতে পারেনি আফগানিস্তান। প্রথম বলেই উইকেট, তারপর তিনটি ডট। পঞ্চম বলে আবারো উইকেট। ইনিংসের তৃতীয় আর শরিফুলের দ্বিতীয় ওভারের গল্প এটি। আগের ম্যাচে আফগান ওপেনিং জুটি থেকে এসেছিল ২৫৬ রান। তবে আজ তাদের উদ্বোধনী জুটি ভেঙেছে মাত্র ৩ রানেই। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ইব্রাহিম জাদরান আজ ফিরলেন ৬ বলে ১ রান করে। তার বিদায়ের তিন বল পর শরিফুলের বাড়তি বাউন্সে খোঁচা দিয়ে ডাক খেয়ে সাজঘরে ফেরেন রহমত শাহও। 

এরপর আগের ম্যাচের আরেক সেঞ্চুরিয়ান রহমানউল্লাহ গুরবাজও দ্রুত ফেরেন। তাসকিনের বাউন্সারে পুল করার চেষ্টা করেছিলেন এই ওপেনার, কিন্তু অফ স্টাম্পের বাইরের বল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি। ব্যাটের কানায় লেগে বল যায় উইকেটের পেছনে। দারুণ ক্যাচ লুফে নেন মুশফিক। ৬ রান করে এই ওপেনার ফিরলে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে হারায় সফরকারীরা। কাকতালীয় ব্যাপার, এই তিনজনই মুশফিকের হাতে ধরা পড়েন। 

টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে হারিয়ে যখন ধুঁকছিল আফগানিস্তান তখন উইকেটে আসেন মোহাম্মদ নবি। অভিজ্ঞ এই ব্যাটারের ওপর গুরু দায়িত্ব ছিল দলকে এমন পরিস্থিতি থেকে টেনে তোলার। কিন্তু সেটা তো পারলেনই না, উল্টো দলের বিপদ বাড়িয়ে সাজঘরে ফিরেছেন মাত্র ১ রান করে। ফলে ১৫ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারায় সফরকারীরা।


পাওয়ার প্লেতে দুই পেসার তাসকিন ও শরিফুলকে টানা ৫ ওভার করে ব্যবহার করেছেন লিটন। এগারোতম ওভারে মিরাজকে দিয়ে প্রথমবার স্পিন আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। পরের ওভারে অপর প্রান্তে আসেন সাকিব। দুই প্রান্ত থেকেই স্পিন আক্রমণেও সফলতা পান লিটন। অধিনায়ককে সাফল্য এনে দিতে এদিন সাকিব সময় নিলেন ১৮ বল। ইনিংসের ১৬তম ওভারের শেষ বলে এই বাঁহাতি স্পিনারকে সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন নজিবুল্লাহ। আম্পায়ার আউট দিলে রিভিউ নেন তিনি। তবে সিদ্ধান্তে কোনো পরিবর্তন আসেনি। এই মিডল অর্ডার ব্যাটারকে ফিরিয়ে ওয়ানডেতে সাকিবের উইকেট সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৩০৫। ফলে বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে ওয়ানডেতে উইকেট শিকারির তালিকায় যৌথভাবে শীর্ষ দুইয়ে ওঠেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের সাবেক ক্রিকেটার ড্যানিয়েল ভেট্টোরির থেকে ৬০ ম্যাচ কম খেলেই তার এই রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন সাকিব।

ব্যাটিং বিপর্যয়ের মধ্যেও লড়াই করার চেষ্টা করছিলেন হাশমতউল্লাহ শাহিদি। তবে আফগান অধিনায়কের সেই চেষ্টা বৃথা গেছে বাজে শটে। তাতে দলে ফিরেই উইকেটের দেখা পেয়েছেন তাইজুল ইসলাম। ২২তম ওভারের তৃতীয় বলে আগে থেকেই রিভার্স সুইপ করবেন বলে হয়তো ঠিক করেছিলেন শাহিদি। পজিশনেও চলে যান আগেই। কিন্তু বল পাননি নাগালে। শেষ মুহূর্তে বদলাতেও পারেননি পজিশন, রিভার্স সুইপই করার চেষ্টা করেন। বল আঘাত করে স্টাম্পে।  

ওমরজাইয়ের সঙ্গে জিয়ার জুটিটি একটু হলেও আশা জোগাচ্ছিল আফগানিস্তানকে। জিয়া বোল্ড হলেন তাইজুলের বলে। ব্যাকফুটে গিয়ে অফ সাইডে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে গেছেন তিনি।জিয়া সাজঘরে ফেরার পর উইকেটে আসেন মুজিব। ৩২ রানে ৫ উইকেট যাওয়ার পর উইকেটে এসেছিলেন ওমরজাই। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে একাই যা টেনেছেন আফগানিস্তানকে। পেয়েছেন ব্যাক্তিগত ফিফটিও। ওমরজাইকে ভালোই সঙ্গ দিচ্ছিলেন মুজিব। কিন্তু তাড়া-হুড়া করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনলেন। মিরাজকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ দেন তিনি। 

উইকেটে আসার পর একও প্রান্তে দেয়াল হয়ে ছিলেন ওমরজাই। শেষ পর্যন্ত সেই দেয়াল ভেঙেছনে তাসকিন আহমেদ। ৪৬তম ওভারে এই অলরাউন্ডারকে ৫৬ রানে ফিরিয়েছেন এই পেসার। তাতে আফগানিস্তান অলআউট হয় ১২৬ রান করে।