ঢাকা, শুক্রবার ১৭, মে ২০২৪ ৪:৫৯:২৫ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

পাপোশ তৈরি করে ২০০ নারী স্বাবলম্বী

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:৩৭ পিএম, ১৭ জুলাই ২০২৩ সোমবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে পড়াশোনা ছাড়তে হয় হালিমা বেগমকে। এক বছর যেতে না যেতেই তার কোলজুড়ে আসে এক ছেলে সন্তান। আর তখনই জীবিকার তাগিদে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান হালিমার স্বামী বিপ্লব ইসলাম। এরপর থেকেই যেন থমকে যায় হালিমার জীবন। স্ত্রী-সন্তানের খোঁজ নেন না বিপ্লব। তারপরও স্বামীর পথ চেয়ে দীর্ঘদিন অনেক কষ্টে শ্বশুরবাড়িতেই থেকে যান হালিমা। পরে আর কোনো উপায় না পেয়ে আশ্রয় নেন বাবার বাড়িতে।

হালিমা হঠাৎ একদিন জানতে পারেন গাইবান্ধা সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের ধানঘড়া এলাকায় দরিদ্র নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছে নিরাশা দূরীকরণ আর্থসামাজিক উন্নয়ন সংস্থা (ডিএসডিও) নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এরপর তিনি সময় নষ্ট না করে ডিএসডিওর প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে পাপোশ তৈরির কাজ শিখে ফেলেন। পরে সেখানেই তার কর্মসংস্থান হয়ে যায়।


হালিমা প্রায় ছয় মাস ধরে পাপোশ বানানোর কাজ করছেন। তিনি বলেন, কিছুদিন আগেও খুব হীনমন্যতায় ভুগতাম। বাচ্চাটাকে নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। এখন আর সেই চিন্তা নেই। ডিএসডিওতে কাজ করে ভালোই আয় হয়। মাসে প্রায় সাত-আট হাজার টাকা পাই। তা দিয়ে সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। এ খবর শুনে স্বামীও যোগাযোগ করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দরিদ্র, বিধবা, এতিম ও অসহায় নারীদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে নারী উদ্যোক্তা সাবিনা ইয়াসমিনের হাত ধরে সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের মধ্য ধানঘড়া এলাকায় চলতি বছরের ১ জানুয়ারি যাত্রা শুরু করে নিরাশা দূরীকরণ আর্থসামাজিক উন্নয়ন সংস্থা (ডিএসডিও)। প্রথমদিন থেকেই দরিদ্র নারীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রশিক্ষণ শেষে ওই নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগও করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

 দেখা যায়, গাইবান্ধা জেলা শহরের অদূরে ডিএসডিও পাপোশ তৈরির কারখানা গড়ে তুলেছে। ভেতরে ঢুকতেই তাঁতের খটখট শব্দ। কোনো কোনো নারী তাঁতে পাপোশ বুনছেন। কেউ পাপোশ ডিজাইন করছেন। কেউ মেশিনে সুতা থেকে পাপোশের জন্য রশি বুনছেন। পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা কাজগুলো তদারকি করছেন।

সদর উপজেলার ত্রিমোহনী গ্রামের অটোরিকশাচালক রুহুল আমিন ছয় সদস্যের সংসার চালাতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছিলেন। তাই তার স্ত্রী শারমিন বেগম (৩২) ঘরে বসে না থেকে কাজ শুরু করেন। চার মাস ধরে পাপোশ তৈরির কাজ করছেন তিনি। এতে শারমিনের সপ্তাহে প্রায় দেড় হাজার টাকা আয় হয়, তা দিয়ে অভাবের সংসারে কিছুটা হলেও সচ্ছলতা ফিরেছে।

শারমিন বেগম  বলেন, স্বামী রিকশা চালিয়ে যে আয় করে তা দিয়ে সংসার চলে না। তাই ঘরে বসে না থেকে ডিএসডিও থেকে পাপোশ বানানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছি। প্রায় চার মাস ধরে এখানেই কাজ করছি। যা আয় হয় তা দিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ চালানোর পরেও সংসারে কাজে ব্যয় করতে পারছি। দুইজনে কাজ করায় আগের মতো আর অভাব-অনটন নেই। এখন সুখেই আছি।


হালিমা বেগম আর শারমিন বেগমের মতো কুলছুম আক্তার, সঞ্চয় ইসলাম সালমা, রোশনা বেগম, মুক্তি বেগম, আঁখি আক্তারসহ প্রায় দুই শতাধিক নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে এই পাপোশ কারখানায়। তারা এখানে কাজ করে নিজেদের সংসারের অভাব ঘুচিয়েছেন। এখন আর আগের মতো সন্তানদের পড়াশোনার খরচ চালাতে টানাপোড়েনে পড়তে হয় না তাদের।

প্রশিক্ষক আনছারুল ইসলাম বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি ডিএসডিওর পাপোশ কারখানায় প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করছি। এখানে যারা প্রশিক্ষণ নিতে আসে তাদের খুব অল্প সময়ের মধ্যে হাতে-কলমে শেখানো হয়। কাজ শেখার পর সবাই এখানেই ভালো বেতনে কাজ করছে।

ডিএসডিও কর্তৃপক্ষ জানায়, দরিদ্র নারীদের হাতে-কলমে পাপোশ তৈরির প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের কাজ দেওয়া হয়েছে। ঢাকার বিভিন্ন পোশাক কারখানা থেকে ঝুট কাপড় সংগ্রহ করে তাঁতের মাধ্যমে পাপোশ তৈরি করা হয়। এরপর সেলাই মেশিনে সেগুলোতে ডিজাইন করা হয়। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে মাসে সাড়ে সাত থেকে আট হাজার পাপোশ উৎপাদন হচ্ছে। স্থানীয় বাজারে প্রতিটি পাপোশ পাইকারি দরে প্রকার ভেদে ২৬ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ১০০ টাকায়।

ডিএসডিওর নির্বাহী পরিচালক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, একটা সময় এনজিওতে কাজ করেছি। তখন দেখেছি সমাজে নারীরা অনেক অবহেলিত। তাদের কথা চিন্তা করেই এ প্রতিষ্ঠানটি করেছি। এতে প্রায় ২০০ দরিদ্র নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে। তারা সবাই প্রোডাকশনে কাজ করছে। এছাড়া এই প্রতিষ্ঠানে ৩০ জন বেকার তরুণ-তরুণী অন্য কাজ করছেন।