রাজধানীতে তীব্র গ্যাস সংকট, জ্বলছে না চুলা
সালেহীন বাবু
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০৩:১০ এএম, ৪ জুলাই ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০৭:২০ পিএম, ৪ জুলাই ২০১৮ বুধবার
মিরপুর ১৪ নম্বর এলাকায় থাকেন বেসরকারি সফটওয়ার ফার্মে কর্মরত আসমাউল হুসনা। প্রতিদিন অফিস থেকে বাসায় এসে দেখেন গ্যাস নেই। ইনডাকশন কুকার কিনে সাময়িক সুবিধা পেলেও বিদ্যুত সমস্যা থাকার কারণে শেষ পর্যন্ত স্টোভ দিয়েই রান্নার কাজ সারছেন। তাতেও আফসোস নেই হুসনার। বলেন, সব কিছুই মেনে নিতে হয়, চলতে হবে তো।
শুধু মিরপুর ১৪ নম্বরই নয়, রাজধানীজুড়েই বেশ কিছুদিন ধরে এ অবস্থা বিরাজ করছে। তবে গ্যাস সংকটে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন মিরপুরের আশপাশের এলাকা, ধানমন্ডির কিছু এলাকা, কাঁঠালবাগান, রায়েরবাগ, পশ্চিম রামপুরা, মধ্য বাড্ডা, বাসাবো পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া ও সূত্রাপুরের বাসিন্দারা।
কাঁঠালবাগানের গৃহিণীদের এখন সুসময়! তারা চুলায় রান্নার জন্য কিছু দিয়ে কাছের মার্কেটে বেরিয়ে আসতে পারেন। এখানকার বেশির ভাগ বাসায় সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত গ্যাসের চুলা যে রকম জ্বলে তা বালাইসাট। এতে মাসিক গ্যাস বিল ৮০০ টাকার বাইরেও দেড় হাজার টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে তাদের।
কাঁঠালবাগানের মতোই ধানমন্ডির কিছু এলাকাতেও গ্যাসের সমস্যা চলছে। ধানমন্ডি ১১ নম্বর সড়ক এলাকায় দিনের বেশির ভাগ সময় চুলা জ্বলে না বলে এখানের বাসিন্দা শারমীন আক্তার মারিয়া। তিনি জানান, আমি লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রভাষক। প্রতিদিন সকালে যাই,বিকালে চলে আসি ক্যাম্পাস থেকে। তারপরেও রান্না করতে পারিনা। অপেক্ষা করতে হয় মধ্যরাত পর্যন্ত। কারণ গভীর রাতে চুলায় ঠিকমতো গ্যাস পাওয়া যায়। দিনের বেলার খাবার রাতে রান্না করে রাখতে হয়।
এর থেকে কিছুটা সুবিধাজনক পর্যায়ে রয়েছে পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া ও সূত্রাপুরের বিভিন্ন এলাকা। এখানে কেবল সকাল ৭টা থেকে দুপুর প্রায় ১২টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না। পরের সময়টুকুতে অল্প গ্যাস থাকে। তাই দিয়ে সে এলাকার সবাই কাজ সেরে নিচ্ছে। গেন্ডারিয়ায় কথা হয় গৃহিণী বিলকিস বেগমের সাথে। বলেন,গ্যাস বিকালের দিক থেকে বাড়তে থাকে। যখন বাড়ে তখন রান্না করে ফেলি। না হয় কেরাসিন দিয়ে রান্না করি।
রাজধানীতে ভয়াবহ এ গ্যাস সংকট সবার জন্য বিড়ম্বনা ডেকে আনছে। রান্নাবান্না করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। তার পরও গ্যাসের সংকট থেকে মুক্তি মিলছে না। তিতাস গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানি লিমিটেডের তথ্য অনুসারে ঢাকায় কমপক্ষে ২০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস দরকার, পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ কোটি ঘনফুটেরও কম।
রাজধানীতে সরবরাহের জন্য রমজান মাসের তুলনায় এখন ১০ কোটি ঘনফুট কম গ্যাস পাচ্ছে তিতাস গ্যাস কোম্পানি। রমজান মাসে পাওয়া যেত ১৬০ কোটি ঘনফুট গ্যাস। এখন পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ কোটি ঘনফুট। ফলে রাজধানীর অনেক এলাকায় গ্যাসের চুলা জ্বলছে না। এ মাসে এই সংকটের সুরাহা হবে এমন আশার কথা শোনাতে পারেননি তিতাসের কর্মকর্তারা।
বিশেজ্ঞরা মনে করেন, গ্যাস সংকট থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র স্থায়ী উপায় দেশে গ্যাসের নতুন ক্ষেত্র আবিষ্কার ও উত্তোলন। দেশের স্থলভাগে বড় ধরনের গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হওয়ার সম্ভাবনা কম। সমুদ্রসীমায় গ্যাস পাওয়ার ব্যাপারে ব্যাপকভাবে আশা করা হলেও অনুসন্ধানের জন্য যে তৎপরতা চলছে তা যথেষ্ট নয়। এ অবস্থার মোকাবিলায় রাজধানীর আবাসিক খাতে বিশেষভাবে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন সংশ্লিষ্টরা।
