ঢাবি ছাত্রী হলে বিশ্বকাপ উন্মাদনা
সালেহীন বাবু
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০৭:১৪ পিএম, ৬ জুলাই ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ০৯:২২ পিএম, ১৬ জুলাই ২০১৮ সোমবার
বিশ্বকাপ ফুটবল মানেই বাড়তি উত্তেজনা, আর সে খেলা যদি দেখা হয় হল কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বসে, উত্তেজনা বাঁধ ভাঙবেই। নিজের প্রিয় ক্যাম্পাসে খেলা দেখার অনুভূতিটাই অন্যরকম।
এখন হলে হলে টিভি রুম হয়ে গেছে গ্যালারি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ক্যাম্পাসের আড্ডা কিংবা ক্যান্টিনে চায়ে চুমুক দিতে দিতে বাধে তুমুল তর্ক। খেলা শেষ হয়, কিন্তু রয়ে যায় অম্ল-মধুর সে বিতর্কের রেশ।
বাংলাদেশে ক্রীড়া উত্তেজনার অন্যতম স্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বকাপ কিংবা যেকোন বড় আয়োজনে টিএসসি এবং আবাসিক হলগুলোতে বড় পর্দায় একত্রে খেলা উপভোগ করেন হাজারো শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাসের সাবেক কিংবা আশপাশের মানুষও সেখানে জড়ো হন উত্তেজনার ভাগ নিতে। একটি গোল কিংবা তা মিস হলে যে অনুভূতি, অনেকে একসঙ্গে না দেখলে তার উচ্ছাশ কিংবা তৃপ্তি হয়না সেভাবে। তাইতো ক্যাম্পাসে খেলা দেখার অনুভূতিটাই আলাদা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের হলেও বিশ্বকাপ নিয়ে শুরু হয়েছে দল পছন্দের পালা। মধ্যে আর্জেন্টিনা, পর্তুগাল, স্পেন, জার্মানীর বিদায়ে এসব দলের মেয়ে সাপোর্টাররা চুপ মেরে গেছেন। বিশেষ করে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিলের রেষারেষি এখন সমাপ্ত। তাই মেয়েদের বেশিরভাগ হলগুলোতে এখন ব্র্রাজিল দলেরই জয়জয়কার। এখন ব্রাজিলের দল অনেক ভারী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শ্রাবণী দত্ত, রওশন আরা, প্রিয়াশা, বুশরা রোকেয়া হলে থাকেন। ব্রাজিল সমর্থক বুশরা বিশ্বকাপ নিয়ে বলেন, ‘নেইমার, জেসুস, কৌতনহো, সিলভার মতো খেলোয়াড় থাকলে একটি দল বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন দেখতে পারে। তাছাড়া ব্রাজিল এর আগেও পাঁচবার বিশ্বকাপ জিতেছে।’
এ প্রসঙ্গে কবি সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রী শারমিন সুলতানা বলেন, আমাদের আর্জেন্টিনা গেছে বলে তো আমরা থেমে যাইনি। আজকে হলের টিভি রুমে আমরা বেশিরভাগই বেলজিয়ামের সাপোর্টার। আমরা আমাদের দল নিয়ে নামব। আগে ব্রাজিল যে দলগুলোর সাথে খেলছে সেগুলো ছিল সাধারণ দল। বেলজিযাম আজকে ব্রাজিলকেই হারাবে। শারমীনের সাথে সুর মেলালেন জোছনা, কেয়া, রেহানা, জুথি। বোঝাই গেল বিশ্বকাপ থেকে আর্জেন্টিার ছিটকে পড়ার ব্যাথাটা তাদের মনে এখনও দগ দগ করে জ্বলছে।
শামসুন নাহার হলের ছাত্রী ডালিয়া, নুরী, লাবনী, বর্ষা, ত্রপা আবার ব্রাজিলের সাপোর্টার। আজকে সকাল থেকেই তারা হল মাতিয়ে রেখেছে ব্রাজিল ব্রাজিল স্লোগান দিয়ে। নুরী বলেন, আমরা তো ব্রাজিল দলের সমর্থক। এ হলে আমাদের ব্রাজিল দলের আলাদা দল আছে। আমাদের দল এমনিতেই ভাল খেলে। আজও ভাল খেলবে এবং ঠিকই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান হবে। আমরা আজকে প্রত্যেকে ব্রাজিলের জার্সি পড়ে খেলা দেখব। টিভি রুমে আমাদের দলের পাল্লাই আজ ভারী থাকবে।
অর্পিতা, ঝুমুর, মারিয়া, সিমি, লাভলী,নাসরীন। পাঁচ বান্ধবী। এরা থাকেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে। এরা সবাই ব্রাজিল । লাভলী বলেন, আমাদের প্রিয় খেলোয়াড় নেইমার। অনেকে তাকে অভিনেতা বলে। আসলে নিন্দুকের মুখ কখনই বন্ধ হবেনা।তারা বলতেই থাকবে। তাতে নেইমার আর আমাদের কিছু আসে যায়না। যখন আমরা টিভি রুমে খেলা দেখি হই হুল্লোড় করি মনে হয় স্টেডিয়ামে বসেই খেলা দেখছি। সবার সাথে বসে খেলার যে আনন্দ তা আর কোথাও পাবনা।
বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলে থাকেন সুমি,জিনিয়া,সাচিকো, আরতী। তারা বলেন, যখন থেকে ফুটবল খেলা দেখি তখন থেকে আমরা ব্রাজিলের সমর্থন করি। কারণ ব্রাজিল দলে একটা ধারাবাহিকতা আছে। পেলে, রোনালদো, রোনালদিনহোর হাত ধরে এখন নেইমারের যুগ চলছে। নেইমার বিদায় নিলে অন্য কোন তারকা খেলোয়াড়ের আগমন ঘটবে। যতদিন ফুটবল খেলা হবে, ব্রাজিল দলে ধারাবাহিকভাবে তারকা প্লেয়ার থাকবেই। বিগত কয়েকটি বিশ্বকাপে ব্রাজিল না জিতলেও এবার আমি আশাবাদী।
সার্বিক পর্যবেক্ষণে দেখা যায় মেয়েদের হলে ব্রাজিলের সমর্থকরাই এখন সব দখল করে আছেন। আজ রাত ১২টায় মুখোমুখি হবে ব্রাজিল আর বেলজিয়াম। তার আগ পর্যন্ত সরগরম থাকবে মেয়েদের হলগুলো। রাত ১২টায় হুল্লোড় শুরু হবে টিভি রুমে। মিছিলের মত জয়গান হবে ব্রাজিল, ব্রাজিল, গো নেইমার গো। অন্যদিকে বেলজিয়ামের সমর্থকরাও হাক দিবেন সেই দলের পায়ে বল থাকলে। যেন বিশ্বকাপ ফুটবল রাশিয়াতে হচ্ছেনা, হচ্ছে মেয়েদের হলে। হয়ত এটাই বিশ্বকাপ ফুটবল উন্মাদনা।
