সর্বনিম্ন কত টাকা থাকলে জাকাত ফরজ?
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১১:৫৩ এএম, ১ এপ্রিল ২০২৪ সোমবার
সংগৃহীত ছবি
জাকাত ফরজ ইবাদত এবং ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। পবিত্র কোরআনে জাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন- وَ اَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ اٰتُوا الزَّكٰوةَ ‘তোমরা নামাজ আদায় করো এবং জাকাত প্রদান করো। (সুরা বাকারা: ১১০)
নিসাব পরিমাণ সম্পদ রয়েছে- এমন স্বাধীন ও পূর্ণবয়স্ক মুসলিম নর-নারীর ওপর জাকাত ফরজ। স্বর্ণের নিসাব সাড়ে সাত তোলা (ভরি), রুপার সাড়ে বায়ান্ন তোলা। কারও কাছে কিছু স্বর্ণ ও কিছু রুপা থাকলে এবং এর কোনোটাই আলাদাভাবে নিসাব পরিমাণ না হলে, এ অবস্থায় যদি উভয়টির মূল্য রুপার নিসাব পরিমাণ হয়, তাহলে জাকাত দিতে হবে। ব্যবসায়িক পণ্য ও নগদ টাকার নিসাবও সাড়ে ৫২ তোলা রুপার মূল্যের সমান। হাতে ও ব্যাংকে রক্ষিত নগদ অর্থ ছাড়াও সঞ্চয়পত্র, সিকিউরিটি, শেয়ার সার্টিফিকেট ইত্যাদি নগদ অর্থ বলে গণ্য হবে।
বর্তমান (২০২৪) বাজার দর অনুযায়ী সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার দাম ৮৪০০০ (চুরাশি হাজার) টাকা (সূত্র: হাটহাজারী মাদরাসার ফতোয়া, ১৬/৩/২৪ ঈসায়ি)। অতএব এই পরিমাণ টাকা কারো কাছে এক বছর থাকলে তার উপর জাকাত ফরজ।
অন্যদিকে এ বছর জাকাত দেওয়ার ক্ষেত্রে ৭৫ হাজার টাকা প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন রাজধানীর প্রসিদ্ধ ইসলামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকার (মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স) ইফতা বিভাগের শিক্ষক ও অর্থনীতি বিষয়ক প্রসিদ্ধ আলেম মুফতি মাসুম বিল্লাহ। তিনি জানিয়েছেন, মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্সের মুহতামিম মুফতি দিলাওয়ার হুসাইন ও মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়া ঢাকার পরিচালক মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সম্মিলিতভাবে ৭৫ হাজার টাকা নির্ধারণে মত দিয়েছেন।
সুতরাং সর্বনিম্ন এই পরিমাণ টাকার ওপর একবছর অতিবাহিত হলে তার ৪০ ভাগের এক ভাগ (২ দশমিক ৫০ শতাংশ) জাকাত দিতে হবে। শতকরা আড়াই টাকা বা হাজারে ২৫ টাকা হারে নগদ অর্থ কিংবা সমমূল্যের অন্য যেকোনও প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে দিলেও জাকাত আদায় হবে। (আবু দাউদ: ১৫৭২; সুনানে তিরমিজি: ৬২৩)
কারো কাছে সোনা-রুপা, টাকা-পয়সা কিংবা বাণিজ্যদ্রব্য পৃথকভাবে বা সম্মিলিতভাবে নিসাব পরিমাণ ছিল, বছরের মাঝে এ জাতীয় আরো কিছু সম্পদ কোনো সূত্রে পাওয়া গেল এক্ষেত্রে নতুন প্রাপ্ত সম্পদ পুরাতন সম্পদের সঙ্গে যোগ হবে এবং পুরাতন সম্পদের বছর পূর্ণ হওয়ার পর সমুদয় সম্পদের জাকাত দিতে হবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাজজাক: ৬৭৯৭,৬৮৫১; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা: ৯৯৩৭)
জাকাত আদায়কারীর জন্য রয়েছে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে মহাপুরস্কারের ঘোষণা। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা সালাত আদায় করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে আমি তাদেরকে মহাপুরস্কার দিব।’ (সুরা নিসা: ১৬২)
অন্যদিকে জাকাত আদায় না করলে কঠিন শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে কোরআন ও হাদিসে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং যারা সোনা ও রুপা জমা করে রাখে, আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, আপনি তাদের বেদনাদায়ক আজাবের সুসংবাদ দিন, যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দিয়ে তাদের কপালে, পার্শ্বদেশে ও পিঠে সেঁক দেওয়া হবে। (আর বলা হবে) এটা তা-ই, যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ করো।’ (সুরা তাওবা: ৩৪-৩৫)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে জাকাত আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।