রাজীবের জন্য দু’ফোটা অশ্রু : ঝর্ণা মনি
ঝর্ণা মনি
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ১০:১৮ পিএম, ২১ জুলাই ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ১২:৫১ পিএম, ৫ আগস্ট ২০১৮ রবিবার
হাসতিস প্রাণ খুলে/গাইতিস দুঃখ ভুলে...! তোর ওয়ালে ইনট্রোতে এখনো জ্বলজ্বল করছে, ‘পিতামহ বনস্পতি : বিনীত সন্তানে তুমি দাও এই বর, সূক্ষ শরীর ধরে এই মাঠে যেন আমি বেঁচে থাকি অনেক বছর।’ অনেক বছর বাঁচতে চেয়েছিল! আহা! হাসিমুখে যুদ্ধ করতে করতে বাঁচা। ভালোবাসতিস শিশুদের। তাই ছিন্নমুল পথশিশুরা ছিল তোর স্বজন। আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়া ছিল তোর স্বভাব। আঁকাআঁকি, ছবি তোলা, কবিতা লেখা, গবেষণা ছিল তোর নেশা। পেশা শিক্ষকতা নিয়েই বাঁচতে চেয়েছিলি। সেখানেও ছিল প্রতিবন্ধকতা। কার দোষ সে বিষয়ে প্রশ্ন আজ অবান্তর। তুই তো সবকিছুর সীমানা ছাড়িয়ে।
তোর স্ট্যাটাস, ‘ঝড়ে পড়েছি, ঝরে পড়িনি’ তুই তো ঝরে গেলি অকালে! তোর ধ্রুপদি বিভাবরী বিভোর যে আজ বাবা হারালো!
বন্ধু, তোর কাছে ক্ষমা চাওয়ার অধিকার আমার নেই। অবশ্য তুই পুরো বিষয়টি জানতিস। একাধিকবার এ নিয়ে তোর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। কেন পাশে সরবে দাঁড়াতে পারিনি, কেন বন্ধু হয়েও হাত বাড়াতে পারিনি এসব তোর জানা। কারণ সত্যিমিথ্যা যাচাই না করে একতরফা মেনে নেয়ার বৃত্ত যে এখনো ভাঙতে পারিনি আমরা। তুই জানতিস এসব। আজ কি যায় আসে অতীত দু”স্বপ্নে? শুধু মনে হয়, ওইসময় আমাদের উচিৎ ছিল সত্যিটা খুঁজে দেখা।
সর্বশেষ মাস তিনেক (ঠিক মনে নেই) আগে ফোন করে প্রবীণ সাংবাদিক প্রবীর শিকদার দাদার ফোন নাম্বার চেয়েছিলি। এটাই ছিল তোর সঙ্গে আমার শেষ কথা। বললাম, আয় একদিন, ডিআরইউ, প্রেসক্লাব কিংবা শাহবাগ। তানভীরসহ আড্ডা হবে। বড্ডো ক্লান্ত ছিলি তুই। কিন্তু আড্ডার কথা শুনে লাফিয়ে ওঠেছিলি। ভেবেছিলাম ফিরে আসবি আবার প্রাণোজ্জ্বল জগতে। নাহ! লড়াকু সৈনিক রাজীব পরাজিত হলি লিভার সিরোসিসের কাছে। তাই বলে এত তাড়াতাড়ি রণে ভঙ্গ দিলি?
রাজীব, হিমশীতল মৃত্যুর পরশের সময় তোর প্রিয়তম স্ত্রী, অবোধ সন্তান-কার মুখটি ভেসে ওঠেছিল? তাদের হৃদয়ের আর্তি কি একটুও প্রকম্পিত করেনি তোকে?
লেখক : সিনিয়র রিপোর্টার, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন। নারী বিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি।
