ঢাকা, শনিবার ০৬, ডিসেম্বর ২০২৫ ৪:৫৮:৫৬ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

বন্যায় স্বাস্থ্যঝুঁকি কমাতে কী করবেন

স্বাস্থ্য ডেস্ক:    

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:৪২ পিএম, ৩১ আগস্ট ২০২৪ শনিবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

ভয়াবহ বন্যার কবলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দেশের লাখ লাখ মানুষ। বেশিরভাগ লোকজনই নিজের বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে। বন্যার প্রকোপে অনেকেই হারিয়েছেন মাঠের ফসল, গবাদি পশু, পুকুরের মাছ, বাড়ি-ঘর ইত্যাদি। বন্যার এ সময়ে বেড়েছে মানুষের নানা রকম স্বাস্থ্যঝুঁকি। আশ্রয়কেন্দ্রে অধিক মানুষ সমাগমের কারণে, পর্যাপ্ত সুপেয় পানি, খাবার ও পয়োনিষ্কাশনের অভাবে এ সময় সবচেয়ে বেশি প্রাদুর্ভাব ঘটে পেটের পীড়া বা খাদ্যনালির ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ। এ ছাড়াও ত্বকের সংক্রমণ, মশা-মাছিবাহিত রোগেরও এ সময় প্রার্দুভাব দেখা যায়। যেমন-

* খাদ্যনালির সংক্রমণ

বন্যার সময়ে দূষিত খাবার পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে কলেরা, ডায়রিয়া, টাইফয়েড ইত্যাদি। হেপাটাইটিস ‘এ’-এর প্রাদুর্ভাবও এ সময়ে বাড়তে পারে। দূষিত পানিতে চলাফেলায় আরও বাড়ে ল্যাপ্টোস্পাইরোসিসের ঝুঁকিও।

* ফুসফুস বা শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ

এ সময় আশ্রয়কেন্দ্রে অধিক মানুষের সমাগম থাকে। এ সময়ে বাড়ে ঠান্ডা, কাশি, জ্বর, গলাব্যথা, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়ার প্রার্দুভাব।

* ত্বকের প্রদাহ

দীর্ঘক্ষণ পানিতে থাকার কারণে বা স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের কারণে অথবা নানা দুর্ঘটনাজনিত কারণে এ সময় বৃদ্ধি পায় ত্বকের নানা রকম প্রদাহ। যা বেশিরভাগই ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাসজনিত।

* মশা-মাছিবাহিত রোগ

বন্যায় অধিক প্লাবনে আমাদের চারপাশের পরিবেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। স্থির ও জমে থাকা পানিতে বাড়ে মশার প্রজনন। ফলে বন্যা ও বন্যা পরবর্তী সময়ে ঝুঁকি বাড়ে মশাবাহিত রোগের। যেমন-ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর, ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া ইত্যাদি।

* মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি

বন্যায় ঘরবাড়ি, পশু, পুকুরের মাছ ইত্যাদি স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি হারিয়ে মানুষের শারীরিক স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে দুশ্চিন্তা, অনিদ্রা, আতঙ্কগ্রস্ততা, মানসিক অবসাদ ইত্যাদি।

* বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া বা আঘাত পাওয়া

বন্যার সময়ে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো পানিতে ডুবে মৃত্যু বা drowning। সবচেয়ে বেশি এ ঝুঁকিতে থাকে শিশুরা। এছাড়া শুধু বন্যার্ত মানুষই নয়, পাশাপাশি উদ্ধারকর্মী বা ত্রাণকর্মীদের ক্ষেত্রেও এ ঝুঁকি অনেক বেশি। এ সময়ে ভাঙা গাছপালা, বাড়িঘরের ভগ্নাংশ, পাহাড় ধসে বা বিদ্যুৎতাড়িত হয়ে আঘাত পাওয়া বা মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে থাকে।

* শিশুস্বাস্থ্য ঝুঁকি

বন্যা ও বন্যাপরবর্তী সময়ের প্রভাবে পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবারের অপ্রতুলতায় অনেক শিশুর মধ্যে অপুষ্টি ও অপুষ্টিজনিত রোগ দেখা দেয়। এ ছাড়াও এই শিশুদের ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহ বা নিউমোনিয়ার প্রকোপও বাড়ে।

* সতর্কতা ও আমাদের করণীয়

যদিও এ সময়ে পর্যাপ্ত নিরাপদ ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা কঠিন হয়ে ওঠে। তবু সরকারি সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, মেডিকেল টিমের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় এ সময়ে মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির প্রতিকারে একযোগে সবাই অক্লান্তভাবে কাজ করে থাকেন। বন্যার সময় স্বাস্থ্য নিরাপদ রাখতে নিচের বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখতে হবে।

▶ সুপেয় ও নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করতে হবে। পানি ফুটিয়ে, ক্লোরিন ব্যবহার করে বা পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ব্যবহার করে পান করতে হবে বা রান্নার কাজে ব্যবহার করতে হবে।

▶ বন্যাকলিত এলাকায় পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। সবাইকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মেনে চলতে হবে। খাবারের আগে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে বা হ্যান্ডস্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।

▶ যে কোনো অসুস্থতায় মেডিকেল টিমের সাহায্য নিতে হবে। এ সময় রেডক্রস, সরকারি-বেসরকারি অনেক মেডিকেল টিম বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ সরবরাহ করে থাকেন।

▶ পর্যাপ্ত শুকনো খাবার, প্রয়োজনীয় ওষুধ, খাবার স্যালাইন ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে হবে।

▶ ডায়রিয়া বা পানিশূন্যতা হলে খাওয়ার স্যালাইন খেতে হবে। প্রয়োজনে মেডিকেল টিমের সহায়তা নিতে হবে।

▶ সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে হবে। শিশুদের নিরাপত্তার দিকে নজর রাখতে হবে। বাড়িতে গর্ভবতী, বয়স্ক ও দীর্ঘমেয়াদি রোগাক্রান্ত ব্যক্তি থাকলে তাদের শুরুতেই নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে হবে বা উদ্ধার কর্মীদের সাহায্য নিতে হবে।