ঢাকা, মঙ্গলবার ০৭, মে ২০২৪ ১৭:৪৯:৪৮ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

হাজারের বেশি শিশুর নাম রাখা হয়েছে তার নামে!

বিবিসি বাংলা অনলাইন

উইমেননিউজ২৪.কম

প্রকাশিত : ০২:১১ এএম, ৩১ জুলাই ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৯:৫৮ পিএম, ৪ আগস্ট ২০১৮ শনিবার

এক হাজারের বেশি শিশুর নাম রাখা হয়েছে তারই নামে। নাম তার অ্যালিস। অার এই অ্যালিস বিখ্যাত কোনো সঙ্গীত শিল্পী বা সিনেমার তারকা নন। খেলাধুলাতেও তার কোনো অবদান নেই। তারপরও সুদূর অফ্রিকার দেশ লাইবেরিয়ায় এক হাজারের বেশি কন্যা শিশুর নাম রাখা হয়েছে তার নামেই। কিন্তু কেন!

 


কারণ অ্যালিস পেশায় একজন মিডওয়াইফ। অর্থাৎ সন্তান জন্মদানকারী গর্ভবতী মাকে সহায়তা করাই তার পেশা। তার হাতেই মায়ের গর্ভ থেকে পৃথিবীতে এসেছে অসংখ্য শিশু। যাদের একটা বড় অংশই আবার হয়েছে দেশটিতে যুদ্ধ চলার সময়।

 


বিবিসি সংবাদদাতাকে অ্যালিস বলছেন, "প্রথমবার যখন কোন বাচ্চার ডেলিভারি করলাম তখন সেটি হয়েছিলো যুদ্ধের সময় বন্দুকের নলের মাথায়"।

 


সেটা ১৯৯০ সালের ঘটনা। এক নারী চিৎকার করছিলেন। এ সময় একজন যোদ্ধা এসে বললো, "তুমি যদি ডেলিভারি করাতে যাও তখন এই নারীর কিছু হলে আমি দুজনকেই গুলি করে মারবো"।

 


অ্যালিস বললেন, "বাচ্চাটি ডেলিভারি করে তাকে মুড়িয়ে মায়ের বুকে দিলাম যাতে ওই মা বুকের দুধ খাওয়াতে পারে। এটাই আমার প্রথম কোন বাচ্চাকে ডেলিভারি করানোর অভিজ্ঞতা"।

 


মিডওয়াইফ হিসেবে কাজ শুরুর সময় থেকে অ্যালিস জানতেন হয়তো কিছু বাচ্চার নাম রাখা হবে তার নামেই।



তিনি বলেন, "কিন্তু তাই বলে এতোটা হবে সেটা ভাবতে পারিনি। এটা আমাকে দারুণ আনন্দ দেয়। এটা আমাকে অনুভব করায় যে আমি তাদের একটি অংশ"।

 


তিনি জানান, তার হাত দিয়ে জন্ম নেয়া কন্যা শিশুদের অনেকের যেমন নাম রাখা হয়েছে অ্যালিস (Allice) তেমনি ছেলে শিশুদের অনেকের নাম রাখা হয়েছে এলিস (Ellis)। আবার মেয়েদের মধ্যে যাদের নাম অ্যালিস রাখা হয়েছে পরে তারাও অনেকে মা হয়েছেন। মজার বিষয় হলো তাদেরও অনেকের নাম রাখা হয়েছে এই নারীর নামের সাথে মিল রেখে। এদের সবাইকে নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসে অ্যালিস।

 


অ্যালিস বলেন, "আমি আমার সন্তানদের জন্য গর্বিত। কারণ তারা আসলেই চমৎকার। যখনই কমিউনিটিতে কোথাও যাই সবাই ডাকতে থাকে। কেউ আন্টি, কেউ দাদী বা নানী বলে ডাকে। আমার দারুণ লাগে"।

 


অ্যালিস বলেন, তিনি যখন মারা যাবেন তখন কবরে গিয়েও তিনি দারুণ আনন্দে থাকবেন। কারণ অনেক কঠিন সময়েও গর্ভবতী নারীদের নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। এমন কি যখন ইবোলা ভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করলো তখনও।

 


স্মৃতি স্মরণ করে তিনি বলেন, "এটা ছিলো ভয়ংকর। এমনকি আমার নিজের সন্তানকেও একটি ছোট ঘরে নিয়ে রেখেছিলাম। এমনকি আমার ভাই এসে বললো অ্যালিস তুমি এখন অনেক ঝুঁকিতে আছো। কারণ তুমি ইবোলা নিয়ে কাজ করছো"।



তিনি জানান, তিনি যে খুব সাহসী তা নন, কিন্তু ওই সময় ঈশ্বরই তাকে শক্তি যুগিয়েছিলো।

 


অ্যালিস বলেন, "মিডওয়াইফ হিসেবে আমি অন্যদের সহায়তা করার প্রশিক্ষণ পেয়েছি। তাই চুপ করে থাকাটা আমার কাজ নয়। মৃত্যু পর্যন্তই আমাকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে"।

 


অ্যালিস আরো বলেন, "মিডওয়াইফের কাজ খুব সহজ নয়। ভালো মিডওয়াইফ হওয়াটাও সহজ কাজ নয়। শনি ও রবিবার আমার ছুটির দিন। কিন্তু সেই ছুটিও আমার কখনো নেয়া হয়না। আমি কৃতজ্ঞ ঈশ্বরের কাছে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ আমি পেয়েছি"।