ঢাকা, শুক্রবার ২৬, এপ্রিল ২০২৪ ১৭:১৭:২২ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

বন্ধুর কথা মনে পড়লেই রঙধনু ওঠে আকাশে

আনজীর লিটন

উইমেননিউজ২৪.কম

প্রকাশিত : ০৩:৫৮ পিএম, ১৬ আগস্ট ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০১:০০ এএম, ২১ আগস্ট ২০১৮ মঙ্গলবার

‘বন্ধু তোমার গল্প এখনো মনে কেটে যায় দাগ,
বন্ধুর প্রতি ভালোবাসা থাকে, আছে অভিমান-রাগ।
বন্ধু তবুও দূরে চলে যায় স্মৃতির মায়ায় ঢাকা সে,
বন্ধুর কথা মনে পড়লেই রঙধনু ওঠে আকাশে’।
ওবায়দুল গনি চন্দন

আমাদের ছড়াসাহিত্য যাদের হাত দিয়ে সমৃদ্ধ হচ্ছে ওবায়দুল গনি চন্দন তাদেরই একজন। ওবায়দুল গনি চন্দনকে অনেক ভালোবাসার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে ছড়া। ছড়া রচনার ক্ষেত্রে তার ছিল ঐশ্বরিক ক্ষমতা। সহজ কথন দিয়ে ছড়ার শরীরে ছড়িয়ে দিয়েছে জাদুর আবেশ। ছড়ার মধ্য দিয়ে অবলীলায় তুলে ধরেছে গদ্যভাষার জটিল শব্দাবলীকে। আর, তাইতো অন্ত্যমিলের খেলা খেলতে বেগ পেতে হয়নি তাকে। চন্দনের ছড়ার এ এক বাহাদুরি। যেমন :


[১]
পাগলের কোন গুণ নেই। তারা সব ধরনের গুণ-মুক্ত,
অনেকে পেয়েছে বাড়তি সুবিধা, নিচ দিকে তাই উন্মুক্ত।
পুলিশের সাথে জীবনে কখনো তর্ক হয় না পাগলের,
কবিতা-গল্পে, ফেসবুকে তারা লিখছে না কথা স্ট্রাগলের।


[২]
ডানদিকে টিলা গাঙ বাঁ দিকে
কোন দিকে যাবে সাংবাদিকে।


[৩]
অনিয়ম করে সবচেয়ে বেশি
এই দেশে কারা, বলি, টিকছে?
রাজনীতিবিদ! হতে চাও যদি
আজই যোগ দাও পলিটিক্সে!


আমাদের ছড়াসাহিত্য যাদের হাত দিয়ে সমৃদ্ধ হচ্ছে ওবায়দুল গনি চন্দন তাদেরই একজন। বাংলা ভাষার শিশুসাহিত্যে অন্যতম আধুনিক ছড়াকার। নির্মল বিনোদন আর বাস্তব জীবনের সমন্বয়ে তার ছড়াগুলো হয়ে উঠেছে অনন্য। একদিকে যেমন শিশুতোষ বিষয়কে তুলে এনেছে অন্যদিকে তেমনি উপজীব্য করে তুলেছে নিগূঢ় বাস্তবতাকেও। তার ছড়া পড়তে-পড়তে চোখে ভেসে ওঠে শহরের ইট-কাঠ, শ্রমজীবী শিশুদের আর্তনাদ, পরিবেশ বিনষ্টের জন্য মায়াকান্না, ফুটপাতের টোকাইয়ের মলিন মুখ আর সাহেবি দুনিয়ার নিষ্ঠুরতা। জীবন পথের নানা বাঁকে হেঁটে যাওয়া মানুষগুলোর নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়গুলোই পরিবেশন করেছে ওবায়দুল গনি চন্দন। ছড়াগুলোর পরতে পরতে লেগে আছে ভিন্নমাত্রা। আর এখানেই চন্দনের স্বকীয়তা,
হাট টিমা টিম হাট্টি
ব্যাপারটা নয় চাট্টি
তিরিশদিনে মুরগি আমার
ডিম পেরেছে ষাটটি
হাট টিমা টিম হাট্টি।
হাট টিমা টিম হাট্টা
মামা আমার আটটা
সব মামারাই ফরেন থাকে
করছি নাতো ঠাট্টা
হাট টিমা টিম হাট্টা।
হাটটিমা টিম হাট্টু
চারটি ঘোড়া টাট্টু
একটা কানা, একটা খোড়া
আর দুইটা বাট্টু
হাটটিমা টিম হাট্টু।


শিশুসাহিত্য বিষয়ের দিক দিয়ে সীমাহীন। কিন্তু প্রকাশের ভঙ্গি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভাষা, বাক্য গঠন, শব্দশৈলী, বিষয় নির্বাচনে সতর্ক থাকতে হয়। এটি শিশুর মনোজগত স্পর্শ করছে কিনা সে বিষয়টিও বিবেচ্য। এসবের ওপর ভিত্তি করেই শিশুসাহিত্যের বাগানবিলাস। চন্দন সেই বাগানবিলাসের সৌরভ ছড়িয়ে দিয়েছে পাঠকের অন্তরে-অন্তরে।
কোন কিছুর নামকে বলে Noun
যেমন ঢাকা টাউন
Pronoun- এর হয় ব্যবহার
একটা শুধু শর্তে
Noun- এর পরিবর্তে।।
যখন তুমি এটাসেটা
করতে কিছু পারবে-
পড়বে সেটা Verb-এ।
Adjective Adverb
আর Preposition
বলো দেখি জলদি তাদের
কী পজিশন।
কথা শোন আমার
বইটা খোল গ্রামার
আরো আছে Conjunction
Interjection
Parts of Speech ওদের দিয়েই
করে যে অ্যাকশন।


ছড়া পাঠকরা চন্দনের ছড়ার মধ্য দিয়ে খুঁজে পেয়েছেন আত্মপরিচয়। শিশুতোষ ধারণার মধ্য দিয়ে বড়দের জন্যও ওবায়দুল গনি চন্দন ছন্দ গেঁথেছে স্বার্থকভাবেই। চন্দনের লেখা একটা লিমেরিক থেকে তার প্রকাশ পাওয়া যায়-
দু’তিন মাসের পড়ালেখা বইয়ে রাখে জমা সে
ছাত্র ভালো একটু তবে কাঁচা কারক, সমাসে
ব্যাকরণ বই পোকায় খাওয়া
পড়ার ঘরে যায় না যাওয়া
পড়ার টেবিল ধুলোয় ভরা সাফ করে সে ন’মাসে।
দেশ মাটি আর মানুষের মমতাময় রূপের ছবি চন্দন সাজিয়ে তুলেছে ছড়া দিয়েই
চন্দ্রপোড়া জোসনা রাতে
চাই আকাশের দিকে,
ভাইয়া কোথায়? ঝলমলে চাঁদ
হঠাৎ হলো ফিকে।
থমকে থাকা নীল জোনাকি
বললো এসে কানে,
ভাইয়া কোথায় হারিয়ে গেছে
শহীদ মিনার জানে।


ছন্দের সব ঘরেই বিচরণ করেছে দক্ষতার সঙ্গে। তবে স্বরবৃত্ত ছন্দে হাঁটতে বেশি পছন্দ ওবায়দুল গনি চন্দনের। একই সঙ্গে ইংরেজি শব্দ ব্যবহারের পারদর্শিতাও লক্ষণীয়। তার প্রকাশিত ছড়ার বইয়ের সংখ্যা ২২টি।


তার প্রথম ছড়ার বই হেঁইও। বেরিয়ে ছিল ১৯৯৫ সালে। বইটি প্রচ্ছদ করেছিলেন অভিনেত্রী বিপাশা হায়াত। এরপর আরও বই প্রকাশিত হয়। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হুইটি টুইটি, সুতরাং ভূতরাং, কান নিয়েছে চিলে, থলের বিড়াল, থাকছি ঢাকায় সবাই ফাইন চারশ বছর চারশ লাইন, আমার মানুষ গান করে, আঙুল ফুলে বটগাছ, লেবেন ডিশের লেবেনচুষ, ভ্যাবলা ছেলে ক্যাবলাকান্ত, সবুজ সবুজ মনটা অবুঝ। ছড়ার জন্য অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার পেয়েছে দুবার।


ওবায়দুল গনি চন্দনের জন্ম ৩০ আগস্ট ১৯৭০ সালে ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইলে। বাবার নাম এম ওসমান গনি। সোহ্রাওয়ার্দী কলেজ থেকে স্নাতক পাস। দৃষ্টিভঙ্গি স্বচ্ছ ছিলো বলে সত্যের মাঝে থেকেছে চন্দন। প্রতিবাদের ভাষায় যেমন সাহসিকতাপূর্ণ তেমনি অধিকার বিষয়ে শতভাগ সচেতন।


ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা যদি বলতে চাই, তাহলে বলতে হয় আমার সাহিত্য ভুবনে প্রিয়বন্ধু ওবায়দুল গনি চন্দন। নিঃশ্বাসে-বিশ্বাসে চন্দন। আমার অস্তিত্বের সঙ্গে চন্দন। আমার দীর্ঘ সাহিত্যের পথচলায় একমাত্র বিশ্বস্ত এবং সার্বক্ষণিক বন্ধু হিসেবে চন্দনকে পেয়েছিলাম। আবার চন্দনের দিক বললে বলতে হয় সেও আমাকে পেয়েছিল। চন্দনেরও অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে ছিলাম আমি। ওর পথচলায় সার্বক্ষণিক বন্ধু ছিলাম আমি।


ওর চেহারা তখনো দেখিনি। নাম দেখতাম। ছড়া পড়তাম। ছড়ার শেষে লেখা থাকত ওবায়দুল গনি চন্দন, বয়স ১২। ছোটদের পত্রিকা শিশু ও নবারুণে এভাবেই তার লেখা ছাপা হতো। সন তারিখের হিসাব রাখিনি। তবে এটুকু মনে আছে, ’৮৮ সালের কোনো একদিন শিশু একাডেমিতে পরিচয় হয় চন্দনের সঙ্গে। সেই থেকেই এক অদ্ভুত টান অনুভব করলাম। চন্দন হয়ে উঠল আমার ছড়াবন্ধু। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যে একটা গন্ধ জড়িয়ে থাকে সেই গন্ধটা এখনো টের পাই, চোখ বন্ধ করলেই এখনো স্পষ্ট দেখতে পাইÑ ওইযে চন্দন হাঁটছে, কথা বলছে, নিজেকে মাতিয়ে রাখছে, অন্যদেরকেও মাতাচ্ছে। একের পর এক দৃশ্য ভেসে উঠছে যার সবটাতেই চন্দন। ওই তো চন্দন শিশু একাডেমির চত্বরে। হাঁটছে বাংলা একাডেমির চত্বরে। কচি-কাঁচার আসরে দাদাভাইয়ের সামনে। চন্দনের তারুণ্যভরা গড়ন দেখে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই ওকে ম্যাকগাইভার বলে ডাকতেন। চন্দনের কথা লিখতে গিয়ে দাদাভাইয়ের ওই ডাকটা কানে ভেসে আসছে।


ওই যে দেখতে পাচ্ছি আমাদের ছড়ার আড্ডায় ছড়াকার বন্ধুদের সঙ্গে চন্দনের চলছে যুক্তিতর্কের তুমুল উত্তেজনা। কখনো চন্দনকে সমর্থন জানিয়ে আবার কখনো চন্দনের ভাবনার বিপরীত অবস্থানে কথা বলছে। সারওয়ার উল ইসলাম, রোমেন রায়হান, বাকীউল আলম, মনি হায়দার, রহীম শাহ আরও কত-কত মুখ।


চোখ বন্ধ করলেই চন্দনকে দেখতে পাচ্ছি। ওই তো চন্দন ইত্তেফাকের তরুণকণ্ঠের কাণ্ডারি রেজানুর রহমানের সামনে। কিংবা হলিফ্যামেলির ক্যান্টিনে ডা. সজল আশফাকের সামনে। সঙ্গে আছে ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল, ডা. আব্দুল্লাহ শাহরিয়ার টুটুল। আবার এমন দৃশ্যও ভেসে উঠছে, এই তো চন্দন আমার পাশে রিকশায় বসে আছে। গান ধরেছে উঁচু গলায়। এই তো চন্দন হাঁটছে বইমেলার ধুলোমাখা পথ ধরে। স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আমি আর চন্দন ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্তি ঝরাতে টিকেট কেটে সিনেমা হলে ঢুকে পড়েছি। তারপর কুটুর কুটুর করে এই সেই হাসির কথা বলতে বলতে সিনেমার অ-আ-ক-খ কিছুই না বুঝে হল থেকে বেরিয়ে পড়ছি। এরকম অনেক অনেক ঘটনা স্মৃতি হয়ে ঝুলে আছে আমার মগজে। ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন আর আমীরুল ইসলামের সঙ্গে আড্ডা দিতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে কতবার যে ছুটে গেছে চন্দন। শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে বিকেল-সন্ধ্যার আড্ডায় ছড়াকার আসলাম সানী, কবি দিলদার হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে মুখর করে তুলত চন্দন। চন্দন আমার সঙ্গে আমাদের সঙ্গে এভাবেই দিনযাপন করতো আনন্দের রঙ ছড়িয়ে। চন্দনকে ঘিরে দারুণ স্নেহে মায়াবী জাল বুনতে দেখেছি কবি আসাদ চৌধুরীকেও। দেখিছি সিনেম্যাগাজিন তারকালোকের সম্পাদক আরেফিন বাদলকেও। বাদল ভাইয়ের স্নেহ-মমতায় আশ্রয়ের জায়গা খুঁজে পেয়েছিলাম চন্দন ও আমি।


চোখে ভেসে উঠছে সেই দৃশ্য, বেইলি রোডে তুমুল আড্ডায় অভিনেতা মোশাররফ করিম, ফজলুল কবীর তুহিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ইউসুফ হাসান অর্ক, চিত্রশিল্পী অভিজিৎ, বন্ধু এমদাদ, আরিফ বিল্লাহ মিঠু, টিটো, জয়সহ আমরা অনেকেই হো হো করে হাসছি চন্দনের কোনো এক কথায়। মোশাররফ করিমের সঙ্গে চন্দনের মিষ্টিমধুর টক-ঝাল তর্কের কথা মনে পড়লেই সেই দৃশ্যগুলো আমার চোখ ভিজিয়ে দেয়। কী মায়াবী সেই সম্পর্ক! কী মায়াবী সেই বন্ধুত্ব! ওবায়দুল গনি চন্দন সবসময় ছিলো বন্ধুত্বের আলোয় উজ্জ্বল।


চন্দনের কর্মজীবন শুরু হয়েছিল মাসিক রম্যম্যাগাজিন ‘কার্টুন’ দিয়ে। নব্বইয়ের শুরুর দিকের কথা। আমিও ওই পত্রিকায় আছি। ছড়া আর কার্টুনের চাকরি আমাদের বন্ধনটাকে আরও পোক্ত করে তুলেছিল। কার্টুন ছেড়ে ‘কিশোর তারকালোক’। তারপর সাময়িক বেকারত্ব। তারপর বাংলাভিশন-বৈশাখি-ইন্ডিপেন্ডেন্ট ছেড়ে দৈনিক মানবকণ্ঠ। এই হলো তার কর্মজীবন। কর্মজীবনের এই স্রোতধারায় ভাসতে ভাসতে কত বন্ধু কত স্বজনকে যে খুঁজে পেয়েছিল চন্দন তার হিসাব দিতে পারব না। তবে চন্দনের বন্ধু-স্বজনের মধ্যে সবচে আলাদাভাবে যিনি নজরদারি করেছেন তিনি আনন্দআলো সম্পাদক রেজানুর রহমান। সে সময় তিনি ইত্তেফাকের তরুণকণ্ঠের দায়িত্বে ছিলেন। তারুণ্যের সুখ-দুঃখ আর সাফল্যের সাতকাহন নিয়ে প্রতি সপ্তাহে তরুণকণ্ঠের নিয়মিত লেখক ছিলাম আমি আর চন্দন। তরুণকণ্ঠের সূত্র ধরে চন্দন একটা সময় ইত্তেফাক ভবনকে করে তুললো দিন কাটানোর প্রধান জায়গা। খুঁজে পেল আরো নতুন বন্ধুদের। চন্দন কিছুকাল ইত্তেফাকের কচি-কাঁচার আসরের পাতার দায়িত্ব নিয়েছিল। উম্মাদ পত্রিকা অফিস ছিল চন্দনের জন্য সুবাসিত জায়গা। উম্মাদ পত্রিকার সম্পাদক আহসান হাবীবকে ঘিরে চন্দনের সব আনন্দ-উচ্ছ্বাস উতলে উঠত। চন্দনের বন্ধুজগতে শুধু লেখক বন্ধুরা নয়, বিশাল বৃত্ত ছড়িয়ে বাস করেছে সাংবাদিক বন্ধুরাও। দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, ইলেট্রনিক মিডিয়া, সংবাদ সংস্থাÑ সব মহলের সাংবাদিকরা ছিল চন্দনের আত্মার আত্মীয়। ইরাজ আহমেদ, আবিদা নাসরিন কলি, রবীন শামস, মুকুল শাহরিয়ার, ইকবাল করিম নিশান, সীমান্ত খোকন, শামীম শাহেদসহ এ মুহূর্তে সাংবাদিক জগতের আরো আরো নাম ভেসে আসছে শুধু চন্দনের কথা মনে করেই।


চন্দন টিভির জন্য নাটক লিখেছে। গান লিখেছে। বিটিভিতে ‘ছন্দে ছন্দে’ নামে ছড়া বিষয়ক অনুষ্ঠান করেছে। আবদুন নূর তুষারের উপস্থাপনায় বিটিভিতে প্রচার হতো ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘শুভেচ্ছা’। শুভেচ্ছার বেশ কয়েকটি পর্বে নিয়মিত ছড়া নিয়ে উপস্থিত থাকতাম আমি, চন্দন আর রোমেন রায়হান। জনপ্রিয় এই পর্বটির কথা মনে পড়লেই ওবায়দুল গনি চন্দনকে দেখতে পাই আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।


ছড়াই তার শক্তি। আর এই শক্তির জোরে সাম্প্রতিক কালের ছড়াসাহিত্যে যোগ্য হিসেবে চিহ্নিত হতে পেরেছে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ওবায়দুল গনি চন্দন বেঁচে থাকবে তারই লেখা ছড়ার আলো ছড়িয়ে। সমাজ, স্বদেশ, মানুষ আর প্রিয় দেশের সুনিপুণ চিত্র এঁকে ওবায়দুল গনি চন্দন তরুণ প্রজন্মকে স্বপ্নাবিষ্ট করে তুলেছিল সুন্দর দেশ গড়ার প্রত্যয়ে।


শুধু শিশু-কিশোরদের মনেই দোলা দেয়নি চন্দন, দোলা দিয়েছে সকল বয়সী পাঠকের মনেও। ‘চন্দনের ছন্দ নে’ নামে ছড়াসমগ্র বের করার প্রস্তুতি ছিল তার। কিন্তু ১৬ আগস্ট ২০১৪ তাকে নিয়ে গেল মৃত্যুপুরীতে। ওবায়দুল গনি চন্দনের প্রস্থান কি কারোর প্রতি অভিমান? কোনো ক্ষোভ? উত্তর কারো জানা নেই! স্বভাবগতভাবে যতই হাসিখুশি থাকতো না কেন প্রচ- দুঃখ-কষ্ট চেপে রাখতে পারতো চন্দন। কোনো এক কষ্টের পাহাড় সরাতে পারেনি বুক থেকে। তাই তো বুকে ব্যথা নিয়ে তাকে চলে যেতে হলো পৃথিবীর মায়া ছেড়ে।


যে হাত ধরে হাঁটছিলাম পাশাপাশি সেই হাত হঠাৎ ফসকে গেল। ছেড়ে দিলো আমার হাত। চন্দন, এখন তুমি কই?

 

লেখক : পরিচালক, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী