ঢাকা, শনিবার ০৬, ডিসেম্বর ২০২৫ ৮:১৩:৪৯ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

`অপারেশন সিন্দুর` কেন রাখা হলো ভারতের অভিযানের নাম?

বিবিসি অনলাইন বাংলা

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:৫৪ পিএম, ৭ মে ২০২৫ বুধবার

কর্নেল সোফিয়া কুরেশি (বাঁদিকে) ও উইং কমান্ডার ভ্যোমিকা সিং (ডানে) – ভারতের যে দু`জন সামরিক কর্মকর্তা পাকিস্তানে অভিযান নিয়ে বুধবার সকালে ব্রিফ করেছেন

কর্নেল সোফিয়া কুরেশি (বাঁদিকে) ও উইং কমান্ডার ভ্যোমিকা সিং (ডানে) – ভারতের যে দু`জন সামরিক কর্মকর্তা পাকিস্তানে অভিযান নিয়ে বুধবার সকালে ব্রিফ করেছেন

মঙ্গলবার মধ্যরাতের পর পাকিস্তান ও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে ভারতের হামলার পর দুই দেশের কর্তৃপক্ষের দিক থেকেই এই অভিযানের ব্যাপারে নানা তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। একইসঙ্গে পাকিস্তান ও ভারতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই বিষয়টি যথারীতি 'টপ ট্রেন্ডিং' হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে।

দুই দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং মূলধারার গণমাধ্যমে দুই দিকের প্রাণহানি ও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে অতিরঞ্জিত ও অপ্রমাণিত দাবিও করা হচ্ছে। আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) সাহায্যে তৈরি বহু ভুয়া ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ছে।

তবে একটি হ্যাশট্যাগ, যা নিয়ে দুই দেশেই প্রচুর মন্তব্য করা হচ্ছে, সেটি হলো 'সিন্দুর'।

ভারতীয় সেনাবাহিনী যখন জানায়, তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চালানো এই অভিযানের নাম দিয়েছে 'অপারেশন সিন্দুর', তখন থেকেই এই ট্রেন্ডের সূচনা হয়।

ভারতীয় গণমাধ্যমে এই নামকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

'সিন্দুর' হলো একটি হিন্দি শব্দ, বাংলায় যাকে বলা হয় 'সিঁদুর'। হিন্দু ধর্মাবলম্বী সধবা নারীদের কপালে এই সিঁদুর পরার চল রয়েছে।

এই বিষয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের অফিসিয়াল 'এক্স' অ্যাকাউন্ট থেকে একটি ছবি পোস্ট করা হয়েছে, যেখানে ইংরেজিতে লেখা আছে "Operation Sindoor"।

সেখানে 'O' অক্ষরের জায়গায় একটি গোল পাত্রে ভরা সিন্দুর দেখানো হয়েছে এবং অপর 'O' অক্ষরে সেই সিন্দুর গড়িয়ে পড়ছে।

ভারতে হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, সিঁদুর একজন নারীর বিবাহিত থাকার প্রতীক। স্বামীর মৃত্যুর পর সেই সিঁদুর মুছে ফেলার রীতি আছে এবং এই অবস্থাকে হিন্দিকে 'মাং সুনা' বা 'মাং উজাড়' বলা হয়।

ভারতের সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই লিখছেন, পহেলগামের হামলাকারীরা যেহেতু 'ধর্ম বেছে বেছে পুরুষদের হত্যা করে হিন্দু নারীদের বিধবা করেছে', তাই এই অভিযানের 'সিন্দুর' নামকরণই সবচেয়ে উপযুক্ত।

'অপারেশন সিন্দুর' কী?
ভারতীয় সেনাবাহিনীর তরফে কর্নেল সোফিয়া কুরেশি বুধবার সকালে 'অপারেশন সিন্দুর' নিয়ে সাংবাদিক ব্রিফিংয়ে দাবি করেন, গত ২২ এপ্রিল পহেলগামে সংঘটিত হামলার জবাব দিতেই এই 'সামরিক প্রত্যুত্তর' - যেটি বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই পরিচালিত হয়েছে।

তিনি আরও দাবি করেন, 'অপারেশন সিন্দুরে'র আওতায় নিষিদ্ধ ঘোষিত লস্কর-ই-তইয়েবা এবং তার ভাষায় অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের ঘাঁটি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোকে লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়েছে।

তবে পাকিস্তানের সামরিক ও রাজনৈতিক কর্মকর্তারা ভারতের এই দাবিকে অস্বীকার করে জানিয়েছেন, এসব হামলায় মসজিদ এবং আবাসিক এলাকায় শিশু ও নারীসহ মোট ২৬ জন সাধারণ বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ৪৬ জন আহত হয়েছেন।

কর্নেল কুরেশি জানান, "লক্ষ্যবস্তু হিসেবে এই ক্যাম্পগুলো বাছাই করা হয় বিস্তারিত গোয়েন্দা মূল্যায়নের পর এবং নিশ্চিত করা হয় যেন কেবল জঙ্গি স্থাপনাগুলোতেই হামলা করা হয়। এসব ক্যাম্প অতীতে ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনায় ব্যবহৃত হয়েছিল।"

পাকিস্তান অতীতেও এ ধরনের অভিযোগ বরাবর অস্বীকার করে এসেছে এবং বলেছে যে ভারতের হামলায় সাধারণ জনগণকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, 'অপারেশন সিন্দুর'-এর আওতায় ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী ও বিমান বাহিনী রাত ১টা ৫ মিনিটে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ৯টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে, যেগুলোকে 'সন্ত্রাসবাদীদের অবকাঠামো' বলা হয়েছে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই দাবিকে অস্বীকার করে বলেছে, এই হামলায় নিরীহ নাগরিক ও মসজিদ লক্ষ্যবস্তু ছিল।

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, এই অভিযানে কোনো পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি এবং লক্ষ্য নির্ধারণে সংযম দেখানো হয়েছে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র দাবি করেছেন, ভারতীয় হামলার জবাবে পাকিস্তান বিমান বাহিনী পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ও একটি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে।

পাকিস্তান আরও জানিয়েছে, তারা এই হামলার জবাব দেওয়ার অধিকার রাখে এবং জবাব দেবেও।